দেশের ই-কমার্স এগিয়ে নিতে ব্যবসায়বান্ধব অনলাইন পেমেন্ট জরুরি : বাণিজ্যমন্ত্রী

দেশের ই-কমার্স এগিয়ে নিতে ব্যবসায়বান্ধব অনলাইন পেমেন্ট জরুরি : বাণিজ্যমন্ত্রী

দেশের ই-কমার্সকে এগিয়ে নিতে হলে অনলাইন পেমেন্টের বিকল্প নেই। আমাদের দেশে ই-কমার্স খাতটি যে খুব বেশি দিনের তা নয়। এর প্রসার ঘটেছে গত কয়েক বছরে। আর কোভিড-১৯ সময়ে এর প্রসার হয়েছে বেশি। একে ধরে রাখতে হবে। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি রেস্তোরাঁয় ‘ই-কমার্সের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় এসব কথা বলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এমপি।
ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ধামাকাশপিং ডটকম গোলটেবিল বৈঠকটির আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (মহাপরিচালক, ডাব্লিউটিও সেল) মো: হাফিজুর রহমান। গোলটেবিল বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ধামাকাশপিং ডটকমের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) সিরাজুল ইসলাম রানা। স্বাগত বক্তব্য দেন ধামাকাশপিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জসিমউদ্দিন চিশতী। গোলটেবিল বৈঠকটিতে সভাপতিত্ব করেন প্রফেসর ডা. এম. আলী।
টিপু মুনশি
মন্ত্রী, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এমপি বলেন, ‘আমাদের যে নীতিমালা তৈরি হচ্ছে সেটাকে একেবারে গ্রাহক ও ব্যবসায়বান্ধব করতে হলে অবশ্যই আলোচনা করতে হবে। সবাইকে নিয়ে কাজ করতে হবে। যত দ্রুত দেশে ই-কমার্সের প্রসার ঘটেছে, তত দ্রুত আমরা এর সাথে মানিয়ে নিতে পারিনি। সেটা করতে হবে। কোনো কিছু শুরু করতে গেলে প্রথমে তাতে কিছু সমস্যা হবে। ই-কমার্সেও এটা হয়েছে।’
আমাদের দেশের মনীষী রাজা রামমোহন রায় বলেছিলেন, বিপদ কখনো কখনো বড় সম্পদ হয়ে দাঁড়ায়। কোভিড-১৯ আমাদের ক্ষেত্রে সেটা হয়েছে। দেশের ই-কমার্স ২০২৫ সালের মধ্যে একটি ভালো অবস্থানে যাওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। করোনাকালে আমাদের প্রায় বেশির ভাগ খাতে বিপর্যয় এসেছে। কিন্তু কোনো কোনো খারাপ অবস্থার মধ্যেও সুযোগ তৈরি হয়। তেমনই তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সুযোগ তৈরি হয়েছে। আরো তিন বছর পর আমাদের যে লক্ষ্যে পৌঁছানোর কথা ছিল, সেটা কোভিডের ধাক্কায় এই ২০২০-২১ সালেই হয়ে গেছে।

