করোনায় বরফের রাজ্য ‘অ্যান্টার্কটিকা’ ভ্রমণ

অ্যান্টার্কটিকা, পৃথিবীর সর্ব দক্ষিণে অবস্থিত পঞ্চম বৃহত্তম মহাদেশ। পৃথিবীর সবশেষ আবিষ্কৃত অঞ্চলও বলা হয় বরফের এই ভূখণ্ডকে। পুরো মহাদেশটিই দক্ষিণ সাগর বা অ্যান্টার্কটিক সাগর আর বরফে বেষ্টিত।

পৃথিবীর উত্তরে বরফ আচ্ছ্বাদিত আর্কটিক অঞ্চলের ঠিক উল্টোদিকে এ মহাদেশের অবস্থান। এ বরফ রাজ্যের দুই ঋতু শীত ও গ্রীষ্ম। এখানেই রয়েছে পৃথিবীর প্রায় ৯০ শতাংশ বরফ। পৃথিবীর ৮০ শতাংশ বিশুদ্ধ পানিও রয়েছে অ্যান্টার্কটিকাতেই।

এ মহাদেশের আয়তন ১ কোটি ৪০ লাখ বর্গকিলোমিটার। বৈরী আবহাওয়ার কারণে এ মহাদেশে কোনো মানুষের বসবাস নেই। তবে গবেষণা আর ভ্রমণের জন্য অনেক দেশ থেকে অনেকেই গ্রীষ্মকালে অ্যান্টার্কটিকায় যান। এ মহাদেশে তিমি, পেঙ্গুইন আর সিলের আবাস।

এবার মহামারির মধ্যেই অ্যান্টার্কটিকা ভ্রমণের সুযোগ পেয়েছেন অস্ট্রেলিয়ান পর্যটকরা। আগামী নভেম্বর থেকে বিমানে অ্যান্টার্কটিকায় ভ্রমণে যেতে পারবেন অস্ট্রেলিয়রা। অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় এ ভ্রমণে লাগবে না পাসপোর্ট। ফ্লাইটগুলো ট্যুর কোম্পানি অ্যান্টার্কটিকা ফ্লাইটস আর অস্ট্রেলিয়ার কান্তাস এয়ারলাইন্সের যৌথ উদ্যোগে ‘অফার’ করা হচ্ছে। বরফের রাজ্যটিতে ভ্রমণে সময় লাগে ১২ থেকে ১৩ ঘণ্টা।

অ্যান্টার্কটিকা ট্যুরের জন্য আগে ব্যবহার করা হতো বোয়িং সেভেন ফোর সেভেন মডেলের বিমান আর এখন করা হবে বোয়িংয়ের সেভেন এইট সেভেন নাইন ড্রিমলাইনার মডেলের বিমান।

গ্রীষ্মকালে দিনের বেলা বরফের রাজ্যের দক্ষিণ মেরুতে সিডনি, মেলবর্ন, ব্রিসবেন ও পার্থের পর্যটকরা অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশের ওপর ৪ ঘণ্টা অবস্থান করতে পারবেন ভ্রমণ পিপাসুরা। দক্ষিণের চুম্বকীয় মেরু যখন পর্যটকরা পার করবেন, তখন মহাদেশের পর্বতগুলোকে দেখতে পাবেন তারা। অ্যান্টার্কটিকা ফ্লাইটসের প্রধান নির্বাহী জানান, এ মহাদেশ ভ্রমণে পাসপোর্ট কিংবা লাগেজ বহনের কোন প্রয়োজন নেই। অ্যান্টার্কটিকা ভ্রমণ সারাজীবনের অর্জন এভাবেও ব্র্যান্ডিং করা হচ্ছে।

ইকোনমি ক্লাসের টিকিটের দাম পড়বে ৮শ’ ৬০ ডলার। বিজনেস ক্লাসের টিকিটের দাম পড়বে ৪ হাজার ৬শ’ ৫০ ডলার। যাত্রীরা বিমানে থাকা অবস্থায় স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে যাত্রীদের স্বাস্থ্য আর নিরাপত্তা বিষয়ে বিস্তারিত তথ্যের একটি ফর্ম পূরণ করতে হবে। পাশাপাশি তাদের তাপমাত্রাও পরীক্ষা করা হবে বিমানে ওঠার আগে। কান্তাস এয়ারলাইন্সের পক্ষ থেকে প্রত্যেক যাত্রীকে দেয়া হবে মাস্ক, স্যানিটাইজার ও জীবাণুনাশক টিস্যু সংবলিত একটি বক্স। সামাজিক দূরত্ব রক্ষার্থে ইকোনমি ক্লাসের বিমানের কয়েকটি সিট ফাঁকাও রাখবে অ্যান্টার্কটিকা ফ্লাইটস।

নাসাসহ অনেক প্রতিষ্ঠান প্রতিনিয়ত গবেষণা করে চলেছে অ্যান্টার্কটিকার পরিবর্তন নিয়ে। বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে দ্রুত গলছে অ্যান্টার্কটিকার বরফ খণ্ড। পৃথিবীর সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতাকে যা অনেক বেশি বাড়িয়ে দেবে। ২০২০ সালেই সর্বোচ্চ ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয় এ মহাদেশের তাপমাত্রা। যদি অ্যান্টার্কটিকার সব বরফ গলে যায়, সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা ২শ’ মিটার বেড়ে যাবে। সমুদ্রের নিচে তলিয়ে যাবে অনেক দেশ।

আপনি আরও পড়তে পারেন