মা-মেয়েকে নির্যাতন: তদন্তে গাফিলতি হলে হস্তক্ষেপ করবেন হাইকোর্ট

কক্সবাজারে গরু চুরির অভিযোগে মা- মেয়েসহ একই পরিবারের ৫ জনকে রশি দিয়ে বেঁধে নির্যাতন তদন্তে গাফিলতি হলে হস্তক্ষেপ করবে হাইকোর্ট।

সোমবার (২৪ আগস্ট) এ আদেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।

এর আগে কক্সবাজারে চার সন্তানসহ মাকে বেঁধে ৭ কিলোমিটার সড়ক ঘোরানোর পর উল্টো গরু চুরির মামলা দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। ওই মামলায় কারাগারে পাঠানো হয়েছে পাঁচ জনকেই। তবে নির্যাতনের ঘটনায় কাউকেই আটক করতে পারেনি পুলিশ।

এদিকে, রশি বেঁধে সড়কে ঘোরানোর ছবি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর ঘটনা তদন্তে ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে চকরিয়া উপজেলা প্রশাসন।

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার হারবাংয়ে গরু চুরি করে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় আটকের পর তিন নারীসহ পাঁচ জনকে পিটিয়ে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। তবে এ সময় মা ও মেয়েকে কোমরে রশি বেঁধে মারধর এবং প্রকাশ্যে ঘোরানোর একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয় শনিবার রাত থেকে।

এ ঘটনায় গরুর মালিক ইউনিয়নের বৃন্দানবনখিলের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মাহবুবুল হক বাদী হয়ে থানায় মামলা করলে পুলিশ ওই ৫ জনকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করে। এ সময় আদালত তাদেরকে জেলহাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন: কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার বারবাকিয়া ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের দেলোয়ার হোসেনের ছেলে মোহাম্মদ ছুট্টু (২৭), চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার কুসুমপুর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের শান্তিরহাট এলাকার শহীদের কলোনির মৃত আবুল কালামের স্ত্রী পারভীন আক্তার (৪০), ছেলে মো. এমরান (২১), মেয়ে সেলিনা আক্তার সেলি (২৮) ও রোজি আক্তার (২৩)। তবে এ সময় অজ্ঞাত সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক পালিয়ে যায়। প্রথমজন ছাড়া তিন নারী ও দুই পুরুষ একই পরিবারের সদস্য।

গত শুক্রবার জুমার নামাজ চলাকালে এই গরু চুরির ঘটনা ঘটে এবং অটোরিকশায় তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় জনতার হাতে ধরা পড়ে। এ সময় পুলিশ ধৃতদের হেফাজত থেকে উদ্ধার করে চোরাইকৃত গরু, স্প্রের বোতল, ছোরা, স্কচটেপ, মোবাইল, গাড়ির চাবি।

পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, গরু চোরদের আটক করে স্থানীয় অতি উৎসাহী জনতা কর্তৃক পেটানো এবং রশি দিয়ে বেঁধে প্রকাশ্যে হাঁটানোর খবর পাওয়ার পর হারবাং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মিরানুল হক গ্রাম্য চৌকিদার পাঠিয়ে জনতার রোষানল থেকে তাদের উদ্ধার করে পরিষদে নিয়ে আসেন। এরপর হারবাং ফাঁড়ির পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন।

পিটুনিতে আহত পাঁচ জনকেই পুলিশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা করানো হয়। এরপর গরুর মালিক তাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করলে পুলিশ সেই মামলায় তাদের গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করেন।

অপরদিকে এলাকাবাসীর অনেকের ধারণা মেয়ে বিয়েতে রাজী না হওয়ায় গরু চোরের অপবাদ দিয়ে তাদের ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চকরিয়া থানার হারবাং তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক আমিনুল ইসলাম বলেন, শুক্রবার স্থানীয়রা ফাঁড়িতে খবর দিলে আমরা ফোর্স পাঠাই। আমাদের ফোর্স গিয়ে গুরুতর অবস্থায় মা-মেয়েকে উদ্ধার করে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে আসি। আমরা তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি।

আবার অনেকে জানান, অতি উৎসাহী জনতা দুই নারী মা-মেয়েকে কোমরে রশি বেঁধে প্রকাশ্যে হাঁটিয়ে নিয়ে যাওয়ার ঘটনার সঙ্গে স্থানীয় হারবাং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলাম মিরানকে জড়িয়ে বেশ অপপ্রচার চলছে।

এ প্রসঙ্গে হারবাং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলাম দাবি করেছেন, যখন গরু চুরির ঘটনা ঘটে তখন তিনি ছিলেন না। ব্যক্তিগত কাজে চট্টগ্রামের কলাউজানে ছিলেন। অবশ্য ঘটনার খবর পেয়ে গ্রাম্য চৌকিদার পাঠিয়ে জনতার রোষানল থেকে তাদের উদ্ধার করে ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে আসা হয়। এরপর পরিষদ থেকে মাত্র ২০ গজের মধ্যে থাকা হারবাং ফাঁড়ির পুলিশের কাছে তাদের হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু বিভিন্ন মাধ্যমে আমাকেও এই ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে ঘটনাটিকে ভিন্নখাতে নেয়ার চেষ্টা হচ্ছে অসৎ উদ্দেশ্যে।

হারবাং পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই পারসিত চাকমা বলেন, ‘খবর পেয়ে তিন নারী ও দুই পুরুষকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়। এ সময় তাদের হেফাজত থেকে জব্দ করা হয় একটি স্প্রের বোতল, বাট ছাড়া একটি ছোরা, একটি কালো স্কচটেপ, একটি মোবাইল ও গাড়ির চাবি।

চকরিয়া থানার ওসি মো. হাবিবুর রহমান বলেন, পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা গরুর বাছুর চুরি করে সিএনজি অটোয় তুলে পালানোর ঘটনার কথা স্বীকার করেছেন। গরু চুরির বিষয়টি যেমন অপরাধ, তেমনি কাউকে এভাবে রশি দিয়ে বেঁধে প্রকাশ্যে ঘোরানোটাও আইনের দৃষ্টিতে অপরাধ। তাই অতি উৎসাহী কারা এমন কাণ্ড ঘটিয়েছেন, ফুটেজ দেখে তাদেরকে শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। ভুক্তভোগীদের পক্ষে কেউ লিখিত অভিযোগ করলে পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে।

তবে ঘটনার একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী অভিযোগ করেছেন, একদফা মা-মেয়ের ওপর নির্যাতন চলার পর হারবাং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলাম চৌকিদার (গ্রাম পুলিশ) পাঠিয়ে তাদেরকে রশিতে বেঁধে তার কার্যালয়ে এনে আবার নির্মমভাবে নির্যাতন করেন। উপর্যুপরি নির্যাতন শেষে চেয়ারম্যানের লোকেরাই তদন্ত কেন্দ্রে ফোন করে পুলিশ এনে তাদের হাতে মা-মেয়েসহ পরিবারের ৫ জনকে মুমূর্ষু অবস্থায় তুলে দেন।

আপনি আরও পড়তে পারেন