সরাইলে সেচের পানি সময় মতো না পাওয়ায় ৫০০০ একর জমিতে নষ্ট হচ্ছে ধানের চারা!

সরাইলে সেচের পানি সময় মতো না পাওয়ায় ৫০০০ একর জমিতে নষ্ট হচ্ছে ধানের চারা!

মো রিমন খান, সরাইল প্রতিনিধি।।

সেচের পানি সময় মতো না পাওয়ায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার পানিশ্বর ইউনিয়নে বিটঘর এলাকাসহ আশপাশের ফসলি মাঠে ইরি-বোরো রোপণ করা ৫০০০ একরের বেশি জমিতে নষ্ট হচ্ছে ধানের চারা।

আশুগঞ্জ-পলাশ এগ্রো ইরিগেশন প্রকল্পের পানি প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হওয়ায় এখানে কৃষি জমিতে সেচের একমাত্র ভরসা ‘জাফর খাল’ শুকিয়ে চৌচির। ফলে জমিতে সেচের পানির জন্য হাহাকার দেখা দিয়েছে। হাজার হাজার একর জমিতে রোপণ করা ধানের চারাগাছ মরে শুকিয়ে যাচ্ছে।

শনিবার (৬ জানুয়ারি) বিকেলে সরেজমিনে বিটঘর এলাকায় গেলে স্থানীয় ভুক্তভোগী কৃষকেরা জানান, ‘ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলা হতে সরাইল উপজেলার বিশ্বরোড মোড় এলাকা পর্যন্ত মহাসড়কের দুইপাশ সম্প্রসারণ ও চার লেনের কাজ দ্রুত গতিতে চলছে। মহাসড়কের পাশে অপরিকল্পিতভাবে বালু ফেলে খাল ভরাটে মহাসড়ক প্রশস্ত করতে গিয়ে আশুগঞ্জ-পলাশ এগ্রো ইরিগেশন প্রকল্পের পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে। এতে প্রতিবন্ধকতায় আশুগঞ্জ পলাশ এগ্রো ইরিগেশন প্রকল্পের পানি সরাইলের জাফর খালে প্রবেশ করতে পারছে না।

খাল এবং বিলে পানি না থাকার কারণে বিপাকে পড়েছেন এখানকার হাজারো কৃষক। খালসমূহে পানি না থাকায় চলতি ইরি মৌসুমের বাম্পার ফলন থেকে বঞ্চিত হওয়ার উপক্রম দেখা দিয়েছে এখানকার চাষিদের।’

বিটঘর এলাকার ভুক্তভোগী কৃষক হাজী আব্দুল কাইয়ূম বলেন, ‘আশুগঞ্জের সবুজ প্রকল্পের পানি ঢুকতে না পারায় এখানে জাফর খাল একেবারেই শুকনো; খালে পানি নেই। তাই জমিতে সেচ সংকট দেখা দিয়েছে। জমিতে রোপণ করা ধানের চারা মরে শুকিয়ে যাচ্ছে।’

কৃষক হাজী খোরশেদ মিয়া বলেন, ‘কৃষকও বাঁচতে হবে; উন্নয়নের জন্য মহাসড়কে চার লেনের রাস্তাও হতে হবে। সেই রাস্তার কাজের জন্য সবুজ প্রকল্পের পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টি হয়েছে; তাই জাফর খাল শুকিয়ে গেছে। সেচের অভাবে এখানে পাঁচ হাজার একর জমিতে ধানের চারা মরে নষ্ট হওয়ার পথে।’

ভুক্তভোগী কৃষক মো. হাকিম মিয়া বলেন, ‘আগামি দুদিনের মধ্যে এই জাফর খালে পানি না এলে; এলাকায় রোপন করা হাজার হাজার একর জমির ধানের চারা পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যাবে। ক্ষতিগ্রস্ত হাজারো কৃষককে রাস্তায় বসা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।’

বিটঘর এলাকায় সেচ প্রকল্পে দায়িত্বে থাকা একাধিক ব্যক্তি জানান, ‘কৃষকদের আক্রমনের ভয়ে তারা একরকম পালিয়ে থাকছেন ক’দিন ধরে। জাফর খালে পানি নেই, তাই তারা কৃষি জমিতে সেচ দিতে পারছেন না।’

