স্বাধীনতা পদক পেলেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী!

স্বাধীনতা পদক পেলেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী!

স্বাধীনতা পদক পেলেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী!

রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) সংবাদদাতাঃ
স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান রাখায় ‘স্বাধীনতা পদকে’ ভূষিত হলেন নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী ‌গোলাম দস্তগীর গাজী (বীরপ্রতীক)।

এদিকে গত ২০ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ পুরস্কারের জন্য গোলাম দস্তগীর গাজী বীর প্রতীকের নাম প্রকাশ করা হলেও করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনায় নিয়ে স্বাধীনতা পদক দেওয়ার অনুষ্ঠান স্থগিত করা হয়েছিল।

বৃহস্পতিবার (২৯ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে তার হাতে পদক তুলে দেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। এ সময় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে অনুষ্ঠানে যুক্ত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী।

ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে পদক প্রদান অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।

এর আগে গোলাম দস্তগীর গাজীকে মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বীর প্রতীকের খেতাব দেয় রাষ্ট্র। আর এবার স্বাধীনতা পুরস্কার দিয়ে বীরযোদ্ধার অবদানের প্রতি সম্মান জানালো জাতি। এছাড়াও ২০১৮ সালে সমাজসেবামূলক কার্যক্রমে অবদান রাখার জন্য আন্তর্জাতিক মাদার তেরেসা পদকে ভূষিত করা হয় তাকে।

প্রসঙ্গত গোলাম দস্তগীর গাজী ১৯৪৮ সালের ১৪ আগস্ট জন্ম গ্রহণ করেন। তার বাবার নাম গোলাম কিবরিয়া গাজী। মায়ের নাম শামসুনেচ্ছা বেগম। তিনি পড়াশুনা শুরু করেন পুরান ঢাকার বিদ্যাপিঠে। মাধ্যমিক পাস করার পর ভর্তি হন নটরডেম কলেজে। পরে ১৯৬৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পাস করেন।

ছাত্র থাকা কালীন সময়ে গোলাম দস্তগীর গাজী আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন। ৬ দফা আন্দোলন, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ৭০-এর নিবার্চন, ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ এর সব ঘটনায় জীবনবাজী রেখে লড়াই করেছেন। তিনি ২ নং সেক্টরের অধীনে রণাঙ্গণে যুদ্ধ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধে ক্র্যাক প্লাটুনের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশ সরকার তাকে বীরপ্রতীক খেতাবে ভূষিত করেছে। তিনি ছিলেন গেরিলা যোদ্ধা। রাজধানী ঢাকাকে শত্রুমুক্ত করতে কয়েকটি সফল অপারেশনে অংশ নেন তিনি। তার মধ্যে একটি অপারেশন ছিল ১৯৭১ এর ১৯ জুলাই। সেদিন গোলাম দস্তগীর গাজী ছিলেন এই অপারেশনের সম্মুখ ভাগে। তিনি সফল হয়েছিলেন।

৭ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনারা ত্রিমোহনীত আক্রমন করলে গোলাম দস্তগীর গাজী গুলি চালাতে চালাতে সামনে এগিয়ে যান। পাকিস্তানি বাহিনী পিছু হটে। সেদিনের আক্রমনে ১২/১৩ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়। ১৩ই ডিসেম্বর গোলাম দস্তগীর গাজীসহ মুক্তিযোদ্ধারা রূপগঞ্জকে শত্রু মুক্ত করে।
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে রাজনীতিতে থাকলেও গোলাম দস্তগীর গাজী নিজ বুদ্ধিমত্তা, উদ্ভাবনী চিন্তাশক্তি ও কর্মদক্ষতা কাজে লাগান যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের অবকাঠামো পুনর্গঠনে।

