ট্রাম্পেরও আকাউন্ট আছে চীনা ব্যাংকে, চীনে ব্যবসাও ছিল

আগামী ৩ নভেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হতে যাচ্ছে। এখন চলছে জোর প্রচারণা। প্রতিদ্বন্দ্বী দুই দল রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট মনোনীত প্রেসিডেন্ট প্রার্থী দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জো-বাইডেন নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করতে ও জনসমর্থন বাড়াতে অংশ নিচ্ছেন বিতর্কে। মার্কিন নির্বাচনের এই রীতি মেনে আনুষ্ঠানিক বিতর্কে অংশ নেয়ার পাশাপাশি তারা জড়িয়ে পড়ছেন আরও বহু রকম বিতর্কে। কয়দিন আগেই মার্কিন গণমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস তাদের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে প্রকাশ করে ট্রাম্পের কর ফাঁকির খবর। এবার গণমাধ্যমটি সামনে নিয়ে এল চীনা ব্যাংকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আকাউন্ট থাকার খবর ও দেশটিতে ট্রাম্পের এক দশকের ব্যর্থ ব্যবসায়িক ইতিহাস। 

গণমাধ্যমটি তাদের প্রতিবেদনে বলছে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও সমর্থকরা বরাবরই বলে আসছে চীনের প্রতি বেশ আন্তরিক ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো-বাইডেন। এই দাবির পেছনে তাদের যুক্তির খোরাক জোগায়- বাইডেনের ছেলের ব্যবসা রয়েছে চীনে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে বৈদেশিক ব্যবসা নীতিতে নানা পরিবর্তন নিয়ে এসে বিতর্কের তৈরি করে ট্রাম্প। গেল কয়বছর ধরে ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্তে বর্তমানে ওয়াশিংটন-বেইজিং বাণিজ্যিক সম্পর্ক পরিণত হয়েছে দা-কুমড়ায়।

তবে, ট্রাম্পের ব্যবসায়িক ইতিহাসে পাওয়া গেছে চীনের প্রতি ট্রাম্পেরও আগ্রহ ছিল বেশ। আন্তর্জাতিক ব্যবসা সম্প্রসারণের ধারাবাহিকতায় চীনেও গেছে ট্রাম্পের ব্যবসা। আর সেই ব্যবসা পরিচালনার স্বার্থেই চীনা ব্যাংকে হিসাবও (অ্যাকাউন্ট) খুলতে হয় তাকে। এমনকি তার প্রথম দফার নির্বাচনী প্রস্তুতিকালীনও চীনের সরকার নিয়ন্ত্রিত বেশ কয়েকটি শক্তিশালী প্রকল্পে যুক্ত হয়ে চীনে অফিস চালু রাখেন ট্রাম্প। তবে চীনে তার এক দশকের ব্যবসায়িক জীবনে সফল হতে পারেননি তিনি।

ট্রাম্পের কর ফাঁকির তথ্য ঘেটে এই তথ্যও পেয়েছে নিউইয়র্ক টাইমস। প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে তিনটি ভিনদেশে অ্যাকাউন্ট খুলেছেন তার মধ্যে চীন রয়েছে। বাকি দুটি দেশ ব্রাজিল ও বৃটেন। তবে, ট্রাম্প তার দেয়া আর্থিক বিবরণীতে বিদেশে অ্যাকাউন্ট পরিচালনার বিষয়টি উল্লেখ করেননি। যদিও, এসব সম্পদের বিবরণী তুলে ধরা উচিত; কারণ, এগুলো তারই ব্যবসায়িক লেনদেনের বিষয়। এমনকি এখানেও পরিষ্কার অস্বচ্ছতা রয়েছে বলে দাবি নিউইয়র্ক টাইমসের।

বলা হচ্ছে, চীনে চীনের ব্যাংকে ট্রাম্পের অ্যাকাউন্ট পরিচালনা হত ট্রাম্প ইন্টারন্যাশনাল হোটেল ম্যানেজেম্যান্ট এল এল সির মাধ্যমে এবং তথ্য বলছে, লাইসেন্স নেয়াসহ ২০১৩ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ওই ব্যাংকের মাধ্যমে চীনে ১ লাখ ৮৮ হাজার ৫৬১ ডলার করও পরিশোধ করা হয়েছে।

বৈদেশিক বাণিজ্যের নামে কি পরিমাণ অর্থ বৈদেশিক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে সরানো হয়েছে কর ফাইলে তা উল্লেখ করা হয়নি। যদিও, কোন কোন দেশ থেকে কি পরিমাণ অর্থের সংস্থান বা প্রাপ্তি ঘটেছে অভ্যন্তরীণ রাজস্ব পরিষেবার কর ফাইলে তা উল্লেখ করার কথা রয়েছে।

ব্রিটেনে ও আয়ারল্যান্ডে ট্রাম্পের অ্যাকাউন্ট যেগুলো স্কটল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডে অবস্থিত তার গলফ কোর্সের মাধ্যমে পরিচালনা করা হয়; সেসব অ্যাকাউন্ট নিয়মিতই হালনাগাদ করে জানায় ট্রাম্পের মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার আয়ের তথ্য। অথচ চীনের অ্যাকাউন্ট চালানো ট্রম্পের আন্তর্জাতিক হোটেল ম্যানেজমেন্ট মাত্র কয়েক হাজার ডলার আয়ের খবর জানিয়েছে।

নিউইয়র্ক টাইমসের করা প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প অর্গানাইজেশনের আইনজীবী অ্যালান গার্টেন জানান, হ্যা, ট্রাম্পের হোটেল ম্যানেজমেন্টের ওই প্রতিষ্ঠানটি চীনা ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলেছিল। যে ব্যাংকের অফিস ছিল যুক্তরাষ্ট্রেই। আর এটা করা হয়েছিল চীনের স্থানীয় পর্যায়ের কর পরিশোধ করার স্বার্থে। এশিয়ায় হোটেল ব্যবসাকে প্রসারিত করার লক্ষ্য নিয়ে চীনে অফিস প্রতিষ্ঠার পর ওই অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছিল বলেও জানান তিনি।

তবে এসব কারণে অ্যাকাউন্ট সচল করা হলেও গার্টেনের দাবি, চীনা ওই ব্যাংকের মাধ্যমে কোনও অর্থ স্থানান্তর, চুক্তি বা ব্যবসায়িক কোনও ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়নি। এমনকি ২০১৫ সাল থেকে ওই অ্যাকাউন্ট অচল রয়েছে। অ্যাকাউন্টটি খোলা থাকলেও কোনও উদ্দেশ্যেই তা কখনোই কাজে লাগানো হয়নি বলেও দাবি তার।

অবশ্য চীনের ওই ব্যাংক, যেখানে ট্রাম্পের অ্যাকাউন্ট রয়েছে তার অবস্থান শনাক্ত করতে বা সে সম্পর্কে বিস্তর কিছু বলতে পারেনি বা বলেনি গার্টেন- এমন দাবি নিউইয়র্ক টাইমসের। গণমাধ্যমটি বলছে, গত বছর পর্যন্ত চীনা সরকার নিয়ন্ত্রিত সবচেয়ে বড় ব্যাংক যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত ট্রাম্প টাওয়ারের তিনটি ফ্লোর ভাড়ায় নিয়েছিল। এই ভাড়া নেয়ার ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের স্বার্থসংশ্লিষ্ট অসাধুতার দিকেও আঙুল তোলার সযোগ রয়েছে বলে বলা হচ্ছে।

 

 

 

 

আপনি আরও পড়তে পারেন