ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা-অসুবিধা

বর্তমান সময়ে অনলাইনে কেনাকাটা জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। নগদ অর্থ বহনের ঝুঁকি আর ঝামেলা এড়াতে ব্যবহৃত হচ্ছে অনলাইন মানি ও প্লাস্টিক মানি। অনলাইনে লেনদেনের ক্ষেত্রে ক্রেডিট কার্ড দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এর কারণ হিসেবে দেখা যায় ক্রেডিট কার্ডের ‘ধার’ নেয়ার পদ্ধতির জন্য। রয়েছে পণ্যের দাম কিস্তিতে পরিশোধের পদ্ধতি। যেটি গ্রাহককে এককালীন বেশি দামের পণ্য কিনতে সহায়তা করে। যেনে নেয়া যাক এর সুবিধা অসুবিধাগুলো।

ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে কিস্তিতে পণ্য কিনতে এক সাথে সব টাকা পরিশোধ করতে হবে না। বিনা সুদে বা নির্দিষ্ট পরিমাণ সুদে আপনি কয়েকমাসে ভেঙ্গে ভেঙ্গে টাকা পরিশোধ করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে আপনার ক্রেডিট লিমিটের চেয়ে বেশি দামি পণ্য কিনতে পারবেন না। আর কিস্তির টাকাও পরিশোধ করতে হবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে। এতে করে কারো কাছে টাকা ধার করার ঝামেলা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তবে পরিশোধের ক্ষেত্রে সময়সীমা পার হয়ে গেলে জরিমানা গুনতে হতে পারে।

ডেবিট কার্ড ও চেক ব্যবহারের চেয়ে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার বেশি নিরাপদ। আপনার কার্ড জালিয়াতি হলে কিংবা চুরি হলে অর্থ ফেরত পাবেন। ধরুন, আপনার কার্ডটি চুরি হয়ে গেল। কেউ টাকা তুলে নিল। এসব ক্ষেত্রে অভিযোগ করলে কার্ড প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান পুরো অর্থ ফেরত দিতে বাধ্য থাকবে। যথাযথ প্রমাণ দিয়ে দ্রুত অর্থ ফেরত পাওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে একটি ছোট সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কার্ডের পিন নম্বরটি মনে রাখতে হবে। নিরাপত্তার স্বার্থে নম্বরটি লিখে নিজের কাছেও কখনো রাখা যাবে না।

বিভিন্ন সময়ে ক্রেডিট কার্ডে বিভিন্ন অফার দেওয়া হয়। যেমন: ‘ক্যাশ ব্যাক অফার’, ‘স্পেশাল ডিসকাউন্ট’। দেশের বাইরে বেড়াতে গেলে, হোটেলে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহারে অনেক সময়ই মূল্যছাড় দেওয়া হয়। প্লেনের টিকিট কাটতেও অনেক সময় পাওয়া যায় বিশেষ মূল্যছাড়। আর অনলাইন কেনাকাটার জন্যও এখন ক্রেডিট কার্ড বেশ জনপ্রিয়।

এসব ক্ষেত্রে সঠিক কার্ডটি বেছে নিতে পারা জরুরি। একটি ভুল কার্ড দিনের পর দিন ব্যবহার করলে ঋণের বোঝা কেবল বাড়তেই থাকবে। তবে এটা বুঝতে ব্যাংকের পুরো শর্তাবলি মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে। যদিও কার্ডের ধরন পরিবর্তন করা যায় খুব সহজে। কারণ প্রতিটি ব্যাংকে বিভিন্ন প্রকারের ক্রেডিট থাকে। আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী কার্ড যেমন নিতে পারবেন তেমনি পরবর্তীতে সেটির ধরণ পরিবর্তনও করতে পারবেন। আবার নির্দিষ্ট পরিমাণ লেনদেন করলে বাৎসরিক ফি এড়ানো যায়। যেমন কয়েকটি ব্যাংকের কার্ডের মাধ্যমে অন্তত ৪৮ বার কেনাকাটা করলে বাৎসরিক ফি দিতে হয় না। ব্যাংক ভেদে এই নিয়মের ভিন্নতা রয়েছে।

ক্রেডিট কার্ড ইন্টারন্যাশনাল হলে সেটি ব্যবহার করা যাবে বিশ্বের অনেক দেশেই। টাকার পাশাপাশি ডলারও ধার করে ব্যবহার করা যায়। হোটেল বুকিং, বিমানভাড়া, রেস্টুরেন্ট ও কেনাকাটায় মেলে নানা ছাড় ও পয়েন্ট জেতার সুযোগ। বিদেশে আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে যা খরচ করবেন, মাস শেষে আপনার সেই পরিমাণ  বিল হিসেবে ইস্যু করবে ব্যাংক। তারপর সুদ বা জরিমানা এড়াতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সেই বিল পরিশোধ করতে হবে।

