বশেমুরবিপ্রবি ভেটেরিনারি শিক্ষার্থীদের ভাবনা ও প্রত্যাশা

বশেমুরবিপ্রবি ভেটেরিনারি শিক্ষার্থীদের ভাবনা ও প্রত্যাশা

মোঃবাবর আলী 

বশেমুরবিপ্রবি প্রতিনিধি 

প্রতি বৎসর বিভিন্ন দিনে বিশ্বব্যাপী নানা “দিবস” পালিত হয়। প্রতিটি দিবসেই ‘প্রতিপাদ্য বিষয়’ নির্ধারণ করা হয় যা দিবসটির ভূমিকাকে সর্বসমক্ষে আরো গুরুত্ব ও অর্থবহ করে তোলে।  তেমনিই বিশ্ব ভেটেরিনারি দিবস অন্যতম। বিশ্ব ভেটেরিনারি দিবস, সারা বিশ্বের প্রানিসেবায় কর্মরত ভেটেরিনারিয়ানদের জন্য একটি বিশেষ দিন। প্রতি বছর এপ্রিল মাসের শেষ শনিবার সারা বিশ্বে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয় এ  দিবসটি। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয়:Veterinarian response to the Covid-19 crisis.

ওয়ার্ল্ড ভেটেরিনারি এসোসিয়েশন(WVA) ও   ওয়ার্ল্ড অরগানাইজেশন ফর এনিমেল হেলথ ( OIE ) ২০০১ সাল থেকে প্রতি বছরের এপ্রিল মাসের শেষ শনিবার  বিশ্ব ভেটেরিনারি দিবস পালন  শুরু করলেও দেশে প্রথম ২০০৮ সালে দি ভেট এক্সিকিঊটিভ আয়োজন করে এই দিবসটি।তবে বর্তমানে কেন্দ্রিয়ভাবে বাংলাদেশ ভেটেরিনারি এসোসিয়েশন (বিভিএ), দি ভেট এক্সিকিউটিভ, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ ভেটেরিনারি স্টুডেন্টস ফেডারেশন (বিভিএসএফ), সারাদেশের ভেটেরিনারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (বিশ্ববিদ্যালয়,কলেজ) দিনটিকে সাফল্যমণ্ডিত করতে বিভিন্ন কর্মসুচি গ্রহন করে থাকে। । কর্মসুচির মধ্যে বর্ন্যাঢ্য শোভাযাত্রা, সেমিনার, বিনামুল্যে প্রাণি সেবা ক্যাম্পেইন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। 

দিবসটি উপলক্ষে   বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের  লাইভস্টক সাইন্স এন্ড ভেটেরিনারি মেডিসিন বিভাগের কয়েকজন  শিক্ষার্থীর ভাবনা ও মতামত তুলে ধরেছেন  আমাদের বশেমুরবিপ্রবি  বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মোঃবাবর আলী। 