বিটঘর এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য মোবারক আলী বলেন, ‘মহাসড়কে চার লেনের কাজে মাটি ভরাটে তাদের গাফিলতির কারনে এখানে জাফর খালে আশুগঞ্জ-পলাশ এগ্রো ইরিগেশন প্রকল্পের পানি ঢুকতে পারছেনা। এখানকার ফসলি মাঠগুলোতে ৫০০০ একরের বেশি জমিতে সেচ দেয়া যাচ্ছে না। পানির অভাবে এসব জমির ফসল নষ্ট হলে কিছু কিছু কৃষক ঋণের চাপে আত্মহত্যাও করতে পারে। তাই জরুরি ভিত্তিতে এখানে খালে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।’

এ বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষক সমিতি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও ‘কৃষক বাঁচাও দেশ বাঁচাও’ আন্দোলনের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার অন্যতম নেতা সাজিদুল ইসলাম বলেন, ‘সরাইলের সাম্প্রতিক সময়ে কৃষি জমিতে সেচের অভাব নিয়ে ক’দিন আগে উপজেলার শান্তিনগর এলাকায় এক সভা হয়েছিল। সেখানে শাহবাজপুর ও পানিশ্বর এলাকার সেচ সমস্যা নিয়ে সরাইল ইউএনও’র সঙ্গে আমাদের কথা হয়; তিনি আমাদের আশ্বাস দিয়েছিলেন আশুগঞ্জ-পলাশ এগ্রো ইরিগেশন প্রকল্পের পানি প্রবাহের প্রতিবন্ধকতা তিনি দূর করবেন এবং খালগুলোতে সেচের পানি সরবরাহ তিনি নিশ্চিত করবেন। কিন্তু দুঃখের বিষয়; কৃষকদের সমস্যা দূর করতে তিনি পুরোপুরি উদ্যোগ নেননি।

শনিবার সন্ধ্যার পর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে আশুগঞ্জ-পলাশ এগ্রো ইরিগেশন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মোঃ ওবায়েদ হোসেন বলেন, ‘মহাসড়কের চার লেনের কাজে পানি প্রবাহে তেমন বাধা সৃষ্টি হচ্ছে না। মহাসড়কের পাশে বালু ফেলা ও মেশিনে চাপানো কাজে পানি প্রবাহে কিছু সমস্যা মাঝেমধ্যে দেখা দিলেও আজ (শনিবার) সারাদিন আমি সেই এলাকাতেই ছিলাম। অনেক সমস্যার সমাধান দিয়ে এসেছি; আগামি দুইদিনের মধ্যে এ সমস্যার পুরোপুরি সমাধান দেবে বলে তারা আমাকে আশ্বাস দিয়েছেন। কৃষকদের সেচের সমস্যা থাকবে না; আমরা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুল হক মৃদুল বলেন, ‘মহাসড়কের চার লেনের কাজে সেচের পানি প্রবাহ বাধা সৃষ্টি হচ্ছে বলে আমার মনে হয় না। আশুগঞ্জ-পলাশ এগ্রো ইরিগেশন প্রকল্পের পানি বন্টন নিয়ে সরাইল কুট্টাপাড়া মোড় এলাকায় একটি বিষয় রয়েছে; তা স্থানীয় ভুক্তভোগী কয়েকজন কৃষক আমাকে জানিয়েছে। সেখানে শাহবাজপুর এলাকায় বেশি পরিমাণে সেচের পানি নিতে কয়েকজন লোক জাফর খালে পানি প্রবাহ বন্ধ করে রাখে। এতে জাফর খালে পানি ঢুকছে না; কৃষি জমিতে সেচের অভাব দেখা দিচ্ছে। এ সমস্যা সমাধানে আমি কাজ করছি; কিন্তু স্থানীয় সুফল ভোগী লোকেরাসহ জনপ্রতিনিধিরা যদি এ ক্ষেত্রে আমাকে সহযোগিতা করতো, তাহলে এ সমস্যার সমাধান দ্রুত সম্ভব হতো।

আপনি আরও পড়তে পারেন