বরিশালে সাজানো মিথ্যা মামলা থেকে বেড়িয়ে আসতে চান তাঁতী লীগ নেতা কায়েম

বরিশালে সাজানো মিথ্যা মামলা থেকে বেড়িয়ে আসতে চান তাঁতী লীগ নেতা কায়েম

নিজস্ব প্রতিনিধি :

নাম তার হাসানুর রহমান কায়েম। বরিশাল নগরীর কাউনিয়া টেক্সটাইলের সরদার পাড়ার মৃত আবু তালেব মিয়ার ছেলে।  সবাই তাকে কবুতর কায়েম নামেই চেনে। ছোট বেলা থেকে কবুতর পালন করাই ছিল শখ। নানা জাতের কবুতর পালন করতেন তিনি।

পাশাপাশি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতেও বেশ সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। বরিশাল জেলা আওয়ামী তাঁতী লীগের সাধারন সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সংসার চালানোর জন্য বড় ভাইয়ের প্রতিষ্ঠান মেসার্স শায়েম ব্রাদার্সের ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করতেন।

কায়েমের স্বপ্ন ছিল একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হবেন। সব ঠিকই ছিল হঠাৎ তার জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। তাকে ফাঁসানো হয় ইয়াবা বিক্রির মামলায়। কিন্ত তার ভাষ্য তিনি মাদকের সাথে জড়িত নন। তাকে ফাঁসানো হয়েছে।

জানা গেছে- ২০১৭ সালের ৩১ মার্চ কায়েমের বাড়িতে নাটক সাজিয়ে অভিযান পরিচালনা করে তৎকালিন কাউনিয়া থানার এএসআই মিজানুর রহমান। তখন তার বিছানার উপর থেকে ২০ পিস ইয়াবা উদ্ধার দেখানো হয়।

পরে ওই মামলায় জেল খেটে বের হয় কায়েম। এরপর স্থানীয়দের প্রকৃত বিষয়িটি জানান কায়েম। পরবর্তিতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওই বছরের ১৪ জুন একইভাবে অভিযান চালিয়ে ১৫ পিস ইয়াবা উদ্ধার করে এএসআই মিজানুর রহমান।

এছাড়াও বিভিন্ন সময় কায়েমের শোরুমে অভিযান চালিয়ে হেনস্তা করা হয় তাকে। যা সম্পূর্ন সাজানো নাটক বলে দাবি করেন কায়েম।

সম্প্রতি, ২০২০ সালের মঙ্গলবার (২৭ জানুয়ারি) রাত ১টার পরে শোরুম বন্ধ করে বাসায় গিয়ে খাওয়া-দাওয়া করেন কায়েম। খাওয়া-দাওয়া শেষে তিনি পৌনে ২টার দিকে শোরুমের তালা ঠিকভাবে দেয়া হয়েছে কিনা তা দেখার জন্য বের হয়।

পথিমধ্যে রাতে ডিউটিতে থাকা বরিশাল মেট্রোপলিন কাউনিয়া থানার এএসআই উজ্জ্বল কুমার তাকে থামিয়ে নানা বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। পরে তিনি (কায়েম) শোরুমে যাওয়ার কথা বললে এএসআই উজ্জ্বল কুমার তাকে গাড়িতে উঠতে বলে। কায়েম গাড়িতে উঠলে তাকে নিয়ে বেঙ্গল বিস্কুট ফেক্টরি এলাকায় যান।

ওখানে গিয়ে সবাই চা খান। পরে আবার কায়েমকে গাড়িতে উঠতে বললে তিনি কারণ জিজ্ঞাস করলে ওসি স্যার ডেকেছে বলে থানায় নিয়ে যায় এএসআই উজ্জ্বল কুমার। পরদিন খবর পেয়ে কায়েমের ছোট ভাই নাদিম ও চাচতো ভাই রাকিব থানায় যায়। থানায় গেলেই এএসআই মিজানুর রহমানের সাথে তাদের কথা হয়।

তখন এএসআই মিজান ৫ হাজার টাকা দাবি করেন। আবারও নতুবা চুরি বা মাদক মামলায় কায়েমকে ফাঁসিয়ে দিবে বলে হুমকি দেন। পরে ৩ হাজার টাকার রফা হয়। নাদিমের কাছে থাকা ২ হাজার দিলে প্রথমে নিতে নারাজ হয়। পরে আরো ১ হাজার টাকা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলে কাইউমকে ছেড়ে দেয়া হয়। এবং এই রফার কথা কাউকে জানালে নাদিম ও রাকিবের হাত পা ভেঙ্গে দেয়ার হুমকি দেন।

এ ঘটনায় সংবাদ প্রকাশ করা হলে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নজরে আসলে ওই ২ পুলিশ কর্মকর্তাকে পুলিশ লাইনসে প্রত্যাহার করেন। এবং ঘুষের টাকা ফেরত দেয়া হয়।

তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু করা হয়। পাশাপাশি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কাউনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিমুল করিমকে কাছে কায়েমের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য হেফাজতে রেখে দেন।

এ বিষয়ে ভূক্তভোগী কায়েম বলেন, আমাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে আমার জীবনটা শেষ করে দিয়েছে এএসআই মিজানুর রহমান। আমি কখনোই মাদকের সাথে জড়িত ছিলাম না।

আমাদের জমির বিরোধকে পুঁজি করে বার বার আমাকে হেনস্তাসহ কয়েকটি মামলা দিয়েছে। এবং আমার কাছ থেকে টাকাও হাতিয়ে নিয়েছে। আমি সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চাই।”

আপনি আরও পড়তে পারেন