যশোরে সন্তান জন্ম দিলেন করোনা রোগী

যশোরের চৌগাছার করোনা আক্রান্ত এক মা কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। তিনি দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রথম নারী, যিনি করোনা শনাক্ত অবস্থায় সন্তান জন্ম দিলেন।

করোনা আক্রান্ত ওই নারীর সিজারের নির্ধারিত দিন ছিল গত ৯ মে। কিন্তু অনেক ‘নাটকীয়তা’ শেষে বুধবার (১৩ মে) দুপুরে সিজার করা হয় যশোরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে।

গত ২৫ এপ্রিল থেকে ৯ মে ওই নারী (২৮) শরীর থেকে চার বার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে। তার প্রথম রিপোর্ট পজিটিভ এসেছিল। এর পরের দুইবার নেগেটিভ রেজাল্ট এলেও শেষবার আবার পজিটিভ ফল আসে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, যশোর শহরের শহিদ মসিয়ূর রহমান সড়কে জেনেসিস প্রাইভেট হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে ওই নারী নিজের দ্বিতীয় কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। ডা. নিলুফার ইয়াসমিন এমিলি সিজারিয়ান অপারেশনে নেতৃত্ব দেন।

ডা. এমিলি মোবাইল ফোনে অনুভূতি জানিয়ে বলেন, আমরা তো সবসময়ই সিজার করি। কিন্তু প্রসূতি করোনা পজিটিভ হওয়ায় একটু ভয় লেগেছে। একটু টেনশন নিয়ে কাজ করতে হয়েছে। রিস্ক ছিল। সতর্ক থাকতে হয়েছে। প্রস্তুতি নিতে হয়েছে। তবুও করতে তো হবেই। এটাতো আমার দায়িত্ব ও কর্তব্য। সব প্রস্তুতি ও প্রটেকশন নিয়েই সিজার করেছি। কোনো সমস্যা হয়নি। মা ও বাচ্চা দুজনেই সুস্থ আছে।

করোনা আক্রান্ত ওই নারী গত ২৫ এপ্রিল করোনা শনাক্তের পর নিজ বাড়িতেই তাকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছিল। গত ৯ মে বিকেলে ওই নারীকে করোনামুক্তির ছাড়পত্র ও ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়ে ‘করোনামুক্ত’ ঘোষণা করেছিলেন যশোরের সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহিন। সেদিনই ডেলিভারি ডেট থাকায় সন্ধ্যায় ওই নারীকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে দেন চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. লুৎফুন্নাহার লাকি। এরপর হাসপাতালের চিকিৎসকরা আবারো তার করোনা উপসর্গ আছে বলে সন্দেহ পোষণ করেন। গত সোমবার তার শরীরের নমুনা নিয়ে পরীক্ষার জন্য যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনোম সেন্টারে পাঠানো হয়। পরীক্ষায় আবারো তার করোনা পজিটিভ আসে। এরপর যশোর জেনারেল হাসপাতালের কোভিড-১৯ মোকাবেলায় গঠিত বিশেষ প্রসূতি টিমের তত্ত্বাবধানে বিশেষ ব্যবস্থায় সিজারিয়ান অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আজ বুধবার দুপুরে শহরের জেনেসিস প্রাইভেট হাসপাতালে তার সিজার সম্পন্ন হয়।

এর আগে গত ২২ এপ্রিল ২৮ বছর বয়সী ওই নারী চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রসূতি বিভাগে ভর্তি হন। তার করোনা উপসর্গ থাকায় ২৩ এপ্রিল নমুনা সংগ্রহ করে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনোম সেন্টারে পাঠানো হয় পরীক্ষার জন্য। নমুনা নেয়ার পরই তিনি হাসপাতাল ছেড়ে পালিয়ে যান। পরে ২৪ এপ্রিলের পরীক্ষায় তার ফল পজিটিভ আসে। ২৫ এপ্রিল সকালে রিপোর্ট এসে পৌঁছালে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার নেতৃত্বে ওই নারীর বাড়ি গিয়ে তাকে পাওয়া যায়। সেখানে তার স্বামী ও আট বছর বয়সী মেয়ের নমুনা নেয়া হয় এবং ওই বাড়িটি লকডাউন করা হয়। পরীক্ষায় তার স্বামী ও সন্তানের নমুনা নেগেটিভ ফল দেয়। ২৮ এপ্রিল ওই নারীর সংস্পর্শে আসা চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তিন নার্সের নমুনা যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনোম সেন্টারে করা পরীক্ষায় পজিটিভ হয়। জান্নাতির ডেলিভারি ডেট ৯ মে হওয়ায় ৪ মে ফের তার নমুনা নিয়ে যবিপ্রবি পরীক্ষাগারে পাঠান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এইদিনের পরীক্ষায় নেগেটিভ রিপোর্ট আসে। ৫ মে আবার তার নমুনা নিয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ ল্যাবে পাঠানো হয়। সেখান থেকে ৮ মে পাঠানো পরীক্ষায় রিপোর্ট নেগেটিভ হয়। এরপর ৯ মে তাকে করোনামুক্তির ছাড়পত্র দেয়া হয়।

চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. লুৎফুন্নাহার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, পরপর দুবার তার করোনা পরীক্ষা নেগেটিভ আসায় তাকে করোনামুক্তির ছাড়পত্র দিয়ে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। পরে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তির পর পরীক্ষায় আবারো করোনা পজিটিভ হন তিনি। পজিটিভ অবস্থায়ই বুধবার তার সিজারিয়ান অপারেশন সম্পন্ন হয়।

ডা. লুৎফুন্নাহার বলেন, ‘প্রসূতি ও বাচ্চা উভয়েই সুস্থ আছে।’

ওই নারীর স্বামী জানান, আমি সিজার অপারেশন করা ডাক্তারসহ সকল ডাক্তারদের কাছে কৃতজ্ঞ। বিশেষ করে চৌগাছা হাসপাতালের বড় ম্যাডাম (স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. লুৎফুন্নাহার) সব সময় আমাদের খোঁজ নিয়েছেন। সাহস দিয়েছেন। এমনকি ওষুধের ব্যবস্থাও করে দিয়েছেন।

যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার দিলীপ কুমার রায় বলেন, যশোরে বেসরকারি হাসপাতাল কুইন্স, জেনেসিস ও ইবনে সিনাকে করোনা মোকাবেলায় সরকারিভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে। ওই নারীর সিজার হওয়ার কথা ছিল ইবনে সিনা হসপিটালে। কিছু জটিলতার কারণে সেখানে তা সম্ভব হয়নি। এ ব্যাপারে লিখিতভাবে জেলা প্রশাসককে জানিয়েছে ইবনে সিনা কর্তৃপক্ষ।

এক প্রশ্নের জবাবে সুপার বলেন, ওই নারীর যে টিম সিজার করেছে, সেই টিমের প্রত্যেককে ১৪ দিনের জন্য হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে। যদি এর মধ্যে অন্য কোন প্রসূতির সিজার করা লাগে, তাহলে এই ডাক্তার তার টিম নিয়ে সিজার করবেন।

আপনি আরও পড়তে পারেন