করোনা ঝুঁকি উপেক্ষা করে সাধারন ছুটিতেও কৃষকের পাশে দামুড়হুদা  উপজেলা কৃষি বিভাগ।

মামুন মোল্লা,চুয়াডাঙ্গা
সারাদেশব্যপী করোনা ভাইরাসের সামাজিক সংক্রমণ রোধে সরকার ২৫ শে মার্চ থেকে অদ্যাবধি সরকারি অফিস আদালত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করলেও দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি অফিসের কর্মকান্ড- বন্ধ হয়নি।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক প্রতি ইঞ্চি জায়গার ব্যবহার নিশ্চিত করতে, বেশি বেশি ফসল উৎপাদন করতে, বসতবাড়ি ও পতিত জায়গায় সবজি আবাদ বাড়াতে, সার ও সেচ সাশ্রয়ের জন্য অল্প খরচে উৎপাদিত আউশ ধানের আবাদ বৃদ্ধি করতে,কৃষকের পন্য বিক্রি ও পরিবহনে সহযোগিতা করতে, অত্র এলাকা থেকে কৃষি শ্রমিক হাওড়সসহ দেশের অন্যান্য জায়গায় পাঠাতে, বাজারে সার বীজ বালাইনাশকের মজুত ও সরবরাহ ঠিক রাখতে,কৃষকের কাছ থেকে সরকারি খাদ্য ক্রয়ের জন্য গম ও বোরো ধান চাষীর তালিকা প্রনয়নে, ধানের ব্লাস্টসহ অন্যান্য ফসলের বালাই দমনে কৃষকদের পাশে থেকে পরামর্শ দেয়া নিশ্চিত করতে উপজেলা কৃষি অফিসার থেকে উপসহকারী কৃষি অফিসার সহ অন্যান্য কর্মকর্তাগন নিয়মিত কর্মস্থলে অবস্থান করে এই বৈশ্বিক মহামারিতে যেন খাদ্য উৎপাদন ব্যহত না হয় সেই লক্ষ্যে নির্বিঘেœ নিরলস ভাবে সব সময় কৃষকের পাশে থেকে কাজ করে যাচ্ছে।
উপজেলা কৃষি অফিসে সরেজমিনে দেখা যায় সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে চলছে বিভিন্ন প্রকল্পের প্রদর্শনীর উপকরণ বিতরণ, আউশ উৎপাদন বৃদ্ধি করতে বিনামূল্যে উন্নত মানের ধানের বীজ ও সার বিতরণ,সরকারি ভর্তুকি মূল্যে ধান কাটার রিপার ও কম্বাইন হারভেষ্টার বিতরন, সাথে সাথে মাঠ পর্যায়ের উপ-সহকারী অফিসার গন কৃষকদের চাহিদা মাফিক পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।
কৃষি বিভাগের নিজস্ব কার্যক্রম ছাড়াও উপজেলা কৃষি অফিসার ও কৃষি সম্প্রসারন অফিসার উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক প্রদানকৃত করোনা মোকাবিলায় সরকারি দায়িত্ব হিসেবে বিভিন্ন ইউনিয়নে মনিটরিং ও ট্যাগ অফিসারের দায়িত্ব পালন করছেন।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা কৃষি অফিসার ও কৃষিবিদ মো: মনিরুজ্জামান জানান, যে কোন মহামারি ঘটার পর সবচেয়ে সংকট হয় খাদ্যের তাই যাতে করোনা পরিস্থিতির পর বাংলাদেশের মানুষের খাদ্য সংকট না হয় সেই লক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক আমরা বেশি বেশি ফসল উৎপাদন এর জন্যে কাজ করে যাচ্ছি, আমরা জানি এই ঝুঁকির মধ্যে কাজ করা বেশ কষ্টকর তবুও দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে মানুষের জন্যে কাজ করে যাচ্ছি যাতে করে দেশ এবং মানুষের জন্য খাদ্যের সংকট না হয়।
