মুখ থুবড়ে কাঁদছে মধ্যবিত্ত পরিবার-সাংবাদিক মহল, দেখার নেই কেউ

দেশে মহামারি করোনা কোভিড -১৯, ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সবকিছু বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কর্মহীন এবং গৃহবন্দী হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ এবং দেশের সাংবাদিক মহল, তার উপর লকডাউন তো আছেই। এতে করে আয়ের পথ বন্ধ হয়ে গেছে , গৃহবন্দী হয়ে পরা মধ্যবিত্ত মানুষগুলো। সংবাদ সংগ্রহে জীবনের ঝুকি নিয়ে ঘুরছে এখান থেকে ওখানে। আয়ের পথ পুরোপুরি বন্ধ। কিন্তু বন্ধ হয়নি তাদের ব্যয়ের পথ। নিম্ন আয়ের মানুষগুলোর হাতে খাবার এবং প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি তুলে দিচ্ছেন সরকার এবং উচ্চবিত্ত সহ আরো বিভিন্ন সংগঠনগুলো নিন্ম আয়ের মানুষদের সহোযোগিতায় হাত বাড়িয়েছে।

তবে মধ্যবিত্ত শ্রেনীর সাংবাদিক ও আন্যান্য পরিবারগুলোর পাশে কেউ নেই। উচ্চ বিত্তদের টাকার অভাব নেই ফলে তাদের অভাবও নেই, এবং তাদের কোন প্রকার টেনশন নেই। গরীবরা পাচ্ছে সরকারী- বেসরকারী বিভিন্ন সংগঠনের বরাদ্দকৃত ত্রাণ বা উপহার সামগ্রী এবং আর্থিক অনুদান আর মধ্যবিত্তদের নেই ব্যাংক ব্যালেন্স বা জমানো অর্থ,সাহায্য-সহোযোগিতার হাত বাড়াচ্ছেনা কেউই। ঘরে খাবার না থাকলেও মধ্যবিত্তরা লজ্জায় কিছু বলতে পারছেনা, লজ্জায় মুখ থুবড়ে পরে আছে।

যারা দৈনিক আয়ের উপর নির্ভরশীল ছিলো তারা পরেছেন সবচাইতে বেশী বিপদে। এ রকমই একটি পরিবারের কর্তার সাথে কথা হলে তিনি জানান, নারায়ণগঞ্জের সমবায় মার্কেটে তার একটি কম্পিউটার দোকান রয়েছে সেখানে প্রতিদিন যা আয় হতো তা দিয়ে ঋণের কিস্তি বাড়িভাড়া দিয়ে তিন সদস্যের সংসার খুব ভালো ভাবেই চলতো। এমনকি গ্রামের বাড়ীতে ও তিনি বাবা- মা,ভাইয়ের জন্য মাসে মাসে টাকা পাঠাতে পারতেন। কিন্তু দেশের এই পরিস্থিতিতে গ্রামের বাড়ীতে টাকা পাঠানোতো দুরের কথা নিজেদেরই এখন না খেয়ে থাকার উপক্রম হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, কিছু টাকা জমানো ছিলো তাও শেষ হবার পথে অপরদিকে রমজান মাসের শুরু। অন্যসব মাসের তুলনায় রমজান মাসে সংসারের খরচটা একটু বেশী। এভাবে চলতে থাকলে করোনায় নয়, না খেয়েই মরতে হবে আমাদের। কারন লাজ- লজ্জায় আমরা কারো নিকট সাহায্য চাইতে পারছিনা আবার কেউ সাহায্যের হাত ও বাড়িয়ে দিচ্ছেনা।

সকল কিছুর পরিচয় গোপন রেখে এক সাংবাদিক জানায়,চার সদস্যের সংসার তার। প্রতি মাসে তার ২০-২৫ হাজার টাকা আয় হতো। তা দিয়ে বাড়িভাড়া, ছেলে-মেয়েদের স্কুলের খরচ, টিউশন ফিসহ সাংসারিক খরচ করে মোটামুটি বেশ ভালো ভাবেই চলছিলো তাদের সংসার। কিন্তু করোনার মহামারি তাদের পরিবারের কোনো সদস্যকে আক্রমণ না করলেও প্রভাব পরেছে তাদের সংসার জীবনে। প্রায় এক মাসের মতো তার কোনো আয় নেই আছে শুধু ব্যয়। ইতিমধ্যেই ছেলে- মেয়েদের প্রাইভেট শিক্ষকদের পড়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। খুব সমস্যার মধ্যে পড়ে গেছেন তারা। না পারছেন কারো কাছে কিছু চাইতে। লজ্জায় আত্নীয় স্বজনদের কাছেও সাহায্যের কথা বলতে পারছেন না।

