ক্রসফায়ার ছিলো ওসি প্রদীপের নেশা, বদির সাথে ছিলো সখ্যতা

অভিযোগের শেষ নেই সদ্য প্রত্যাহার হওয়া কক্সবাজারের টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশের বিরুদ্ধে। যেন প্রদীপের নিচেই অন্ধকার। দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার অপব্যবহার করে দফায় দফায় পার পেয়ে গেলেও এবার আর শেষরক্ষা হয়নি। ওসি প্রদীপের অপকর্ম নিয়ে টেকনাফবাসী এতোদিন মুখ না খুললেও, এখন একের পর এক তার অপকর্ম বেরিয়ে আসছে। ঈদের আগের দিন মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানকে হত্যার পর একের পর এক বের হতে থাকে তার কথিত ক্রসফায়ারের নেপথ্যের গল্প। ক্রসফায়ার ছিলো ওসি প্রদীপের নেশা। তিনি মূলত ইয়াবা ব্যবসায়ীদের স্বার্থরক্ষার জন্য এসব ক্রসফায়ার দিতেন। ইয়াবা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ছিল তার ঘনিষ্ঠতা। ইয়াবা ব্যবসায়ী সাবেক এমপি আব্দুর রহমান বদির সঙ্গেও ছিল তার দারুণ সখ্য। বদির সঙ্গে অন্তরঙ্গ মুহূর্তের বিভিন্ন ছবি ঘুরছে সামাজিক মাধ্যমে।

আলোচিত টেকনাফ থানায় গত ২২ মাসে ওই থানা পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছে ১৭৪ জন। পুরো সময়টাতেই টেকনাফ থানার অফিসার্স ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন প্রদীপ কুমার দাশ। ক্রসফায়ারের বেশির ভাগই ঘটেছে মেরিন ড্রাইভ এলাকায়। স্থানীয়দের কাছে জায়গাটি ‘ডেথজোন’ হিসেবে পরিচিত। অভিযোগ উঠেছে, ওসি প্রদীপের নির্দেশে কথিত ‘ক্রসফায়ারে’ হত্যা করা হয়েছে তাদের। এরমধ্যে একই বাড়ির ৪ জন, একই পরিবারের ২ জনও আছেন। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, চাহিদা মতো টাকা না পেলে ক্রসফায়ার দেয়ার নির্দেশ দিতেন ওসি। এমনকি নিজেও সরাসরি অংশ নিতেন কথিত বন্দুকযুদ্ধের প্রক্রিয়ায়। আর এসব ক্রসফায়ারে নিহতদের ইয়াবা ব্যবসায়ী হিসেবে প্রচার করে প্রদীপ নিজে কৃতিত্ব নিতেন।

অভিযোগ রয়েছে, ইয়াবা কারবারিদের মধ্যে নিয়মিত মাসোহারা না দিলেই চলতো ক্রসফায়ার। যখন তখন সাজানো হতো ক্রসফায়ারের গল্প। এলাকাবাসী জানান, টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলীর নেতৃত্বে এলাকাটি ‘ক্রসফায়ার জোন’ হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে।

এলাকাবাসীর ভাষ্যমতে, ওসি প্রকাশ্যে মাদক কারবারিদের নির্মূল করার ঘোষণা দিলেও তার এই মিশনে শীর্ষ কারবারি হাজী সাইফুল ছাড়া উল্লেখযোগ্য কেউ মুখোমুখি হয়নি। বন্দুকযুদ্ধের নামে নিহতদের বেশির ভাগই ইয়াবার খুচরা বিক্রেতা। স্থানীয় ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, আত্মসমর্পণের নামে শীর্ষ কারবারিদের রেহাইয়ের সুযোগ দিয়ে এবং চুনোপুঁটিদের দমন করে চলছে ক্রসফায়ার বাণিজ্য। পুলিশ ও মানবাধিকার সংস্থার তথ্য মতে, ২০১৮ সালের মে মাস থেকে গত ৩০শে জুলাই পর্যন্ত শুধু কক্সবাজারে পুলিশ, বিজিবি ও র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ২৮৭ জন নিহত হয়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় ১৭৪ জন, বিজিবি’র সঙ্গে ৬২ জন এবং র‌্যাবের সঙ্গে ৫১ জন। শুধু টেকনাফেই পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে ১৬১ জন। কিন্তু ইয়াবা চোরাচালান থেমে নেই। শুধু তাই নয়, এসব ক্রসফায়ার দিয়ে একাধিকবার অর্জন করেছেন পুলিশ প্রশাসনের সর্বোচ্চ পদক। কথিত এই ক্রসফায়ারের জন্য ২০১৯ সালে পুলিশের সর্বোচ্চ পদক ‘বাংলাদেশ পুলিশ পদক’ বা বিপিএম পেয়েছিলেন প্রদীপ। পদক পাওয়ার জন্য তিনি পুলিশ সদর দপ্তরে ছয়টি কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের কথা উল্লেখ করেন। সবক’টিতেই ক্রসফায়ারের ঘটনা ছিল।

আপনি আরও পড়তে পারেন