সাঈদীর মুক্তির দায়িত্ব নেয়া সেই রকি বড়ুয়া আটক

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে মুক্ত করতে দেশে ‘অস্থিতিশীল পরিস্থিতি’ তৈরির চেষ্টার অভিযোগে রকি বড়ুয়া নামে এক ব্যক্তিকে আহত অবস্থায় গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। একইসঙ্গে নারীসহ তার আরও ছয় সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

র‌্যাব জানিয়েছে, সাঈদীকে মুক্তির মিশন নিয়ে রকি বড়ুয়া এই যুদ্ধাপরাধীর সন্তান শামীম সাঈদীর সঙ্গে বৈঠক করে দেশকে অস্থিতিশীল করার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছিলেন। মঙ্গলবার (১২ মে) ভোরে চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশ এলাকার একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

র‌্যাবের চট্টগ্রাম জোনের প্রধান লে. কর্নেল মশিউর রহমান জুয়েল বলেন, ‘রকি বড়ুয়া মূলত একজন প্রতারক। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার তথ্য প্রচার করে তিনি প্রতারণা করেন। সম্প্রতি তিনি সাজাপ্রাপ্ত মানবতাবিরোধী অপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলের সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে দেশে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি করে সাঈদীকে মুক্ত করার পরিকল্পনা হয়েছে বলে আমাদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য আছে। এরপর আমরা রকি বড়ুয়াকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করতে থাকি।’

তিনি জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মঙ্গলবার ভোরে পাঁচলাইশে রকি বড়ুয়ার আস্তানায় অভিযান চালানো হয়। সেখানে বিদেশি মদ ও পিস্তল পাওয়া গেছে। অভিযানের সময় পালাতে গিয়ে ছাদ থেকে লাফ দেন রকি। এতে তিনি দুই পায়ে গুরুতর আঘাত পেয়েছেন। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। গ্রেপ্তার হওয়া ছয় সহযোগীর মধ্যে এক নারীও আছেন। তারা মূলত রকি বড়ুয়ার আস্তানায় থাকতেন। ওই আস্তানা থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, মদের বোতল, স্ট্যাম্প-সিল, গেরুয়া পোশাক, প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডের নানা সরঞ্জাম এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠকের ছবি জব্দ করা হয়েছে। ২৫ লাখ টাকার এফডিআর, মানুষকে প্রতারণা করার অসংখ্য দলিলও পাওয়া গেছে।

গ্রেপ্তার রকি ভান্তের বেশ ধরে গেরুয়া রঙের কাপড় পরে যে প্রতারণা করে সেই কাপড় এবং সাঈদীর মুক্তি নিয়ে বৈঠকের ছবি, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টসও উদ্ধার করা হয়। আমরা এসব বিষয়ে আরো কাজ করছি। রকি বড়ুয়ার বিরুদ্ধে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে এবং অস্ত্র ও মাদক আইনে পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন র‌্যাব-৭ এর প্রধান লে. কর্নেল মশিউর রহমান জুয়েল।

সম্প্রতি জামায়াত নেতা দেলওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলে পিরোজপুর মঠবাড়িয়া উপজেলা চেয়ারম্যান শামীম সাঈদী এবং আলোচিত ধর্মীয় বক্তা তারেক মনোয়ারকে নিয়ে বৈঠক করে তার গ্রামের বাড়িতে। সাঈদীকে মুক্ত করার জন্য ভারত সরকারের সাথে লবিং করার পাশাপাশি দেশে অস্থিতিশীল সৃষ্টির জন্য ওই বৈঠকে পরিকল্পনা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এমনকি বৈঠকের পর পরই লোহাগাড়া এলাকায় একটি বৌদ্ধ মন্দির ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে।

অঘোষিত লকডাউনের মাঝে জামায়াত নেতার ছেলের চট্টগ্রাম আসা এবং বৈঠকের আয়োজন নিয়ে স্থানীয়ভাবে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। এমনকি রকি বড়ুয়া নিজেও দাবি করে ভারতের লবিং ঠিক করার জন্যই শামীম সাঈদী ও তারেক মনোয়ার তার সাথে বৈঠক করেছে। এরপর থেকে রকি বড়ুয়ার সন্ধানে নামে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী।

আপনি আরও পড়তে পারেন