অবশেষে পরিকল্পনামন্ত্রী সুনামগঞ্জ জেলা সদরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় রাজি!

অবশেষে পরিকল্পনামন্ত্রী সুনামগঞ্জ জেলা সদরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় রাজি!

সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় পরিকল্পনামন্ত্রীর বাড়ি দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার শান্তিগঞ্জে স্থাপনের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সুনামগঞ্জ যখন উত্তাল, তখন জেলা আওয়ামী লীগের সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জেলা সদরের আহসানমারায় বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থাপনে একমত হয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।

শুক্রবার (১৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর ধানমন্ডির একটি রেস্টুরেন্টে অনুষ্ঠিত জেলা আওয়ামী লীগের সভায় এ প্রস্তাব করা হলে এর সঙ্গে একমত হন মন্ত্রী। সভায় গৃহীত প্রস্তাবটি পরিকল্পনামন্ত্রীকে টেলিফোনে জানানো হলে তিনি প্রস্তাবের সঙ্গে একাত্ম আছেন বলে জানিয়েছেন উপস্থিত জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা।

 

প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রীর উপহার সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় জেলা সদর থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরে পরিকল্পনামন্ত্রীর এলাকা শান্তিগঞ্জে স্থাপিত হবে- বিশ্ববিদ্যালয় আইনে এমন পরিবর্তন আনায় বিক্ষুব্ধ সুনামগঞ্জবাসী তুমুল প্রতিবাদ জানান। সেই সঙ্গে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, সুনামগঞ্জ টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট, কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, বিআরটিএ অফিস কাম ট্রেনিং সেন্টার, যুব মহিলা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মতো প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া সবগুলো মেগা প্রকল্প পরিকল্পনামন্ত্রীর এলাকা শান্তিগঞ্জের দুই কিলোমিটার ব্যাপ্তির মধ্যে স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়ায় আশাহত হন জেলাবাসী। বিশ্ববিদ্যালয়টি জেলা সদরে স্থাপনের দাবিতে সর্বস্তরের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে সুনামগঞ্জ শহরের ট্রাফিক পয়েন্টে বিশাল মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয় সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট পীর ফজলুর রহমান মিসবাহর নেতৃত্বে। পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনও এই দাবির পক্ষে পথসভা, স্থানীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে অবস্থান, মানববন্ধন, মতবিনিময় ও গণস্বাক্ষর সংগ্রহ কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছেন।

ঢাকায় অনুষ্ঠিত জেলা আওয়ামী লীগের সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মতিউর রহমান। তিনি জানান, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান অসুস্থতাজনিত কারণে জেলা আওয়ামী লীগের সভায় উপস্থিত হতে পারেননি। সভা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান নির্বাচন নিয়ে সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক ও মোয়াজ্জেম হোসেন রতন তার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন। এ সময় তাকে জানানো হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান নির্বাচন নিয়ে সৃষ্ট বিতর্ক নিরসন করা দরকার। আমরা সবার সুবিধার কথা বিবেচনা করে এটি আহসানমারা সেতুসংলগ্ন এলাকায় স্থাপন করতে চাই। সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক ও মোয়াজ্জেম হোসেন রতন সভার সিদ্ধান্তের কথা পরিকল্পনামন্ত্রীকে টেলিফোনে জানান।

তিনি আরো বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় বিলে ‘সুনামগঞ্জ জেলার পরিবর্তে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলায় বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থাপিত হবে’ অংশ পুনঃসংশোধন করে ‘সুনামগঞ্জ জেলায় স্থাপিত হবে’ যোগ করার প্রস্তাব করা হয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের সভায়।

সভায় উপস্থিত সুনামগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মুহিবুর রহমান মানিক বলেন, ‘পূর্বে যেখানে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছিল, সেটি নিয়ে নানা বিতর্ক সৃষ্টি হয়। সিন্ডিকেট করে জমি ক্রয়ের অভিযোগ ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে জেলা আওয়ামী লীগের সভায় আলোচনার পর বিকল্প স্থানের প্রস্তাব দেওয়া হয়। আহসানমারা সেতুসংলগ্ন এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়টি নির্মাণের জন্য জেলা আওয়ামী লীগের সভার প্রস্তাব পাস হয়। পরিকল্পনামন্ত্রীকে বিষয়টি জানানোর পর তিনি এতে সম্মতি দেন।

তিনি আরো বলেন, ‘নতুন প্রস্তাবিত স্থানে প্রচুর খাস জমি থাকায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের ব্যয়ভার কমে আসবে। মন্ত্রীও এই স্থানটি বিকল্প হিসেবে আমাদের দেখিয়েছেন। সব উপজেলার সুবিধার কথা বিবেচনা করে এই স্থান প্রস্তাব করেছি। মন্ত্রী বলেছেন, জেলা আওয়ামী লীগের যে কোনো সিদ্ধান্তের সঙ্গে তিনি একমত আছেন।’

সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ও ধর্মপাশা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন রতন বলেন, ‘জেলা আওয়ামী লীগের সভা থেকে পরিকল্পনামন্ত্রী মহোদয়ের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। তিনি বলেছেন, সবার সুবিধা বিবেচনা করে বিশ্ববিদ্যালয়টি আহসানমারা সেতুসংলগ্ন দেখার হাওরে হলে তার কোনো আপত্তি থাকবে না।’

তিনি আরো বলেন, ‘এখানে বিশ্ববিদ্যালয়টি হলে সদর ও দক্ষিণ সুনামগঞ্জের সীমানায় পড়বে। সেই সঙ্গে হাওরের সৌন্দর্য উপভোগ করে শিক্ষার্থীরা মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে পড়াশোনা করতে পারবে।’

সভায় সংরক্ষিত মহিলা সংসদ সদস্য শামীমা শাহরিয়ার, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নূরুল হুদা মুকুট, সহসভাপতি রেজউল করিম শামীম, সাধারণ সম্পাদক এম এনামুল কবির ইমন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

আপনি আরও পড়তে পারেন