কাশ্মীর টাইমস বন্ধ করল ভারতীয় কর্তৃপক্ষ

প্রভাবশালী ইংরেজি দৈনিক কাশ্মীর টাইমসের অফিস বন্ধ করে দিয়েছে ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরের স্থানীয় প্রশাসন। কাশ্মীরের প্রধান শহর শ্রীনগরের মিডিয়া পাড়ায় কাশ্মীর টাইমসের অফিস। সোমবার (১৯ অক্টোবর) স্থানীয় এস্টেট ডিপার্টিমেন্ট গণমাধ্যমের অফিসটি বন্ধ করে দেয়।

কাশ্মীর টাইমস বন্ধের কোনো কারণ জানায়নি কর্তৃপক্ষ।

কাশ্মীর উপত্যকার অন্যতম পুরাতন একটি গণমাধ্যম কাশ্মীর টাইমস। প্রধান কার্যালয় জম্মুতে। জম্মু এবং কাশ্মীর, দুটি জায়গা থেকেই এটি ছাপানো হতো।

গণমাধ্যমটির মালিক অনুরাধা ভাসিন বলেন, কাশ্মীর টাইমসের অফিস বন্ধে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেনি কর্তৃপক্ষ। তার দাবি, স্বাধীন মত প্রকাশ করায় স্থানীয় প্রশাসন তাদের গণমাধ্যমের অফিস বন্ধ করে দিয়ে প্রতিশোধ নিয়েছে।

প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়াকে তিনি জানান, বন্ধের আগে আমাদের উচ্ছেদ নোটিশ দেয়া হয়নি। আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো যোগাযোগও তারা আমাদের সাথে করেনি।

টুইট বার্তায় তিনি বলেন, বাতিল বা উচ্ছেদের কোনো আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া অনুসরণ ছাড়াই এস্টেট ডিপার্টমেন্ট আজকে আমাদের অফিস বন্ধ করে দিয়েছে। একইভাবে জম্মুর ফ্ল্যাট থেকেও আমাকে উচ্ছেদ করা হয়। আমার মূল্যবান জিনিসপত্র তখন নতুন বরাদ্দ পাওয়া ব্যক্তিকে দিয়ে দেয়া হয়। শুধুমাত্র স্বাধীন মত প্রকাশ করায় আমার ওপর প্রতিশোধ নেয়া হচ্ছে। কোনো নিয়মতান্ত্রিকতা অনুসরণ করা হয়নি। কি অবাক কাণ্ড!

উপত্যকায় গণমাধ্যমে কর্মরত অনেক গণমাধ্যমকর্মী ভাসিনের প্রতি সমর্থন এবং একাত্মতা প্রকাশ করেছেন। সরকারের কার্যক্রমের নিন্দা জানিয়েছেন তারা।

জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মাজিদ মাকবুল বলেন, এ ধরনের উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে কাশ্মীররের স্বাধীন কণ্ঠস্বররোধ করা যাবে না।

ভাসিনকে অন্যতম শক্তিশালী কণ্ঠস্বর আখ্যা দিয়ে অনলাইন নিউজ পোর্টাল কাশ্মীর ওয়ালার সম্পাদক ফাহাদ শাহ বলেন, ২০১৯ সালের আগস্টের পর থেকে কাশ্মীরের গণমাধ্যম সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে। কঠিন এ পরিস্থিতে আমাদের কিছু লোক লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।

টুইট বার্তায় তিনি আরো বলেন, স্বাধীন গণমাধ্যম বন্ধে সরকার কঠোরভাবে গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করছে, গণমাধ্যমকর্মীদের জেলে দিচ্ছে, আদালত ডেকে পাঠাচ্ছেন, সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে মিথ্যা মামলা দেয়া হচ্ছে, ভয়ভীতি দেখিয়ে যাচ্ছে। কাশ্মীরের স্বাধীন গণমাধ্যমগুলোকে প্রতিনিয়ত এসবের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হচ্ছে।

কাশ্মীর টাইমস বন্ধের সরকারি সিদ্ধান্তকে স্বাধীন গণমাধ্যমের ওপর আঘাত বলে আখ্যা দিয়েছে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স (আরএফএস)। বলা হয়, কাশ্মীর টাইমস উপত্যকার অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি গণমাধ্যম। পত্রিকাটির সম্পাদক অনুরাধাধভাসিনের সঙ্গে নীতিবহির্ভুত আচরণের পর পত্রিকাটির অফিসও বন্ধ করে দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। উপত্যকার স্বাধীন গণমাধ্যমে সরকারের নতুন আগ্রাসনে আরএফএস হতবাক বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

কাশ্মীর মুসলিম অধ্যুষিত হিমালয় অঞ্চল। যার অধিকাংশ ভারত-পাকিস্তান দখল করে আছে। পুরো অংশকেই নিজেদের বলে দাবি করে তারা। বাকি ছোট একটি অংশ দখল করে আছে চীন।

১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর পাকিস্তান-ভারত তিন বার নিজেদের মধ্যে যুদ্ধে জড়িয়েছে। ১৯৪৮ সালে দু’পক্ষের মধ্যে প্রথম যুদ্ধ হয়। পরবর্তীতে ১৯৬৫ এবং ১৯৭১ সালেও যুদ্ধে জড়ায় তারা। যার দুটিই কাশ্মীরের দখলদারিত্ব ঘিরে।

এছাড়া নর্দান কাশ্মীরের সিয়াচেন হিমবাহ অঞ্চলে ভারত-পাকিস্তানের সেনারা ১৯৮৪ সাল থেকে বেশ কয়েকদফা যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল। ২০০৩ সালে সেখানে একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়।

জম্মু এবং কাশ্মীরের কয়েকটি সংগঠন ভারতের শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। তাদের দাবি, স্বাধীন কাশ্মীর প্রতিষ্ঠা অথবা প্রতিবেশি পাকিস্তানের সঙ্গে একীভূত হওয়া। কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠনের তথ্য মতে ১৯৮৯ সালের পর থেকে চলমান সংঘাতে লক্ষাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।

আপনি আরও পড়তে পারেন