অভিষেক অনুষ্ঠানে ইরানকে নিষেধাজ্ঞামুক্ত করার অঙ্গীকার রাইসির

ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে অভিষিক্ত হয়েছেন ইব্রাহিম রাইসি। মঙ্গলবার তাকে ইরানের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনের আনুষ্ঠানিক অনুমোদন দিয়েছেন দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি।

ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনে এই অভিষেক অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচারিত হয়। এ উপলক্ষ্যে দেওয়া ভাষণে রাইসি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ওপর যেসব ‘নিপীড়নমূলক’ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, সেসব  থেকে দেশকে মুক্ত করাই হবে প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার প্রথম কাজ।

রাজধানী তেহরানে অনুষ্ঠিত সেই অনুষ্ঠানে রাইসি বলন, ‘যুক্তরাষ্ট্র যেসব নিপীড়নমূলক নিষেধাজ্ঞা ইরানের ওপর আরোপ করেছে, তা থেকে অবশ্যই আমরা দেশকে মুক্ত করব।’

‘তবে এ জন্য জনগণের জীবনযাত্রা ও অর্থনীতিকে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত করব না এবং বিদেশীদের ইচ্ছেমতোও আমরা চলব না।’

২০১৫ সালে পরমাণু প্রকল্প নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক যে চুক্তি যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের ছয় পরাশক্তি দেশের সঙ্গে স্বাক্ষর করেছিল ইরান, ২০১৭ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে নেওয়ায় গত প্রায় তিন বছর ধরে অকার্যকর অবস্থায় ছিল সেই চুক্তি।

জো বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার পর আবার সেই চুক্তি পুনরুজ্জীবিত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। চুক্তিতে স্বাক্ষকরকারী অন্যান্য দেশসমূহ হলো – যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স, রাশিয়া ও চীন।

চলতি বছর এপ্রিল থেকে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় চুক্তি কার্যকর বিষয়ক কয়েকদফা বৈঠক করেছে স্বাক্ষরকারী দেশসমূহের প্রতিনিধিরা। সর্বশেষ বৈঠকটি হয়েছে ২০ জুন, তবে এখন পর্যন্ত ইতিবাচক বা নেতিবাচক কোনো ফল এসব বৈঠক থেকে আসেনি।

ইরান বরাবরই বলে আসছে পারমাণবিক অস্ত্র প্রস্তুত বিষয়ক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে দেশটি কখনওই যুক্ত ছিল না। অন্যদিকে, স্বাক্ষরকারী অন্যান্য দেশের প্রতিনিধিরা বলেছেন, ২০১৭ সালে চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্র বেরিয়ে যাওয়ার পর দীর্ঘদিন ধরে যেসব শূন্যস্থান তৈরি হয়েছে, তা পুরণ করাই এখন সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ।

গত জুনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে রাইসি ৬১ দশমিক ৯৫ শতাংশ ভোট পেয়ে ইরানের প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হন রাইসি। দেশটির সংবিধান অনুযায়ী, দুই মেয়াদের বেশি ক্ষমতায় থাকার নিয়ম নেই। তাই হাসান রুহানি নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন নি। মঙ্গলবার রাইসির দায়িত্ব পাওয়ার মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্ট রুহানির ক্ষমতার অবসান হল।

রাইসি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পরই ইরানের পরমাণু চুক্তি নিয়ে তার অবস্থান স্পষ্ট করে বলেছিলেন, ২০১৫ সালের ওই চুক্তি পুনরুজ্জীবিত করতে বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনাকে তিনি ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন, তবে আলোচনায় অবশ্যই ইরানের জাতীয় স্বার্থ রক্ষার নিশ্চয়তা থাকতে হবে।

এদিকে, ইরানের বিচার বিভাগের সাবেক প্রধান নির্বাহী রাইসি দেশের প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর তার বিরুদ্ধে বিচারকের পদে আসীন থাকার সময় মানবাধিকার লঙ্ঘণের অভিযোগ এনেছিল যুক্তরাষ্ট্র। এ অভিযোগে তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে দেশটি এবং এখনও তা বহাল আছে।

 

 

আপনি আরও পড়তে পারেন