ই-কমার্স থেকে গত কোরবানির ঈদে নিজে একটি গরু কিনেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমি ই-কমার্স থেকে নিজেও কিনেছি। প্রথমবার ছোটখাটো ভোগান্তি আমাকেও পোহাতে হয়েছে। তবে একটি কাজের শুরু হয়েছে। করোনা পরবর্তী সময়ে আমাদের নিজেদের নিরাপত্তার প্রয়োজনেই ই-কমার্সের পণ্য কেনার ক্ষেত্রে অনলাইন পেমেন্ট করতে হবে। এতে সরকার দ্রুত রাজস্ব পাওয়ার পাশাপাশি হাতে টাকার লেনদেন না হওয়ায় আমরা সবাই নিরাপদ থাকতে পারব।’
প্রফেসর ডা. এম. আলী
চেয়ারম্যান, ধামাকাশপিং ডটকম
গোলটেবিল বৈঠকটিতে সভাপতিত্ব করেন প্রফেসর ডা. এম. আলী। তিনি তার বক্তব্যে ই-কমার্সের মাধ্যমে আমাদের আরো নতুন উদ্যোক্তা তৈরির লক্ষ্যে কাজ করতে সবাইকে আহ্বান জানান।
জসিমউদ্দিন চিশতী
ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ধামাকাশপিং ডটকম
গোলটেবিল বৈঠকে স্বাগত বক্তব্যে ধামাকাশপিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জেএমডি জসিমউদ্দিন চিশতী বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন থেকেই ডিজিটাল বিজনেসের সাথে আছি। সেই জায়গা থেকে মনে হয়েছে দেশে ই-কমার্স নিয়ে কাজ করতে হবে। সেই দায়িত্ববোধ থেকেই ধামাকার শুরু। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই ই-কমার্স ভালো অবস্থানে আসুক। তাই পণ্য ডেলিভারির ক্ষেত্রে আমরা সঠিক সময়ের মধ্যেই গ্রাহকের হাতে পৌঁছে দিতে পারি। তাই নির্দিষ্ট স্টক থাকা সাপেক্ষেই আমরা অর্ডার নিয়ে তা ডেলিভারি করছি। স্টকে নেই এমন পণ্য অর্ডার নেই না।’
সিরাজুল ইসলাম রানা
সিওও, ধামাকাশপিং ডটকম
গোলটেবিল বৈঠকে দেশের ই-কমার্সের সার্বিক অবস্থার চিত্র তুলে ধরেন ধামাকাশপিং ডটকমের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) সিরাজুল ইসলাম রানা। তার উপস্থাপনায় দেশে বর্তমানে ই-কমার্স কোন অবস্থায় আছে, কয়েক বছর আগে কোন অবস্থায় ছিল, ক্রেতা বৃদ্ধির পরিমাণ, সমস্যা, ই-কমার্স নীতিমালার ওপর আলোকপাত করেন।
মূল প্রবন্ধে সিরাজুল ইসলাম রানা ধামাকাশপিং ডটকমের যাত্রা, কয়েক মাসের মধ্যেই দেশে তার অবস্থান, ক্রেতা বৃদ্ধির পরিমাণ, অর্ডার, সফলভাবে ডেলিভারি, স্টার্টআপ হিসেবে তাদের কাজের স্বীকৃতির পুরস্কারসহ বিভিন্ন বিষয়ও উপস্থাপন করেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা শুরু থেকেই একটা বিষয় মাথায় রেখেছি, সেটি হলো গ্রাহকদের সঠিক সময়ে পণ্য ডেলিভারি দেয়া। সেটা সম্ভব হয়েছে। আমরা চাই দেশের ই-কমার্স ব্যবস্থা ও গ্রাহকদের কেনাকাটার ধারণাকে ধামাকার মাধ্যমে বদলে দিতে।’
মো: হাফিজুর রহমান
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (মহাপরিচালক, ডাব্লিউটিও সেল) মো: হাফিজুর রহমান বলেন, ‘কোভিড-১৯ সময়ে আমরা চেষ্টা করেছি ই-কমার্সকে সক্রিয় করার। সে সময় মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছিল না, তখন আমরা চেষ্টা করেছি মানুষের হাতে পণ্য পৌঁছে দিতে। সে সময় বেসরকারি বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন, বিশেষ করে ই-ক্যাব আমাদের সাথে ছিল।’
তিনি বলেন, ‘পেমেন্ট, ডেলিভারি, ইন্টারনেট, ভোক্তার স্বার্থ বা ট্রাস্ট এসব নির্ভর করে ই-কমার্সের ভবিষ্যৎ কী হবে। আমাদের প্রশ্ন আছে, আমরা সিওডিতে যাব নাকি অনলাইন। কিন্তু ই-কমার্স মানেই অনলাইন পেমেন্ট। আমাদের পরিস্থিতি এমন, ভোক্তারা কোনোভাবেই আস্থা রাখতে পারেন না। তাই অনলাইন পেমেন্ট করা একটা সমস্যা হচ্ছে। এসব থেকে বের হতে সবাইকে কাজ করতে হবে।’
শাহাব উদ্দিন
ই-ক্যাবের ভাইস-প্রেসিডেন্ট
ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ই-ক্যাবের ভাইস-প্রেসিডেন্ট শাহাব উদ্দিন বলেন, ‘আমরা সবসময় কাজ করি প্রতিষ্ঠান ও গ্রাহকের সন্তুষ্টি নিয়ে। এ জন্য প্রতারণা থেকে মুক্ত করতে ই-ক্যাব কাজ করছে। আর প্রতারণা ঠেকাতে ক্রেতাদের সচেতন করাও জরুরি।’
সিরাজুল ইসলাম
কর্পোরেট সেলস এর পরিচালক, ওয়াালটন
সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘দেশে ই-কমার্সই ভবিষ্যৎ। আমরাও চাই ই-কমার্সের প্রসার হোক। মানুষ আস্থা নিয়ে পণ্য কিনুক। সেই আস্থা অর্জনে আমাদের সবাইকে কাজ করা দরকার।’
বিপ্লব ঘোষ রাহুল
সিইও, ইকুরিয়ার
বিপ্লব ঘোষ রাহুল বলেন, পুরো ই-কমার্সকে এগিয়ে নিতে হলে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ও লজিস্টিকস একসঙ্গে কাজ করতে হবে। লজিস্টিকস একেবারে শেষ ধাপ। আমরা যদি পণ্য ঠিক সময়ে পাই তাহলে আমাদের লজিস্টিকস টিম সেটা সঠিক সময়ে পৌঁছে দিতে পারবে।
এ ছাড়াও গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন ই-ক্যাব ডিরেক্টর আসিফ আহনাফ সহ ধামাকাশপিংয়ের কর্মকর্তাবৃন্দ।

আপনি আরও পড়তে পারেন