সানজিদা বারী ঊষা, এল.ভি.এম,৩য় বর্ষ 

করোনা মহামারির এই দুর্যোগময় পরিস্থিতিতে ঘরে থেকে সবাইকে বিশ্ব ভেটেরিনারি  দিবস, ২০২১ এর আন্তরিক শুভেচ্ছা। এই করোনাভাইরাস মহামারির পরিস্থিতিতে  ভেটেরিনারিয়ানদের অবদান অনস্বীকার্য। করোনা থেকে রক্ষা পেতে হলে আমাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে হবে।শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে হলে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় দুধ, ডিম বা মাংস রাখতে হবে। এই দুর্যোগের মধ্যেও দুধ, ডিম ও মাংস উৎপাদনের লক্ষ্যে, প্রাণির স্বাস্থ্যসেবা, খাদ্য ও চিকিৎসার স্বার্থে মাঠ পর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছে ভেটেরিনারিয়ানরা।এছাড়া প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর এর সহযোগিতায় দেশের মানুষের প্রাণীজ আমিষের চাহিদা পূরণে ভ্রাম্যমাণ গাড়ির মাধ্যমে দুধ, ডিম, মাংস ভোক্তার দোরগোড়ায় পৌঁছে দিচ্ছেন ভেটেরিনারিয়ানরা।করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ ও ভ্যাকসিন আবিষ্কারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন এবং এখন ও কাজ করে যাচ্ছে  ভেটেরিনারিয়ানরা।মাঠ পর্যায়ে কাজ করার সময় অনেক ভেটেরিনারিয়ান করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এবং অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক, তারপরও তারা ফ্রন্টলাইনে থেকে দেশের জন্য প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছেন। একজন ভেটেরিনারি শিক্ষার্থী হিসেবে সরকারের কাছে জোর দাবি জানায় যে, ভেটেরিনারি  পেশাকে জরুরি সেবার অন্তর্ভুক্ত করা হোক এবং তাদের প্রয়োজনীয় সকল  সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হোক । আজকের এই দিনে শ্রদ্ধা ও সম্মান জানাই সেইসব ভেটেরিনারিয়ানদের প্রতি  যারা মানুষের প্রয়োজনে জীবন বাজি রেখে কাজ করে যাচ্ছেন। পরিশেষে, বিশ্ব ভেটেরিনারি দিবস, ২০২১ এর সফলতা কামনা করছি।

মোঃহাবিবুল্লাহ, এল.ভি.এম,৩য় বর্ষ

আজ বিশ্ব ভেটেরিনারি দিবস। সারা বিশ্বের ভেটেরিনারিয়ানদের জন্য একটি বিশেষ দিন।২০০১ সালে বিশ্ব ভেটেরিনারি এসোসিয়েশন, ভেটেরিনারি পেশার সাথে কর্মরত সকল ভেটেরিনারিয়ানদের জন্য একটি বিশেষ দিন আয়োজনের প্রস্তাব করেন,যা “বিশ্ব  ভেটেরিনারি দিবস” নামে পরিচিত। এর মুল লক্ষ্য হলো ভেটেরিনারি পেশাকে সারা বিশ্বের মানুষের কাছে পৌছে দেওয়া এবং প্রাণি ও মানুষের উন্নয়নে কাজ করা, পরিবেশের উন্নয়ন,খাদ্য নিরাপত্তা এবং প্রাণি পরিবহন ও কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিতকরনে ভুমিকা রাখা। প্রতি বছর এপ্রিল মাসের শেষ শনিবার সারা বিশ্বে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয়।এবারের প্রতিপাদ্য বিষয়; “veterinarians response to the covid-19 crisis”

আমাদের দেশে প্রথম ২০০৮ সালে দি ভেট দি এক্সিকিঊটিভ আয়োজন করে এই দিবসটি। বর্তমানে কেন্দ্রিয়ভাবে বাংলাদেশ ভেটেরিনারি এসোসিয়েশন (বিভিএ), দি ভেট এক্সিকিউটিভ, প্রানিসম্পদ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ ভেটেরিনারি স্টুডেন্টস ফেডারেশন (বিভিএসএফ),ভেটেরিনারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান( বিশ্ববিদ্যালয়,কলেজ) দিনটিকে সাফল্যমণ্ডিত করতে নানা আয়োজনের করে থাকে।

