আগামীকাল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী

আগামীকাল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী

শ্যামল সরকারঃ

মুজিব বর্ষের অংগীকার মাদক করবো পরিহার এ স্লোগান কে সামনে রেখে আগামীকাল ২ জানুয়ারি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ৩১ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন করার লক্ষ্যে  মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, চাঁদপুরের পক্ষ হতে  চাঁদপুরের সর্বস্থরের জনগণের প্রতি প্রাণঢালা শুভেচ্ছা অভিনন্দন জানিয়েছেন চাঁদপুর জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক এ কে এম দিদারুল আলম।

তিনি বলেন, মাদককে রুখববঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ব পতিপাদ্যকে সামনে রেখে আগামীকাল শনিবার সারা দেশের ন্যায় চাঁদপুরেও যথাযথ মর্যাদায় পালিত হবে মাদকদ্রব্যনিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মাদকদ্রব্যের ৩১তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী, সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করছি বলেও তিনি জানান।

এ ব্যাপারে তিনি তার অধিদপ্তরের প্রতিষ্ঠা ও লক্ষ এবং উদ্দেশ্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে গিয়ে গণমাধ্যমকে জানান, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর বাংলাদেশের আর্থ- সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে মাদকদ্রব্যের ব্যবহার অতি প্রাচীন। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি  কাদের বাণিজ্যিক স্বার্থে ভারতবর্ষে প্রথম আফিম চাষ ও আফিম ব্যবসা শুরু করেছিল এবং এর জন্য একটি ফরমান জারী ও কিছু কর্মকর্তা নিয়োগ করে।

বৃটিশরা ভারতবর্ষে আফিম উৎপাদন করে চীনসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে রপ্তানি করে বিপুল অর্থ উপার্জন করে এবং এদেশে আফিমের দোকান চালু করে। ১৮৫৭ সনে আফিম ব্যবসাকে সরকারি নিয়ন্ত্রণাধীন এনে প্রথম আফিম আইন প্রবর্তন এবং ১৮৭৮ সনে আফিম আইন সংশোধন করে আফিম ডিপার্টমেন্ট প্রতিষ্ঠা করা হয়। অতঃপর গাঁজা ও মদ থেকেও রাজস্চব আদাকয় শুরু হয় এবং ১৯০৯ সনে বেঙ্গল এক্সাইজ অ্যাক্ট ও বেঙ্গল এক্সাইজ ডিপার্টমেন্ট প্রতিষ্ঠা করা হয়। আফিম, মদ ও গাঁজা ছাড়াও আফিম ও কোকেন দিয়ে তৈরী বিভিন্ন ধরনের মাদকের প্রসার ঘটলে ১৯৩০ সনে সরকার The Dangerous Drugs Act- 1930 প্রণয়ন করে। একইভাবে সরকার আফিম সেবন নিয়ন্ত্রণের জন্য ১৯৩২ সনে The Dangerous Drugs Rules- 1939 প্রণয়ন এবং ১৯৩৯ সনে The Dangerous Drugs Rules- 1939  প্রণয়ন করে।

১৯৪৭ সনে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর মুসলমানদের জন্য মদ পান নিয়ন্ত্রণের জন্য ১৯৫০ সনে The Prohibtion Rules-1950  তৈরী হয়। পাকিস্তান আমলে ১৯৫৭ সনে The Opium Sales Rules- 1957  প্রণীত হয়। এরপর ষাটের দশকে বেঙ্গল এক্সাইজ ডিপার্টমেন্টকে এক্সাইজ এন্ড ট্যাক্সেশন ডিপার্টমেন্ট হিসেবে নামকরণ করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীন ন্যস্ত কার হয়।মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর ১৯৭৬ সনে এক্সাইজ এন্ড ট্যাক্সেশন ডিপার্টমেন্টকে পুনরায় পুনর্বিন্যাসকরণের মাধ্যমে নারকটিকস এন্ড লিকার পরিদপ্তর নামে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অধীন ন্যস্ত করা হয়। ১৯৮২ সনে কোডিন মিশ্রিত কফ সিরাপ, এ্যালকোহলযুক্ত কতিপয় হেলথ টনিক, ট্যাবলেট, সিরাপ ইত্যাদির উৎপাদন ও বিপণন নিষিদ্ধ করা হয়।

১৯৮৪ সনে আফিম ও মৃতসঞ্জীবনী সুরা নিষিদ্ধকরণ এবং ১৯৮৭ সানে গাঁজার চাষ বন্ধ ও ১৯৮৯ সনে সমস্ত গাঁজার দোকান তুলে দেয়া হয়।১৯৮৯ সন পর্যন্ত নারকটিকস এন্ড লিকার পরিদপ্তরের মূল লক্ষ্য ছিল দেশে উৎপাদিত মাদকদ্রব্য থেকে রাজস্ব আদায় করা।

আশির দশকে সারা বিশ্বে মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচার আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পায়। বাংলাদেশে এ সমস্যার মোকাবেলায় মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচার রোধ, মাদকের ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে গণসচেতনতার বিকাশ এবং মাদকাসক্তদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনকল্পে ১৯৮৯ সনের শেষের দিকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ, ১৯৮৯ জারী করা হয়।

অতঃপর ২ জানুয়ারী, ১৯৯০ তারিখে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ১৯৯০ প্রণয়ন করা হয় এবং নারকটিকস এন্ড লিকারের স্থলে একই বছর তৎকালীন রাষ্ট্রপতির সচিবালয়ের অধীন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা করা হয়। এরপর ৯ সেপ্টেম্বর ১৯৯১ তারিখ এ অধিদপ্তরকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণায়ের অধীন ন্যস্ত করা হয়।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর দেশে অবৈধ মাদকের প্রবাহ রোধ, ঔষধ ও অন্যান্য শিল্পে ব্যবহার্য বৈধ মাদকের শুল্ক আদায় সাপেক্ষে আমদানি, পরিবহন ও ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ, মাদকদ্রব্যের সঠিক পরীক্ষণ, মাদকাসক্তদের চিকিৎসা ও পুর্নবাসন নিশ্চিতকরণ, মাদকদ্রব্যের কুফল সম্পর্কে ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে নিরোধ কার্যক্রমের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন, জাতিসংঘসহ অন্যান্য আর্ন্তজাতিক সংস্থার সাথে নিবিড় কর্ম-সম্পর্ক তৈরির মাধ্যমে জাতীয় ও আর্ন্তজাতিকভাবে মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলে তারই ধারাবাহিকতায় মাদকের সঠিক ব্যবহার ও নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে ও যুবসমাজকে সঠিক ভাবে গড়ে তুলতে নিরন্তর পথচলা। 

আপনি আরও পড়তে পারেন