রিজেন্টকে কোটি টাকা আবদারের সুযোগ দেয় মন্ত্রণালয়

প্রতারণা আর নানা অনিয়মের অভিযোগে বিতর্কিত রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি সংশোধনেরও উদ্যোগ নিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদফতর। প্রাথমিকভাবে তাতে সায় ছিল মন্ত্রণালয়েরও। আর এটিই রিজেন্ট হাসপাতালকে সুযোগ করে দিয়েছিল প্রতি মাসে প্রায় দুই কোটি টাকা আবদার করার। যদিও স্বাস্থ্য অধিদফতরের হাসপাতাল শাখার পরিচালকের দাবি, শেষ পর্যন্ত এ টাকা আর দেয়া হয়নি শাহেদের রিজেন্ট হাসপাতালকে।

৬ হাজারের বেশি ভুয়া কোভিড রিপোর্ট, অনুমোদনহীন কিট রাখাসহ প্রতারণা-জালিয়াতির নানা অভিযোগে সিলগালা করা হয় রিজেন্ট হাসপাতাল। ৬ বছর ধরে নবায়ন হয়নি হাসপাতালের অনুমোদন, কোভিড সেবার বিল নিয়েও রয়েছে বিস্তর অভিযোগ।

আর এমন একটি হাসপাতালকেই সরকারি অর্থ সহায়তা চাওয়ার পটভূমি তৈরি করে দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদফতর ও মন্ত্রণালয়। গত ২১ মার্চ স্বাস্থ্যমন্ত্রী আর সরকারের তিন সচিবের উপস্থিতিতে রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি সই করেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক। তবে এরপর দেড় মাসের মাথায় রিজেন্ট হাসপাতালের অনুকূলে সে চুক্তি সংশোধনে সায় দেয় অধিদফতর।

৯ মে অধিদফতরের হাসপাতাল শাখার পরিচালক আমিনুল হাসানের সই করা চিঠিতে রিজেন্ট হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীদের খাবার খরচ বরাদ্দসহ সমঝোতা চুক্তি সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়, যাতে উল্লেখ করা হয় মহাপরিচালকের অনুমোদন থাকার কথা।

আর সে চিঠি পাঠানো হয় স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব বরাবর। এর তিন সপ্তাহের মাথায় ৩০ মে মন্ত্রণালয়ের হাসপাতাল শাখার তৎকালীন অতিরিক্ত সচিব সিরাজুল ইসলামের সই করা চিঠিতে অধিদফতরকে রিজেন্টের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি সংশোধনের প্রস্তাব দিতে বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন অতিরিক্ত সচিব (হাসপাতাল) সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমরা তাদের সংশোধন করতে বলি। এটা ডিজি অফিস থেকে প্রস্তাব আসছে। চিঠিতেই সেটা বলা আছে। এমইউটা রিভাইস করে, যাচাই বাছাই করে, খসড়া সুস্পষ্ট মতামতসহ পাঠাতে বলছি। তাছাড়া এমইউ সম্পর্কে নিশ্চিত কিছু জানা ছিল না তখনই। যেহেতু তারা প্রস্তাব করছে, এজন্য তাদেরকেই বলছি যে কী করতে হবে সেটা ভালো করে যাচাই-বাছাই করে সুস্পষ্ট মতামতসহ প্রেরণ করুন।

অধিদফতর আর মন্ত্রণালয়ের এ চিঠি চালাচালি শাহেদকে সুযোগ করে দেয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের কাছে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করার। দুই চিঠির কথা উল্লেখ করে ১ জুন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের কাছে পাঠানো চিঠিতে প্রতি মাসে প্রায় দুই কোটি টাকা বরাদ্দের দাবি জানায় রিজেন্ট হাসপাতাল, যার মধ্যে ছিল স্বাস্থ্যকর্মীদের বেতন, খাবার খরচ, অক্সিজেন বিল, ভবন ভাড়া, ইউটিলিটি বিল থেকে শুরু করে স্টেশনারিসহ ১১ ধরনের খরচ।

তবে অনেক চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদকে ক্যামেরার সামনে কিছু বলাতে রাজি করানো। পরে অধিদফতরের হাসপাতাল শাখার পরিচালকের মুখোমুখি সময় সংবাদ। কিন্তু তিনিও ক্যামেরার কথা বলতে নারাজ।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক সমূহ) ডা. মো. আমিনুল হাসান বলেন, গোপনে কথা বলে আমাদের ওরা চিঠি দিয়েছিল, তাই আমরা মন্ত্রণালয়কে চিঠি রেফার করেছিলাম।

হাসপাতাল পরিচালকের দাবি অবশ্য শেষ পর্যন্ত রিজেন্ট হাসপাতালকে দেয়া হয়নি কোনো অর্থ সহায়তা।

আপনি আরও পড়তে পারেন