বিশ্ব আজ covid-19 নামক মহামারিতে আক্রান্ত।কিন্তু মানুষ ও প্রাণির স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ভেটেরিনারিয়ানদের গুরুত্ব ও অবদান অতুলনীয়।বাংলার গর্ব ও অহংকার ভেটেরিনারিয়ান ও বিজ্ঞানী ড. বিজন কুমার শীলের Covid-19 টেস্ট কিট উদ্ভাবন।দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে সল্প মুল্যে ও দ্রত পরীক্ষা পদ্বতি উদ্ভাবন শুধু দেশের নয়,সারাবিশ্বের জন্য একটা মাইলফলক। মানুষের আমিষের চাহিদা পূরণে ও covid-19 আক্রান্ত ব্যক্তির ইমিউনিটি ডেভেলপ এর জন্য দুধ,ডিম ও মাংসের ভূমিকা পালন করে,যা উৎপাদনে ও মানুষের সহজলভ্যে ভেটেরিনারিয়ানরা নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। প্রাণির স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতকরণে,দক্ষ ও যুগ্য ভেটেরিনারি ডাক্তারের মাধ্যমে অনলাইনভিত্তিক ফ্রি চিকিৎসা এবং বিভিন্ন জেলা ভেটেরিনারি স্টুডেন্ট এসোসিয়েশনের ফ্রি ক্যাম্পেইন। তাছাড়া ভেটেরিনারি সেবা ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে জুম মিটিংএ গঠনমূলক অলোচনার মাধ্যমে যথাযত প্রদক্ষেপ গ্রহন। অনলাইনভিত্তিক সচেতনমূলক প্রতিবেদন প্রকাশ।নিজেদের করোনা ঝুকির মধ্যেও তারা নিজেদের পর্যাপ্ত সুবিধার অভাব এর পরও নিজের দায়িত্ববোধ ও পেশার প্রতি ভালোবাসা থেকে কাজ করে যাচ্ছেন ও ভবিষ্যতেও করবেন।

মোঃশফিকুল ইসলাম, এল.ভি.এম,২য় বর্ষ

প্রতি বছর এপ্রিল মাসের শেষ  শনিবার সারা বিশ্বে যথাযথ মর্যাদায় ভেটেরিনারি দিবস টি পালিত হয়।সারা বিশ্বে ভেটেরিনারিয়ান দের জন্য এটি একটি বিশেষ দিন।সারা বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ২০০৮ সালে দি ভেট এক্সিকিউটিভ এ দিবসটির আয়োজন করে।ততকালীন দি ভেট এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি ও বর্তমান বাংলাদেশ ভেটেরিনারি এসোসিয়েশনের(BVA)মহাসচিব কৃষিবিদ ড.মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান মোল্লা ভাইয়ের প্রচেষ্টায় বাংলাদেশে ভেটেরিনারি দিবস টি পালন শুরু হয়। সারা বিশ্বে ভেটেরিনারিয়ান দের গুরুত্ব অপরসীম।বর্তমানে সারা বিশ্বকে  কোভিড-১৯ নামক মহামারী গ্রাস করে ফেলেছে।কোভিড-১৯ মোকাবেলায় ভেটেরিনারিয়ান দের গুরুত্ব অতুলনীয়। ভেটেরিনারিয়ান ডাক্তার আলবার্ট বোরোলা ফাইজারের কোভিড ভ্যাক্সিন আবিষ্কারক টিমের প্রধান।আমাদের বাংলাদেশের ভেটেরিনারিয়ান দের গর্ব ড. বিজন কুমার শীল বাংলাদেশে সর্বপ্রথম স্বল্পমূল্যে কোভিড টেস্ট কিড আবিষ্কার করেন। কোভিড-১৯ মোকাবিলায় গত ২১ শে এপ্রিল বাগেরহাট ভেটেরিনারি স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাস্ক বিতরণ কর্মসূচি পালন করে। এভাবে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভেটেরিনারিয়ানিরা মানুষের সেবা করে যাচ্ছে। ভেটেরিনারি পেশাকে সারা বিশ্বের মানুষের কাছে পৌছে দেওয়া, প্রানীর স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করন,খাদ্য নিরাপত্তা, পরিবেশের উন্নয়ন,, প্রানী পরিবহন ও কোয়ারেন্টাইন এবং মানুষের উন্নয়নে কাজ করাই হলো ভেটেরিনারিয়ান দের একমাত্র উদ্দেশ্য। এই উদ্দেশ্য গুলোকে সুদক্ষের সাথে বাস্তবায়ন করে ভেটেরিনারিয়ানরা সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রানীসম্পদ অধিদপ্তর থেকে ভ্রাম্যমান দুধ,ডিম,মাংস বিক্রয় কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে যা মানুষের আমিষের চাহিদা মেটাতে সহজলভ্য হবে এবং খামারিরা ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পাবে। তাই আমরা বলতে চাই সারা বিশ্বে ভেটেরিনারি সেবা একটি জরুরি সেবা।