অপর এক ব্যক্তি বেশ আক্ষেপ নিয়ে বলেন,বড়োলোকের টাকা আছে,গরীবরা ত্রাণ পাচ্ছে আর মধ্যবিত্তরা না খেয়ে মুখ লুকিয়ে নীরবে চোখের জল ফেলছে। মধ্যবিত্তরা যেনো এ দেশের নাগরীকদের কাতারে পরে না। মধ্যবিত্তরা যদি সরকারের হিসেবের খাতায় থাকতো তাহলে সরকারী ভাবে তালিকা তৈরী করে মধ্যবিত্তদের সহোযোগীতা করতো।তিনি কান্না কন্ঠে আরো বলেন,ভাই আমি একজন বাবা,আমি না না খেয়ে থাকতে পারবো তিন বেলার জায়গায় দু বেলা খাচ্ছি কিন্তু ছেলে মেয়েদের দিকে তাকালে বুক ফেটে চিৎকার আসে।

মধ্যবিত্তদের মধ্যে এমন অনেকে আছে যারা দিন আনে দিন খায়, অথবা যাদের নিজেদের একটা ব্যবসা আছে অথবা চাকরি করে। করোনার এই সংকটের সময়ে তাদের সকল প্রকার আয় বন্ধ। কিন্তু আয় বন্ধ হলে কি হবে, খরচ ঠিকই হচ্ছে তার গতিতে। বাজার খরচ, ওষুধের খরচ, বাসা-ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, পানির বিল, এসব মিলিয়ে প্রতিদিন খরচ তার নিজ গতিতে ঠিকই যাচ্ছে।

এই সময়ে বাংলাদেশের উচ্চবিত্তরা আল্লাহর রহমতে ভালোই আছে, কারণ তাদের কোন অভাব নেই। অন্যদিকে নিন্মবিত্তদের সাহায্য করার জন্য দেশে মানুষ এবং সংস্থারও অভাব নেই। সমস্যা হল এই মধ্যবিত্তদের নিয়ে। এদের সাহায্য করার জন্য কেউ এগিয়ে আসে না, আবার এরাও রাস্তায় দাঁড়িয়ে সাহায্য নিতে পারছেনা।

মধ্যবিত্তদের কাছে পেটের ক্ষুধার চেয়ে নিজেদের আত্মসম্মানটাই বড়। এরা না পারে ভিক্ষা করে খেতে আর না পারে অন্যের হক মেরে খেতে কিংবা কারো কাছে চেয়ে খেতে। ন্যায়-নীতি, সততা, আত্মসম্মান নিয়ে বাঁচা এই মধ্যবিত্তরা আজকে মোটেও ভালো নেই। এদের এখন মাথায় হাত। না পারছে বলতে, না পারছে সইতে। এমন অবস্থায় কি করবে, কি করা উচিত হবে ভেবে উঠতে পারছেনা এরা।

মাস শেষে এমনিতেই মধ্যবিত্তদের হাতে টাকা পয়সা থাকে না আর লক ডাউনের এই সময়ে আরো বাজে পরিস্থিতিতে আছে তারা। কিছু দিন পরই তাদের ঘরের খাবার শেষ হয়ে যাবে হয়তোবা কারোর শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু তাতে কি, তারা তো হাত পাতারও মানুষ না। আরো কিছু দিন ডাল-ভাত খেয়ে বাঁচবে তবুও কারোর কাছে হাত পাতবেনা। কিন্তু তারপর! তারপর আর কি, আল্লাহ ভালো জানেন।

এই মধ্যবিত্তরা চাইলেও ১/২ মাস উপার্জন না করে চলতে পারবেনা। আবার নিন্মবিত্ত বা গরীবদের মত অন্যের কাছে হাতও পাততে জানেনা। পারেনা লাইনে দাড়িয়ে কিছু আনতে। এই শ্রেণীটার লজ্জাবোধ সবসময়ই বেশি। নৈতিক মূলবোধ, আদর্শ কিংবা সামাজিক কারনে সবসময়ই নিজেদের গুটিয়ে রাখে এরা।

দেশের প্রধানমন্ত্রী গরীব অসহায় এবং বড়লোক সহ গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্যও প্রণোদনা ঘোষনা করেছেন। এসব উদ্যোগ অব্যশই প্রশংসনীয়। কিন্তু মধ্যবিত্তরা? এখানে ও তাদের কে করা হয়েছে বঞ্চিত।তাই এদের মুখ থুবড়ে হাহাকার আর মৃত্যু ছাড়া কোন পথ নেই!

আপনি আরও পড়তে পারেন