আ.লীগ ভোট চুরি করতে পারবে না: জাহাঙ্গীর

ঢাকা-১৮ আসনের উপ-নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন বলেছেন, আগামী ১২ নভেম্বর উপ-নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগের চেষ্টা জনগণও করে যাচ্ছে, আমরাও করছি। আমরা জনগণের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছি এবং আহ্বান জানাচ্ছি আপনারা ভোট কেন্দ্রে আসুন আপনাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেন। এবার আশা করছি, জনগণ ভোট কেন্দ্রে আসবেন।

রোববার (৮ নভেম্বর) উত্তরা ৯ নম্বর সেক্টরের বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ শেষে তিনি এসব কথা বলেন।

বেলা সাড়ে ১১টায় উত্তরা ৯ নম্বর সেক্টরের নিজ নির্বাচনী কার্যালয় থেকে কয়েক হাজার নেতাকর্মী সাথে নিয়ে গণসংযোগ শুরু করেন এস এম জাহাঙ্গীর। এরপর আব্দুল্লাহপুরসহ উত্তরা ৯ নম্বর সেক্টরের বিভিন্ন সড়কে গণসংযোগ শেষে ১২ নম্বর সড়কে শহীদ ক্যাডেট স্কুল এন্ড কলেজের সামনে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী ও সমর্থকদের উপস্থিতিতে সংক্ষিপ্ত পথসভায় বক্তব্য রাখেন। গণসংযোগ শুরুর আগে নিজ নির্বাচনী কার্যালয়ে সাংবাদিকদেরও নানা প্রশ্নের জবাব দেন।

গণসংযোগে অংশ নেতাকর্মীদের মুখে উল্লেখযোগ্য শ্লোগাণ ছিল ‘জিয়া তুমি আছ মিশে, সারাদেশের ধানের শীষে’ ‘খালেদার জিয়ার সালাম নিন, ধানের শীষে ভোটদিন’,‘তারেক রহমানের সালাম নিন, ধানের শীষে ভোট দিন’,‘জাহাঙ্গীর ভাইয়ের সালাম নিন, ধানের শীষে ভোট দিন’, ‘১২ নভেম্বর সারাদিন, ধানের শীষে ভোট দিন,’ ‘সিল মারো ভাই সিল মারো, ধানের শীষে সিল মারো’ নেতাকর্মীদের দেয়া শ্লোগান বেশ আকৃষ্ট করে।

এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ঢাকা-১৮ আসনে ভোটের কোনো সুষ্ঠু পরিবেশ নেই। তারা (আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও তার সমর্থক) বিভিন্ন জায়গায় প্রচার করছে, ঘরে ঘরে, রাস্তায় রাস্তায় তাদের মাইক বাজছে। আর আমাদের অফিসেও মাইক বাজাতে দিচ্ছে না। গতপরশু আমাদের মাইক ভাঙচুর করেছে-এখানে সুষ্ঠু পরিবেশের কোনো সুযোগই নেই। সিইসি নিজেও বলছে, এখানে (ঢাকা-১৮ আসনে) সবকিছু করতে পারতেছিনা, আমাদের (ইসি) নিজেদেরও বাধ্যবাধকতা আছে। তাদের (কমিশনের) বাধ্যবাধকতা কী? পুলিশ আমাদের সাথে কথা বলে না। বললেও বলে উপরে যান।

তিনি বলেন, নির্বাচনী এলাকায় সব ক্ষমতার অধিকারী হল সিইসি। সেখানে সিইসি যদি অপারগতা প্রকাশ করে, সেখানে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কীভাবে থাকে? এখানে কোনো অবস্থায় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই, নির্বাচনেরও পরিবেশ নেই। শুধুমাত্র গণতন্ত্রের স্বার্থে গণতন্ত্র রক্ষার চেষ্টা করে যাচ্ছি। আশা করছি আমরা সফল হব। আমরা মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেয়ার জন্য ও গণতন্ত্র পুনপ্রতিষ্ঠার জন্য শেষ অথবা প্রথম নেই; ভোটের মাঠে আছি এবং থাকব।

বিএনপি প্রার্থী বলেন, আজ আমাদের ৪৭ ও ৪৮ থেকে শুরু হওয়ার কথা। পুলিশ প্রশাসনের কাছে আমরা আবেদনপত্র পাঠিয়ে ছিলাম তা তারা গ্রহণ করেনি।