সর্বশেষে বিশ্ব ভেটেরিনারি দিবস ২০২১ সফল ও সার্থক হোক, এই প্রত্যাশা করি।

সামিয়া জামান,এল.ভি.এম,১ম বর্ষ

 2021 সালে বিশ্ব ভেটেরিনারি দিবসটি অনেকটা অন্যরকম ভাবে পালন করা হচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশে করোনার ভয়াবহ প্রকোপের জন্য 2020 সালে বিশ্ব ভেটেরিনারি দিবসটি ভার্চুয়ালি পালন করা হয়েছে। এবছর কোন উন্নতি না হওয়ায় আমাদেরকে এবছর সশরীরে বিশ্ব ভেটেরিনারি দিবস পালন করার সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে না। সার্বিক দিক পরিকল্পনা করে যেহেতু আর কোনো সুযোগ নেই সেক্ষেত্রে আমরা ভার্চুয়ালি ভেটেরিনারি দিবসটি পালন করতে পারি।  এক্ষেত্রে আমরা ভার্চুয়াল মিডিয়াগুলোকে ব্যবহার করতে পারি। প্রকৃতপক্ষে এই দিনটি পশুদের স্বাস্থ্য ও কল্যাণ এর প্রচার করার জন্য পালন করা হয় এমনকি প্রাণী এবং মানুষের পরস্পর সংযুক্ত জীবনযাপনের উপলব্ধির উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করা হয়। বিভিন্ন অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে আমরা এ কাজগুলো করে থাকতে পারি। এই এসোসিয়েশন গুলির ক্রিয়া গুলি মূলত জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব প্রাকৃতিক সম্পদের দায়বদ্ধ ও বুদ্ধিমান ব্যবহার এবং ওষুধের যথাযত নিষ্পত্তি নিশ্চিতকরণের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। এই মুহূর্তে আমরা  ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এবং আমাদের পরিবেশ সুরক্ষার সাথে সম্পর্কিত নতুন গবেষণা গুলি আলোচনা এবং জ্ঞান  ভাগ করে নেওয়ার জন্য  অনলাইনে বিভিন্ন সভা এবং সেমিনারের আয়োজন করতে পারি। তাছাড়া এই দিনে আমরা ফ্রী টেলিমেডিসিন সেবা দিয়ে থাকতে পারি। এক্ষেত্রে অনেক খামারি উপকৃত হবে এবং আমাদের পেশার মানুষের পরিচিতি অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে। দুঃখজনক হলেও এটি সত্যি যে,আমাদের দেশে এখনো পর্যন্ত ভেটেরিনারি ডাক্তার সম্পর্কে মানুষ সঠিকভাবে  অবগত নয়। 24 শে এপ্রিল কে কেন্দ্র করে আমরা প্রচার-প্রচারণা টা সুচারুরূপে করতে পারি। যা আমাদের পেশার প্রচারের জন্য অধিক ফলপ্রসূ।সর্বোপরি, বেঁচে থাকতে সবার ইচ্ছা হয় হোক সে মানুষ  কিংবা সে পশুপাখি বা যে কোন প্রাণী তাদের জীবন আছে তাদেরও বাঁচতে ইচ্ছা করে মানুষের মতন, মানুষ যখন  অসুস্থ হইলে যেমন  বলতে পারে তাদের অসুবিধার কথা কষ্টের কথা যন্ত্রণার কথা বেদনার কথা, ঠিক তেমনি পশুপাখিরা প্রাণীরা কখনো বলতে পারে না। তারা অনেক কষ্ট পায়, সুতরাং আসুন আপনারা, সবাই একসাথে এই প্রাণীদের নিয়ে কাজ করি তাদের কষ্ট ভাগাভাগি করে নিই। তাদের পাশে দাঁড়িয়ে মহান মানবতার পরিচয় দিই। জয় হোক বিশ্ব ভেটেরিনারি  দিবস।

আপনি আরও পড়তে পারেন