উপজেলা কৃষি অফিসার আরো জানান করোনা পরবর্তী সময়ে এই কৃষকরাই খাদ্যের যোগান দিয়ে দেবদূত হিসাবে আবির্ভূত হবে, তাই স্যালুট জানাই দামুড়হুদা  উপজেলার সকল কৃষকভাইগনকে এবং আমরা কৃষি বিভাগ সর্ব্বোচ আন্তরিকতা দিয়ে তাদের পাশে আছি এবং থাকব।
তিনি আরো দামুড়হুদা উপজেলার ব্যবসায়ীদের প্রতি অনুরোধ করে বলেন, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে যারা দেশের এই ক্রান্তি কালে ফসল ফলিয়ে মানুষকে খাবার উপহার দিয়ে প্রতিনিয়ত আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছে তাদের পন্যের নায্যমূল্য দেওয়ার জন্য এবং জনপ্রতিনিধি সহ সকল মানুষের প্রতি আহবান জানান কৃষকের পাশে দাড়ানোর জন্য, তাদেরকে ফসল ফলানোর উৎসাহ প্রদান করার জন্য, তাদের কৃষি পন্য বিক্রি ও পন্য পরিবহনেও সহযোগিতা করার জন্য।
ফসল উৎপাদন মৌসুম ভিত্তিক হয় তাই চাইলে কেউ বর্তমান পরিস্থিতিতে ঘরে বসে থাকতে পারবে না এমনটি বলেন স্থানীয় কৃষকরা।
বাঘাডাঙ্গা গ্রামের কৃষক সাইফুল ইসলাম জানান আমি সঠিক সময়ে কৃষি অফিস হতে বিনামুল্যে আউশ ধানের বীজ ও সার পেয়েছি, এতে আমি খুব খুশি এবং আমি বেশ লাভবান হবো।
উল্লেখ্য সরকার এই উৎপাদন ধারা অব্যাহত রাখতে ইতিমধ্যে ৫০০০ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ, ৯৫০০ কোটি টাকার কৃষি ভর্তুকি, ১৫০ কোটি টাকার বিনামুল্যে চারা ও বীজ বিতরনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন যার ফলে খাদ্য সংকট দূর করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টজন।
উপসহকারী কৃষি অফিসার মো: রিদাবুল আরেফিন জানান, থেমে নেই আমাদের  কৃষি সেবা । সকাল বিকাল ছুটে চলেছি মহান আল্লাহর নামে । ত্রাণ বিতরণ , কৃষকের প্রনোদনার কৃষি উপকরণ বিতরণ , কৃষি পরামর্শ প্রদান। জীবনের ঝুঁকি থাকলেও থেমে নেই দেশের কৃষি সৈনিকরা । কৃষি ও কৃষকের নিয়ে আমার কাজ। স্বাস্থ্য পরিসেবার মতই আমাদের কৃষি পরিসেবা।  স্বাস্থ্য ভালো রাখতে হলে সেবা যেমন দরকার ,  তেমনি খাদ্যের প্রয়োজন। স্বাস্থ্য বিভাগের মত কৃষি বিভাগ দেশের সেবায় নিয়োজিত।  আমরা আশা করবো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্য বিভাগের ন্যায়, কৃষি বিভাগের জনবলের ঝুঁকি ভাতার ব্যবস্হা করবেন।
তিনি আরো জানান, সবার কাছে অনুরোধ নিতান্ত দরকার ছাড়া বাইরে বের হবেন না।  একটা কথা মনে রাখবেন আপনাদের কিছু সন্তান,  ভাই,  বোন আপনাদের সেবা দেবার জন্য সকাল বিকাল ছুটে চলেছে।  ঘরে থেকে তাদের জন্য দোয়া করুন।
দেশের এই সংকটকালীন সময়ে দামুড়হুদা  উপজেলার কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের এমন কর্মতৎপরতার জন্য সুদিন ফিরবেই। করোনা পরবর্তী সময়ে কৃষিই হবে আমাদের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি। ভাল থাকুক কৃষক এবং কষি বিভাগের হাত ধরে সচল থাকুক এদেশের কৃষি উন্নয়নের চাকা।

আপনি আরও পড়তে পারেন