ব্যালট পোড়ানোর ভিডিও প্রকাশ, সত্যিই কি জালিয়াতি হয়েছে মার্কিন নির্বাচনে?

সম্প্রতি একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে যেখানে দৃশ্যত ৮০টি ব্যালট পত্র একটি ব্যাগে ঢুকিয়ে, তার ওপর তেল ঢেলে তা জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে। এই ভিডিওটি শেয়ার করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ছেলে এরিক। এরপরই মার্কিন নির্বাচনে ভোট জালিয়াতির বিষয়টি জোরালো হয়েছে। এছাড়া বেশ কয়েকটি এমন ঘটনা ঘটেছে যেগুলোতে জালিয়াতির অভিযোগ এনেছেন ট্রাম্প সমর্থকরা।

তবে সত্যিই কি মার্কিন নির্বাচনে ভোট জালিয়াতি হয়েছে? এ নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি ও ডয়চে ভেলে। নিউজ হান্টের পাঠকদের জন্য সেসব অভিযোগ ও বিশ্লেষণ তুলে ধরা হলো-

ব্যালট পোড়ানোর ভিডিও নিয়ে ভার্জিনিয়া বিচ শহরের কর্মকর্তারা এ নিয়ে ভোটের দিনেই এক বিবৃতি প্রকাশ করেছেন এবং তাতে তারা জানিয়েছেন যে ব্যালট পত্রগুলোতে কোন সরকারি ছাপ ছিল না এবং সেগুলো ছিল স্যাম্পল, বা ব্যালট পত্রের নমুনা।

ভার্জিনিয়া বিচ শহরের মেয়র নিজে একজন রিপাবলিকান। এরপরও এরিক ট্রাম্প ভিডিওটি টুইটারে শেয়ার করেন যেটিতে এক লক্ষ বার লাইক দেয়া হয়, শেয়ার করা হয় এবং নানা ধরনের কমেন্ট করা হয়।

তার এই পোস্টটি যে অ্যাকাউন্ট থেকে শেয়ার করা হয়েছে টুইটার সেটি বন্ধ করে দিয়েছে। তারপরও ভিডিওটি ইউটিউবে শেয়ার করা হয়েছে। ইউটিউব কর্তৃপক্ষ এব্যাপারে এখনও কোন পদক্ষেপ নেয়নি।

ফিলাডেলফিয়ার একটি ভোট গণনা কেন্দ্রে প্রবেশের চেষ্টা করেছেন ট্রাম্প সমর্থকরা। তাদের অভিযোগ, কেন্দ্রের ভেতরে অস্ত্র ও পরিচয়পত্রধারী এক ব্যক্তি, যিনি পুলিশ নন, তিনি রিপাবলিকান প্রতিনিধিকে গণনার জায়গা থেকে ১০০ ফুট দূরে সরিয়ে রেখেছে।

ওদিকে ট্রাম্প প্রচার দলের ম্যানেজার বিল স্টেপিয়েন সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেছেন যে ডেমোক্র্যাটরা ‘মিথ্যে বলছে, জালিয়াতি করছে ও চুরি করছে এবং নানা ধরনের বেআইনি কাজকর্ম চলছে।’ কিন্তু ভোট জালিয়াতির কোন প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি।

নেভাডার রিপাবলিকান পার্টিও বলছে যে ভোট জালিয়াতির অভিযোগে তারা মামলা করতে যাচ্ছে।তাদের দাবি, প্রায় ১০,০০০ লোকের ভোট পড়েছে যারা ওই অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দাই না।

বুধবার সকালে হঠাৎ করে মিশিগানে বাইডেনের ভোট ১ লাখ ৩৮ হাজার বেড়ে যায়। এ নিয়ে শুরু হয় নানা অভিযোগ। আসলে এই ঘটনাটি ঘটে মিশিগানের এক নির্বাচন কর্মকর্তার ভুলের কারণে। তিনি ভুল করে একটি শূন্য বেশি বসিয়ে দিয়েছিলেন বাইডেনের ভোট গণনায়, কিন্তু ভুলটি ২০ মিনিটের মধ্যে শুধরে নেয়া হয়। তবে এই ভুলের খবর ছড়িয়ে পড়লে রিপাবলিকানরা জালিয়াতির অভিযোগ তোলে।

অ্যারিজোনায় ভোট দেয়ায় একটি বিশেষ কলম ব্যবহার করতে বাধ্য করা হচ্ছে ট্রাম্প সমর্থকদের, এরকম একটি অভিযোগও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তাদের অভিযোগ, এই বিশেষ কলম শুধু ট্রাম্প সমর্থকদেরই ব্যবহার করতে বাধ্য করা হচ্ছে, এবং এই কলম ব্যবহার করার ফলে ব্যালট পেপারটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু নির্বাচনী কর্মকর্তারা বলেছেন, যেকোনো ধরনের কলম ব্যবহার করে ভোট দিলে তা বৈধ ভোট হিসেবে বিবেচিত হবে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইনস্টাগ্রামে একজন অভিযোগ তোলেন যে উইসকনসিনে মোট রেজিস্টার্ড ভোটের চেয়ে বেশি ভোট দেয়া হয়েছে। কিন্তু নির্বাচন কর্মকর্তারা জানান, এই অভিযোগে তথ্যগত ভুল রয়েছে। কারণ, এই রাজ্যের নিয়ম অনুযায়ী, যেকোনো ভোট প্রদানের যোগ্য ব্যক্তি ভোটের দিনেও রেজিস্টার্ড ভোটার হতে পারেন এবং ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন। আসলে মোট ভোটারের পরিমাণ অভিযোগে উল্লেখিত ভোটার সংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি।

এখন পর্যন্ত ৫ অঙ্গরাজ্য ছাড়া সব রাজ্যেরই প্রাথমিক ফল প্রকাশ হয়েছে। তাতে এখন পর্যন্ত ২৬৪ ইলেকটোরাল ভোট পেয়ে জয়ের দ্বারপ্রান্তে রয়েছেন জো বাইডেন। অপর দিকে ২১৪ ভোট পেয়ে মাইলফলক থেকে বেশ দূরে ট্রাম্প শিবির।

তবে যে পাঁচ রাজ্যের ফল বাকি রয়েছে তার মধ্যে নেভাডার ৬টি ভোট ছাড়া সবগুলোতে এগিয়ে রয়েছেন ট্রাম্প। এজন্য ভোট পুনঃগণনা, আদালতে যাওয়া এবং ভোট গণনা বন্ধ করাসহ সব উপায়ের সর্বোচ্চ ব্যবহারের চেষ্টায় রয়েছে ট্রাম্প শিবির। আর এসবের মধ্যেই একের পর এক বানীও দিয়ে যাচ্ছেন ট্রাম্প।

আপনি আরও পড়তে পারেন