ভৈরব নদে সরাসরি পড়ছে দু’পাড়ের ভবনের পয়ঃবর্জ্য

ভৈরব নদে সরাসরি পড়ছে দু’পাড়ের ভবনের পয়ঃবর্জ্য

যশোর শহরের অংশে স্রোতহীন ভৈরব নদে পড়ছে দু’পাড়ের ভবনের পয়ঃবর্জ্য। সেই সঙ্গে প্লাস্টিক, পলিথিন, আবর্জনা আর কচুরিপানার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে নদটি।

সম্প্রতি নদ খনন শুরু হলেও সুফল মেলেনি। বহুতল ভবনের সঙ্গে নতুন নতুন পাইপজুড়ে নদেই ফেলা হচ্ছে পয়ঃদ্রব্য। পানি দূষণে বদলে গেছে নদের চেহারা। চোখের সামনেই নদেও এ করুণ পরিণত হলেও যেন দেখার কেউ নেই।

যদিও পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, নদের সঙ্গে দুই পাড়ের ভবনের স্যুয়ারেজ লাইন বন্ধে পৌরসভার মেয়রকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি ব্যবস্থা নেবেন। তার কথা না শুনলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর মেয়র বলছেন, দ্রুত উচ্ছেদ করা হবে।

জানা যায়, ২০১৬ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ড ২৭২ কোটি টাকা ব্যয়ে পাঁচ বছর মেয়াদী ‘ভৈরব রিভার বেসিন এলাকার জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ও টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন প্রকল্প’গ্রহণ করে। এ প্রকল্পের আওতায় ৯২ কিলোমিটার নদ খনন করা হচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যানুযায়ী, ইতিমধ্যে নদের উজান ও ভাটির ৭০ কিলোমিটারের বেশি কাজ প্রায় শেষ হয়েছে।

শহরের দড়াটানা অংশের খনন কাজ চলমান রয়েছে। নদের প্রাণ ফিরিয়ে আনার জন্য এই প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। তবে দখল, দূষণের কারণে সেই সুফল মিলছে না।

সরেজমিনের দেখা যায়, শহরের দড়াটানা ব্রিজসংলগ্ন এলাকায় ভৈরব নদ খনন কাজ চলমান রয়েছে। খনন সম্পন্ন পাড়ের সঙ্গে দুই পাড়ের স্থাপনার সঙ্গে নতুন নতুন পাইপজুড়ে দেওয়া হয়েছে। ওই পাইপ দিয়ে নদে এসে পড়ছে ময়লা পানি।

অধিকাংশ ভবনের স্যুয়ারেজ লাইন সরাসরি নদীর সঙ্গে। ফলে সব মানব বর্জ্য নদীতে এসে পড়ছে। এতে নদের পানির দূষিত হচ্ছে। কাঠেরপুল সংলগ্ন এলাকায় স্যুয়ারেজ লাইনের পাশাপাশি নদে ফেলা হচ্ছে ময়লা আবর্জনা।

গরুর মাংসের দোকানের যাবতীয় বর্জ্য নদে ফেলায় ওই এলাকায় দুর্গন্ধ লেগেই থাকে। পথচারীদের চলাচল দুষ্কর হয়ে পড়ে। পানি ও বায়ু দূষণ বাড়ছেই।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা জনউদ্যোগের সদস্য ও সিনিয়র সাংবাদিক রুকুনউদ্দৌলাহ বলেন, প্রতিটি ক্ষেত্রেই নাগরিক হিসেবে আমাদের সচেতনতার সংকট রয়েছে। সব দায় তো রাষ্ট্রের নয়। নাগরিক হিসেবেও আমাদের কিছু দায়িত্ব আছে। নাগরিক হিসেবে সেই দায়িত্ব পালনে উদাসীন।
ভৈরব নদের পাড়ের প্রায় সব ভবনের স্যুয়ারেজ লাইন ড্রেনের ভিতর দিয়ে নদের সঙ্গে সংযুক্ত। সরাসরি মলমূত্র নদে গিয়ে পড়ছে। এতে পানি দূষিত হচ্ছে। যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পৌর কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

এ প্রসঙ্গে পানি উন্নয়ন বোর্ড যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. তাওহিদুল ইসলাম বলেন, শহরের দড়াটানা অংশে নদের দুই পাড়ের অধিকাংশ ভবনের নিজস্ব স্যুয়ারেজ লাইন (পয়ঃনিষ্কাশন) নেই। তারা সরাসরি নদে সঙ্গে সংযোগ করে দিয়েছে। এতে নদের পানি দূষিত হচ্ছে। এটা তারা করতে পারে না। গত মাসে জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায় এ বিষয়টি উত্থাপন করেছি।

সভায় আলোচনা হয়েছে। মেয়র এ বিষয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি পদক্ষেপ নেবেন। তার কথা না শুনলে ভবন মালিকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে যশোর পৌরসভার মেয়র হায়দার গণী খান পলাশ বলেন, নদের সঙ্গে সংযুক্ত দু’পাড়ের ভবনের স্যুয়ারেজ লাইন উচ্ছেদ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ইতিমধ্যে ভবন মালিকদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহযোগিতায় দ্রুত এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হবে।

আপনি আরও পড়তে পারেন