তবে, রুটিন কাজ সবই হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা শুরু থেকেই পুলিশের অনুমতি নিয়ে কর্মসূচি দিলেও একই স্থানে পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। আপনারা দেখেছেন আমরা সংঘাত এড়াতে অনুমতি পাওয়ার পরও সেসকল স্থানে গণসংযোগ এড়িয়ে চলছি।

এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আমাদের অবলম্বন হলো ভোটার তথা জনগণ। গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসেবে আমাদের আশ্রয়স্থল জনগণ। জনগণের ভোটে আমরা নির্বাচিত হতে চাই, এর বিকল্প নেই। কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের বিকল্পও থাকে। আপনারা দেখেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) যে কথা গুলো বলেছেন, যেমন ৩০ তারিখের ভোট ২৯ তারিখ আর হবে না। তার মানে কী? ভোট ছাড়াই নির্বাচিত হয়েছেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ১৩৬টি ভোট কেন্দ্রে একটি ভোটও পড়েনি। তার মানে কী ওই এলাকায় কী আওয়ামী লীগ নেই? অবশ্যই আছে। সেখানে আওয়ামী লীগও ভোট দিতে যায়নি অথবা ভোটারের দরকার হয়নি। তাদের আসলে জনগণের উপর আস্থা নেই। কারণ, তারা জানে জনগণ ভোট কেন্দ্রে গেলেই ধানের শীষে তথা বিএনপিকে ভোট দিবে।

তিনি বলেন, এ আসনে ১৯৯১ সাল থেকে এই আসনে যতবার নির্বাচন হয়েছে, জনগণ ভোট দিতে পেরেছে ততবারই তারা বিএনপিকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে। ২০০৮ সালের পর থেকে জনগণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় তারা ভোট দিতে পারেনি। আমরা গণতন্ত্রের জন্য যুদ্ধ করছি, জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেয়ার জন্য সংগ্রাম করছি। আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের নেতাকর্মী ও জনগণ ঐক্যবদ্ধ আছে।

অভিযোগ করে বিএনপি এ প্রার্থী বলেন, আপনারা জানেন ইতিমধ্যে প্রশাসনের মাধ্যমে ভোটাদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। গত পড়শুদিন তারা নিজেরা নিজেদের অফিসে আগুন জ্বালিয়ে আমাদের নেতাকর্মীদের নামে মামলা করার ধান্দা করছে, পূর্বেও তারা করেছে। তারা গায়েবি মামলাও করেছে। মামলা হামলা করার চেষ্টা করছে। কিন্তু আমরা জনগণের সাথে ঐক্যবদ্ধ আছি, জনগণ আমাদের সাথে আছে। আমরা আগামী ১২ নভেম্বর জনগণকে সাথে নিয়ে ভোট চোর ও ভোট ডাকাতদের প্রতিহত করার চেষ্টা করব। এ আওয়ামী লীগ ভোট চুরি বা ডাকাতি করতে পারবে না।

প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনারা এতদিন ভোট চুরি, ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতা দখল করে আছেন। আপনাদের সামনে জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের একটি সুযোগ এসেছে। আমি বিশ্বাস করি আপনারা এই সুযোগটি নেবেন। কারণ, ঢাকা-১৮ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ হেরে গেলেও তো তারা ক্ষমতাচ্যুত হবে না। তাই অতীত ভুলে নিজেদের জনপ্রিয়তা কোন পর্যায়ে আছে-তা প্রমাণ করতে হলেও আওয়ামী লীগকে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করা উচিত।

এ সময় গণসংযোগকালে জাহাঙ্গীরের সাথে উল্লেখযোগ্য নেতাদের মধ্যে ছিলেন- চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, সাবেক সংসদ সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম, ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রাজীব হাসান, যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতি মোরতাজুল করীম বাদরু,গাজীপুর মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সুমন সরকার, উত্তরের স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি ফখরুল ইসরাম রবিন, পশ্চিম ছাত্রদলের সভাপতি কামরুজ্জামান জুয়েল, মহিলা দলের তাহমিনা আফরিন নিতা, বিএনপির মহানগর নেতা এস আই টুটুলসহ বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী।

আপনি আরও পড়তে পারেন