১৯৭৪ সালে দেশের চাহিদার কথা মাথায় রেখে ও দেশের শিল্প খাতকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে প্লাস্টিক ও রাবারজাত পণ্য উৎপাদনকারী কারখানা স্থাপন করেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে দেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির উদ্দেশ্যে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। স্বাধীনতা বিরোধীরা ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে স্ব পরিবারে হত্যা করলে গোলাম দস্তগীর গাজী বঙ্গবন্ধুকে হত্যার বিচার চেয়ে প্রতিবাদ করেছিলেন। তিনি ১৯৭৭ সালে অনুষ্ঠিত ঢাকা সিটি করর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচনে কাকরাইল, সিদ্ধেশ্বরী, মালিবাগ, মৌচাক, ইস্কাটন ও মগবাজার এলাকা থেকে কমিশনার নির্বাচিত হন।

তিনি এফবিসিসিআইয়ের সহ সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। ক্রীড়া অঙ্গনে গোলাম দস্তগীর গাজীর বিরাট অবদান রয়েছে। তিনি বিসিবির সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। মানবসেবায় বিশেষ অবদানের জন্য গোলাম দস্তগীর গত বছর মাদার তেরেসা পুরস্কার পেয়েছেন।
রাজনৈতিক জীবনের বহু চড়াই-উৎরাই পার করা গোলাম দস্তগীর গাজী ৯০-এর দশক থেকে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ এলাকাবাসীর জন্য কাজ করতে শুরু করেন।

২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ ১ আসনে গোলাম দস্তগীর গাজী আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান। সেই নির্বাচনে তিনি বিএনপির প্রার্থীকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে তিনি নির্বাচিত হন।

এরপর তিনি ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১ লাখের অধিক ভোটের ব্যবধানে স্বতন্ত্র প্রার্থী কে পরাজিত করে দ্বিতীয় বারের মত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়।

এছাড়াও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি বিএনপির প্রার্থীকে ২ লাখের অধিক ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে টানা তৃতীয় বারের মত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

স্বাধীনতার ৪৭ বছর পর নারায়ণগঞ্জে থেকে আওয়ামী লীগ সরকার প্রথম মন্ত্রী দিয়েছে। বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী হয়েছেন গোলাম দস্তগীর গাজী বীর প্রতীক। তিনি নারায়ণগঞ্জ জেলার উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন। গোলাম দস্তগীর গাজীর পদচারণায় বদলে গেছে রূপগঞ্জের উন্নয়ন চিত্র। আওয়ামীলীগ সরকার গত দুই মেয়াদে রূপগঞ্জের উন্নয়নের জন্য যতগুলো প্রকল্প দিয়েছে তা সফল ভাবে বাস্তবায়ন করেছেন তিনি। তার নামে নেই কোন দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ।

রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি তিনি । তিনি গাজী গ্রুপের চেয়ারম্যান। এছাড়া বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশন জিটিভি, দৈনিক সারাবাংলার মালিক তিনি। তিনি ৮ বছর যাবত বাংলাদেশের শীর্ষ করদাতা। তার দুই ছেলে । তার বড় ছেলে গাজী গোলাম মর্তুজা পাপ্পা বর্তমানে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক । তার ছোট ছেলে বাপ্পী এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক। গোলাম দস্তগীর গাজীর স্ত্রী হাছিনা গাজী তারাবো পৌর সভার মেয়র।

স্বাধীনতা পুরস্কার দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় বেসামরিক পুরস্কার। ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সরকার ১৯৭৭ সাল থেকে প্রতি বছর এ পুরস্কার দিয়ে আসছে। সর্বশেষ ২০১৯ সালে ১৩ জন ব্যক্তি ও একটি প্রতিষ্ঠানকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল।

এদিকে সরকার গোলাম দস্তগীর গাজী বীর প্রতীককে স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য মনোনীত করায় রূপগঞ্জবাসী আনন্দিত। রূপগঞ্জবাসী ও তার শুভাকাঙ্ক্ষীরা গোলাম দস্তগীর গাজীকে বিভিন্ন মাধ্যমে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এছাড়া সরকারকে রূপগঞ্জবাসীর পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন গোলাম দস্তগীর গাজী বীর প্রতীক।

আপনি আরও পড়তে পারেন