চুয়াডাঙ্গায় বাড়ির আঙ্গিনায় মাচা পদ্ধতিতে আঙ্গুর চাষে কলেজ শিক্ষার্থীর সফলতা। 

মামুন মোল্লা,চুয়াডাঙ্গা
বাংলাদেশের মাটিতে আঙ্গুর চাষ সত্যিই অভাবনীয় একটি বিষয়।
সবুজ পাতার নিচে থোকায় থোকায় আঙ্গুর দেখে চোখ জুড়িয়ে যাবে যে কোন মানুষের। মাচা পদ্ধতিতে আঙ্গুর চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন চুয়াডাঙ্গা সরকারী কলেজের অর্নাস চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ফাতেমা তুজ জোহরা। জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা সরকারী আদর্শ মহিলা কলেজ পাড়ার হাবিবুর রহমানের ছোট মেয়ে সে। তার নিবিড় পরিচর্যায়  বাড়ির আঙ্গিনাতে আঙ্গুর লতায় ধরতে শুরু করেছে থোকায় থোকায় আঙ্গুর। বাড়ির পরিত্যক্ত জায়গাকে কাজে লাগিয়ে আঙ্গুর চাষ করে রিতীমত তাক লাগিয়ে দিয়েছেন এলাকাবাসীকে। অল্প জায়গাতেই অধিক ফলন এবং সুমিষ্ট হওয়ায় বানিজ্যিকভাবে এই চাষ সম্প্রসারন করা গেলে কৃষকরা লাভবান হবে বলে মনে করেন কৃষিবিভাগ। প্রতিবেশীরাও হতবাক হয়েছেন একজন মেয়ে হয়েও থেমে নেই ঘরের কোনায়।
মাচা পদ্ধতিতে  তার আঙ্গুর চাষ দেখে আগ্রহী হচ্ছে তারা। ছোট বেলা থেকেই প্রকৃতির প্রতি অগাধ ভালোবাসা রয়েছে তার । বিভিন্ন ফুল ও ফলের  গাছ লাগিয়ে শোভান্নিত করেছে বাড়ির আঙ্গিনা। লেখাপড়ার পাশাপাশি তার এ উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসার দাবীদার।
এবিষয়ে তার কাছে জানতে চাইলে সে জানায় গাছ লাগানোর প্রতি অদম্য ইচ্ছা থাকায়  ২০১৭ সালে তার মেজো দুলাভাই দুটি  আঙ্গুরের চারা সরবরাহ করে দেয়। সেই চারা রোপন করে শুরু করে আঙ্গুর চাষ।  গত বছর তার গাছে প্রায় ৫ কেজি ফল আসে। এবছরও ফলন হয়েছে তার দ্বিগুন। এবং বাজারের কেনা আঙ্গুরের মতই সুমিষ্ট। সে আরো জানায় আমি বাড়ির আঙ্গিনায় আঙ্গুর গাছ লাগানোর পাশাপাশি চায়না কমলালেবু  এবং বারোমাসি থাই কাটিমন জাতের আম  সহ বিভিন্ন ফল ও ফুলের চারা রোপন করেছি। আগামী বছর ভালো ফলাফল পেতে পারি। আমি পরীক্ষামুলক এগুলো
রোপন করে ভালো ফলাফল পেয়েছি। বর্তমানে  এ বাগান আরো সম্প্রসারিত করার জন্য বাড়ির ছাদের ওপরে একটি ছাদ বাগান করার পরিকল্পনাও মাথায় আছে।
কিভাবে গাছ রোপন করলে ভালো ফলাফল এবং ফলের স্বাদ মিষ্টি হবে  তার অভিজ্ঞতার কথা জানতে চাইলে সে জানায় বর্ষার সময় গাছ লাগানো উপযুক্ত সময়। আলো বাতাস ও পর্যাপ্ত রোদের তাপ থাকে এমন জায়গাতে রোপন করলে ফলের স্বাদের মিষ্টতা পাওয়া যেতে পারে। গাছের গোড়ায় পর্যাপ্ত পরিমাণে জৈব সার দিয়ে গাছ রোপন করতে হবে। এবং নিয়মিতভাবে গাছের যত্ন নিতে হবে। গাছের ডাল দেখে মনে হবে তা শুকনো। ভুলেও এ ডালপালা ভেঙ্গে ফেলা যাবে শীতের শেষে গাছের ডালে নতুন পাতার কুশি বের হবে আর তাতেই ফুল ধরবে এবং পরিনত বয়সে তা আঙ্গুরে রুপান্তিত হবে। এসময় গাছের পাতায় মকর নাশক স্প্রে করতে হবে কারন একজাতীয় পোকা এই গাছের পাতা  ও ফল খেয়ে ফেলে। তাই প্রতিনিয়ত খেয়াল রাখতে হয়। এছাড়া আঙ্গুর পেঁকে নরম হলে তা সংরক্ষণের জন্য পলিব্যাগ বা নেট ব্যাগ ব্যবহার করা যেতে পারে।
 এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-নির্বাহী পরিচালক মোঃ আলী হাসান জানান চুয়াডাঙ্গায় এখনও পর্যন্ত কোন কৃষক বানিজ্যিকভাবে কেউ আঙ্গুর চাষ করেনি।তবে অনেকে শখের বসে বাড়ির আঙ্গিনায় ও ছাদে বা টবে আঙ্গুর চাষ করে ভালো ফলনও পেয়েছেন। তিনি বলেন আমাদের দেশে যে আঙ্গুরের জাতটি ভালো হয়ে থাকে তাতে বিঁচি থাকে। তবে মাটিভেদে এর স্বাদ কোন এলাকায় খুব মিষ্টি আবার কোন এলাকায় টক হয়ে থাকে।তবে আমাদের দেশে আঙ্গুর চাষ বানিজ্যিক ভাবে করা যাবে কিনা তা নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছে কৃষি বিজ্ঞানীরা।

আপনি আরও পড়তে পারেন