প্রশিক্ষিত ফার্মাসিস্টি ছাড়াই কেরানীগঞ্জে অলিতে-গলিতে ব্যাঙের ছাতার মত ঘরে উঠেছে শত শত ফার্মেসি

মো.শাহিন
বিশেষ প্রতিনিধি

কেরানীগঞ্জে  প্রশিক্ষিত ফার্মাসিস্ট ছাড়াই পরো উপজেলায়  অলিতে-গলিতে ব্যাঙের ছাতার মত গড়ে উঠেছে শত শত ফার্মেসি।
ঔষধ প্রশাসনের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে শুধুমাত্র ট্রেড লাইসেন্স নিয়েই চালিয়ে যাচ্ছে ঔষধ বিক্রির ব্যবসা। এসব ফার্মেসিগুলো চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই উচ্চমাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক, নিষিদ্ধ, নকল, মেয়াদোত্তীর্ণ ও নিম্নমানের বিভিন্ন ওষুধ বিক্রি করছে অবাধে। এতে আর্থিক, শারীরিক ও মানসিক তির সম্মুখিন হয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পরছেন অনেক রোগী ও তাদের পরিবার পরিজন। ফলে এখানকার মানুষ প্রতিনিয়ত অপচিকিৎসার শিকার হচ্ছে।

আবার লাইসেন্সবিহীন এলোপ্যাথিক ঔষধের পাশাপাশি আয়ুবেদী ও হোমিও প্যাথিক ঔষধের ফার্মেসি খুলে বসেছেন অনেকে। তবে ফার্মেসি পরিচালনার জন্য যে নুন্যতম যোগ্যতার প্রয়োজন তাও আবার অনেক ফার্মেসি মালিকদের নেই।

উপজেলার কয়েকটি ফার্মেসিতে সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, তারা ফার্মেসি ব্যবসা শুরু করার পূর্বে অন্যের ফার্মেসিতে কাজ করেছেন দীর্ঘদিন। সেখান থেকে অভিজ্ঞতা অর্জন করে নিজেই আরাম্ভ করেছেন ফার্মেসি ব্যবসা।

অভিযোগ রয়েছে, এসব ফার্মেসিতে অধিকাংশই ডাক্তারের ব্যবসস্থাপত্রের বাইরে ঔষধ সরবরাহ দিয়ে থাকেন এবং সাধারন মানুষের ঔষুধের মুল্য সম্পর্কে ধারনা না থাকায় ৫ টাকার ঔষধ ২০-৩০ টাকায় বিক্রি করছেন। এছাড়া ভেজাল ও নিন্মমানের ওষুধ বিক্রির ক্ষেত্রে ভালো মানের ওষুধের চেয়ে বেশি কমিশন দেওয়া হচ্ছে। এতে করে বেশি লাভের আশায় ভেজাল ও নিন্মমানের ওষুধ বিক্রিতে বেশি আগ্রহী হচ্ছে ওষুধ ব্যবসায়ীরা। সাধারণ মানুষও কোন ওষুধটি আসল কোনিট নকল তা চিহ্নিত করতে অপারগ। এর ফলে ভেজাল ও নিন্মমানের ওষুধের বাণিজ্য দিন দিন সম্প্রসারিত হচ্ছে। আর স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছে সাধারণ মানুষ।

তথ্যে সূত্রে জানা যায়, একজন প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ফার্মাসিস্ট দ্বারা একটি ফার্মেসি পরিচালনার নিয়ম রয়েছে এবং ড্রাগ লাইসেন্স করার আগে ঔষুধ বিক্রয় ও প্রদর্শনকারী প্রতিষ্ঠানের মালিককে অবশ্যই প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হবে। যদি কেউ ড্রাগ লাইসেন্স ও ফার্মাসিস্ট প্রশিক্ষণ ছাড়াই ঔষুধ বিক্রি করে তাহলে ১৯৪২ ও ১৯৪৫ সালের ড্রাগ আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের বিধান রয়েছে। কিন্তু কেরানীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারসহ অলিতে-গলিতে ঔষধের দোকানে এ আইন অমান্য করা হচ্ছে। যার কারণে প্রশিক্ষণ ও ড্রাগ লাইসেন্সবিহীন ওষুধের দোকান দিন দিন বেড়েই চলেছে।

উপজেলার সচেতন মহল মনে করেন, ঔষুধের মানহীনের পাশাপাশি লাগামহীন দাম হওয়ার কারণে সাধরন মানুষের ক্রয় মতার বাইরে চলে যাচ্ছে। আর তাই দ্রুত অবৈধ ফার্মেসিগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে সাধারন মানুষকে প্রতারনার হাত থেকে রক্ষার দাবি জানান এলাকার সচেতন মহল।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ফার্মাসিস্ট বলেন, আমি নিজে ড্রাগ লাইসেন্সধারী ও প্রশিনপ্রাপ্ত ফার্মাসিস্ট হিসাবে ঔষুধের ব্যবসায় যে সুবিধা ভোগ করছি অথচ অনেকেই ড্রাগ আইন না মানা সত্বেও একই সুবিধা পাচ্ছে।

সাধারণত দেশে এ, বি, সি- এই তিন ক্যাটাগরির ফার্মাসিস্ট রয়েছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফার্মেসি বিভাগে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রিধারীরা হলেন- ‘এ’ ক্যাটাগরির। চার বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা কোর্সধারীরা ‘বি’ ক্যাটাগরির। আর তিন মাসের কোর্সধারীরা ‘সি’ ক্যাটাগরির ফার্মাসিস্ট। উপজেলার যে সকল ফার্মেসিতে ফার্মাসিস্ট রয়েছে তাদের ৯২ শতাংশই ‘সি’ ক্যাটাগরির ফার্মাসিস্ট। এমনও রয়েছে যারা কোনো ক্যাটাগরিতেই পড়ে না। যাদের ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা মাধ্যমিক পাস। এদিকে অনুমোদনহীন নকল, মেয়াদোত্তীর্ণ ও নিম্নমানের ওষুধ বিক্রি বন্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান জরুরি বলে মনে করছেন এলাকার সচেতন মহল

এ ব্যাপারে কেরানীগঞ্জের বিশিষ্ট ব্যাথা বিশেষজ্ঞ ডা. হাবিবুর রহমান জানান, ফার্মেসি মালিককে অনেকে ডাক্তার হিসেবে জেনে চিকিৎসা গ্রহণ করে থাকে। কিন্তু অসাধু কিছু ফার্মেসি ব্যবসায়ী চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই উচ্চমাত্রার অ্যান্টিবায়োটিকসহ বিভিন্ন বিদেশী ঐষধ দিয়ে থাকেন রোগীকে। এতে মানুষের স্বাস্থ্য চরম ঝুঁকিতে ফেলছে। কারণ, অনেক ক্ষেত্রে তাদের দেওয়া ওষুধ মানুষের জন্য উপকারের বিপরীতে ক্ষতির কারণ হতে পারে। এমন কি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

আপনি আরও পড়তে পারেন