ক্রেডিট কার্ড সাধারণত অনলাইন ও অফলাইন দুভাবেই কাজ করে। তবে আপনি যদি আপনার ক্রেডিট লিমিটটি বাংলাদেশের বাইরে গিয়ে ব্যবহার করতে চান, অর্থাৎ আন্তর্জাতিক লেনদেন করতে চান, তখন আপনার অবশ্যই একটি আন্তর্জাতিক পাসপোর্টের দরকার হবে। পাসপোর্ট না থাকলে বাংলাদেশের বাইরে কোনো রকম লেনদেন করতে পারবেন না ক্রেডিট কার্ডের সাহায্যে। কিছু নিয়ম মেনে আপনার ক্রেডিট কার্ডটি আন্তর্জাতিক লেনদেনের জন্য উপযুক্ত হিসেবে বিবেচিত হবে। আপনার ক্রেডিট লিমিটের নির্দিষ্ট একটি অংশ বৈদেশিক মুদ্রায় কনভার্ট করে নিতে পারবেন, যাতে আপনি বাংলাদেশের বাইরে গেলে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবহার করতে পারেন। তা ছাড়া অনলাইনেও বিদেশ থেকে পণ্য কিনতে পারবেন।

বিভিন্ন সময়ে দেখা যায় নামি-দামি হোটেল এবং রেস্তোরাঁয় খাওয়া-দাওয়ায় ছাড় ও অফার দিয়ে থাকে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। আবাসিক হোটেলগুলোও ক্রেডিট কার্ডে বিভিন্ন সুবিধা দিয়ে থাকে। একটি কিনলে একটি ফ্রি (বাই ওয়ান গেট ওয়ান) অফারও দেয়া হয়। এ ছাড়া রয়েছে মূল্যছাড়সহ নানা অফার। অনেকেই পরিবার নিয়ে দেশে ও দেশের বাইরে ঘুরতে যান। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও হোটেলের নিজস্ব ওয়েবসাইটের মাধ্যমে হোটেল বুক করা যায়। এ ক্ষেত্রেও আপনি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করতে পারেন। তবে বিদেশে হোটেল বুকিংয়ের টাকা পরিশোধের ক্ষেত্রে ডুয়েল কারেন্সি ক্রেডিট কার্ড প্রয়োজন হবে। হোটেল বুকিংয়ের ক্ষেত্রে অনেক ওয়েবসাইট আছে, যারা অনেকটা এজেন্সি হিসেবে কাজ করে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এক্সপিডিয়া, বুকিং ডটকম, অ্যাগোডা কিংবা বাংলাদেশে আমার রুম, ভ্রমণ, ঘুরব ডটকম উল্লেখ যোগ্য।

ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা যেমন রয়েছে তেমনি অসুবিধাও কম নয়। এ জন্য বেশ সতর্ক হতে হবে গ্রাহককে। একটু বেখায়ালি হলেই পড়তে হতে পারে ঋণের ফাঁদে। বর্তমান সময়ে ক্রেডিট কার্ডের এই ঋণের ফাঁদ নিয়ে বেশি বিতর্ক হচ্ছে। আপনি এখন খরচ করছেন মানে ৪৫ দিনের মধ্যে সেটি পরিশোধ করতেই হবে। অন্যথায় ঋণের উপর সুদ শুরু হবে। যা ঋণের পরিমাণ প্রতিদিন বাড়িয়ে দেবে। মাস শেষে দেখা যায় ঋণ বেড়েছে বহুগুণ। তাই একটা ঝুঁকি থেকেই যায়।

সুদের হার পরিশোধই ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের একমাত্র ব্যয় নয়। সময়মতো ধার করা টাকার মাসিক কিস্তি পরিশোধ না করলে আপনাকে জরিমানা গুনতে হতে পারে। ক্রেডিটে যে ব্যবহারের সীমা থাকে, সেটা অতিক্রম করলেও একটা নির্দিষ্ট অর্থ পরিশোধ করতে হয়।

সরাসরি বুথ থেকে ক্রেডিট কার্ড দিয়ে নগদ অর্থ উত্তোলন করতে গেলে বাড়তি ফি এবং ওই দিন থেকেই (এ ক্ষেত্রে ৪৫ দিন সময় দেয়া হয় না) সুদ গণনা শুরু হয়। এ ক্ষেত্রে চেক দিয়ে টাকা সঞ্চয় হিসেবে স্থানান্তর করে তারপর সেটি নগদায়ন করলে ৪৫ দিন সময় পাওয়া যাবে।

আপনি আরও পড়তে পারেন