নান্দনিক পটুয়াখালীর লেবুখালী সেতু

নান্দনিক পটুয়াখালীর লেবুখালী সেতু

স্টাফ রিপোর্টার মোঃ

রিয়াজুর রহমান পটুয়াখালীঃ নতুন বছরের বর্তমান সরকারের আরেকটি সাফল্য হাতছানি দিচ্ছে। নান্দনিক নকশায় নির্মাণের শেষ পর্যায়ে পটুয়াখালীর পায়রা নদীর উপর নির্মাণাধীন লেবুখালী সেতু। স্বপ্নপূরন হতে যাচ্ছে দক্ষিনাঞ্চালবাসীর।


আসছে জুনের শেষ ভাগে যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয় হবে। ঢাকা-বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহা-সড়কের পায়রা নদীর উপর নির্মাণাধীন লেবুখালী সেতু। ঢাকা থেকে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর পর্যন্ত চালু হবে ফেরিবিহীন সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। পর্যটকদের কাছে আর্কষনীয় করতে নান্দনিক নকশায়এক্সট্রাডোজ ক্যাবল স্টেট পদ্ধতিতে। আগামী জুনের শেষ দিকে বহুল প্রত্যাশিত সেতুটি উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। এতে দেশের সড়ক যোগাযোগে নতুন মাইল ফলক স্থাপন করতে যাচ্ছে শেখ হাসিনার সরকার। বিগত দশকেও ঢাকা থেকে সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটা যেতে ৭টি ফেরী পার হতে হতো। ছিলো ভোগান্তি সময়ের অপচয়। দোয়ারিকা, শিকারপুর বরিশাল, পটুয়াখালী, কলাপাড়া, মহিপুর, এবং আলীপুর সেতু নির্মীত হলেও লেবুখালী ফেরিঘাটে বিড়াম্বনা সইতে হচ্ছে কুয়াকাটাগামী পর্যটক সহ দক্ষিনের মানুষের। যানবাহনের চাপে দিনের একটা সময় কেটে যায় ফেরিঘাটে। তবে সেই চিত্র আর থাকছে না নতুন বছরে। সড়ক যোগাযোগের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে যাচ্ছে। স্বপ্ন পূরন হতে যাচ্ছে দক্ষিনের মানুষের।


পায়রা নদীর উপর সেতু নির্মানের জন্য ২০১২ সালে একটি প্রকল্প প্রণয়ন করে সড়ক জনপথ মন্ত্রণালয়। ঐ বছরের ৮ই মে লেবুখালী সেতু নির্মাণের প্রকল্প একনেক থেকে অনুমোদন হয়। ২০১৩ সালে ১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেতুর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১৬ সালের ১৪ জুলাই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান চীনের লংজিয়ান রোড এ্যান্ড ব্রিজ কোম্পানী লিমিটেডকে সেতু নির্মানের কার্যাদেশ দেয় সড়ক ও জনপথ মন্ত্রণালয়। প্রকল্পে যৌথভাবে অর্থায়ন করে কুয়েত ফান্ড ফর আরব ইকোনোমিক ডেভেলপমেন্ট (কেএফএইডি) এবং ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ওএফএইডি)।

কার্যাদেশে প্রদানের সময় সেতুর প্রাক্কলন ছিলো ১২ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সেতু নির্মানের ব্যয় বেঢ়ে দাড়ায় ১২ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকা। প্রথম কার্যাদেশে মেয়াদ ছিলো ৩৩ মাস এর পর দুই দফা সময় বৃদ্ধি করে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। লেবুখালী সেতুর এ প্রকল্পের উপ-ব্যবস্থাপক কামরুল আহসান জানান ৮৪০ মিটার ভায়াডাক্ট এবং ৬৩০ মিটার মূল সেতুসহ লেবুখালী সেতুর মোট দের্ঘ্য ১ হাজার ৪৭০ মিটার একং প্রস্থ্য ১৯.৭৬ মিটার।

নদীর উত্তর প্রান্তে ৬১০ মিটার এবং দক্ষিনে ৮৫৮ মিটারসহ দুই পাশে মোট অ্যাপ্রোচ সড়ক ১ হাজার ২৬৮ মিটার। বিদায়ী বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত সেতুর প্রকল্পের মোট ৬৩ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে বক্স গার্ডার পদ্ধতিতে মূল সেতুর ৬৩০মিটারের মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে ৮০ ভাগ। ভায়াডাক্ট ৮৪০মিটারের মধ্যে সবটুকই সম্পন্ন হয়েছে। দ্ইু পাশে এ্যাপ্রোচ সড়কের কাজ সম্পন্ন হয়েছে প্রায় ৬০ ভাগ। বর্তমানে দিনরাত কাজ চলছে ১৮,১৯,ও ২০ নাম্বার পিলারের। বক্স গার্ডার নির্মাণে এই তিনটি পিলারের পাইলন টাওয়ার থেকে ছয়টি করে ক্যাবলে ঝুলে থাকবে মুল বক্স গার্ডার সেতু। মোট ৩১টি পিলারের উপর ৩২টি স্প্যানে দাড়িয়ে থাকবে সেতুটি। ভায়াডাক্ট আই গার্ডারের উপর ২৮ টি স্প্যান মুল এবং মূল সেতুর ৪ টি স্প্যানে হচ্ছে বক্স গার্ডার টাইপের। মুল সেতুর ১ম স্প্যান ১১৫ মিটার, ২য় স্প্যান ২০০ মিটার, ৩য় স্প্যান ২০০ মিটার এবং ৪র্থ স্প্যান ১১৫ মিটার দীর্ঘ।

এই সেতুতে স্থাপন করা ২০০ মিটার স্প্যান বাংলাদেশের আর কোন সেতুতে নেই। (পদ্মা সেতুতে সর্বোচ্চ ১৫০ মিটার দীর্গ স্প্যান বসানো হয়েছে)। মূল ৩টি (১৮,১৯, ও ২০ নম্বর) পিলার স্থাপন করা হয়েছে ভাটির সময় পানির স্থর থেকে ১৩০ মিটার দের্ঘ্য (৪২ তলা ভবনের সমান) নদীর তলদেশে। পদ্মা সেতুতে বসানো হয়েছে ১২০ মিটার পাইল।

সেতু প্রকল্প ব্যবস্থাপক আহমদ শরীফ সজীব জানায়, পর্যটনের কথা বিবেচনায় রেখে সেতুটি নির্মিত হচ্ছে চট্টগ্রামের শাহ আমানত সেতুর আদলে এক্সর্ট্রাডোজ ক্যাবল স্টেট পদ্ধতিতে নান্দনিক নকশায়। সৌর বিদ্যুৎ এর আলোয় রাতে নৈস্বর্গীক দূশের অবতারনা হবে সেতুটিতে। সড়ক ও জনপথ অধীদপ্তরের বরিশাল যোনের প্রধান প্রকৌশলী আবুহেনা মোঃ তারেক ইকবাল জানায় আগামী জুনের শেষ ভাবে যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে সেতুটি। এই সেতু উদ্ধোধন হলে ঢাকা থেকে পায়রা সমুদ্র বন্দর, পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা পর্যন্ত ফেরিবিহীন সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু হবে। যা হবে এই সরকারের নতুন মাইল ফলক এবং ইতিহাস হয়ে থাকবে।

আপনি আরও পড়তে পারেন