আশরাফ গনি কি কাপুরুষতার পরিচয় দিয়েছেন?

আশরাফ গনি কি কাপুরুষতার পরিচয় দিয়েছেন?

দীর্ঘ দুই দশক পর ফের আফগানিস্তানের ক্ষমতা কেন্দ্রে চলে এসেছে তালেবান। রোববার (১৫ আগস্ট) গোষ্ঠীটির যোদ্ধারা আফগান রাজধানী কাবুল দখলে নেয়। পদত্যাগ করে মন্ত্রিপরিষদের বেশ কিছু সদস্যকে নিয়ে রাতেই দেশ ছাড়েন দেশটির প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি। আর এতেই প্রশ্ন উঠেছে যে, আশরাফ গনি কি কাপুরুষতার পরিচয় দিয়েছেন? প্রশ্ন উঠেছে তার দেশপ্রেম নিয়েও।

রোববার তালেবান যোদ্ধারা কাবুল দখলে নেওয়ার পর রাতে আশরাফ গনির দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়। নিজের ফেসবুক পেইজে আফগানিস্তানের হাই কাউন্সিল ফর ন্যাশনাল রিকনসিলিয়েশন’র চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আবদুল্লাহ জানান, ‘দেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট (আশরাফ গনি) আফগানিস্তান ছেড়েছেন।… জাতিকে তিনি এই পরিস্থিতিতে ছেড়ে গেছেন। এর জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে অবশ্যই তাকে জবাব দিতে হবে।’

আফগানিস্তানের একজন নারী অধিকারকর্মী কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরাকে বলেন, আশরাফ গনি চলে গেছেন, কিন্তু ৩৮ মিলিয়ন মানুষ এখনও আফগানিস্তানে রয়ে গেছে।

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় একটি প্রদেশের একজন রাজনীতিক আশরাফ গনির দেশ ছেড়ে এই চলে যাওয়াকে ‘অসম্মানজনক’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি অভিযোগ করেন, আশরাফ গনি পুরোটা সময়জুড়ে আফগান মানুষের সঙ্গে মিথ্যা কথা বলেছেন এবং বাস্তব চিত্র সামনে আনা থেকে সাধারণ মানুষকে অন্ধকারে রেখেছিলেন।

উদাহরণ হিসেবে ওই রাজনীতিক গত শনিবার প্রচারিত আশরাফ গনির বক্তব্যের কথা সামনে আনেন। আগে থেকে রেকর্ডিং করে রাখা ওই বক্তব্যে অস্থিতিশীলতা, সহিংসতা এবং সাধারণ মানুষকে ঘরবাড়ি থেকে উচ্ছেদ বন্ধের অঙ্গীকার করেছিলেন গনি। কিন্তু তার এই বক্তব্য প্রচারের কয়েক ঘণ্টা পরই আফগানিস্তানের অন্যতম বড় দু’টি শহর- জালালাবাদ ও মাজার-ই-শরীফের পতন হয়।

আলজাজিরা বলছে, মাস দুয়েক আগে যখন বিভিন্ন আফগান জেলা ও পরে প্রাদেশিক অঞ্চলগুলো তালেবানের হাতে পতন হচ্ছিল, তখনই আশরাফ গনির মিথ্যা বক্তব্য বা সত্য গোপন করার মতো বিষয়গুলো প্রকাশ হতে শুরু করে।

আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলীয় বালখ প্রদেশের সাবেক ক্ষমতাধর আফগান কমান্ডার ছিলেন আত্তা মোহাম্মদ নুর। আশরাফ গনির দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে রোববার আফগান সরকারকে তিনি ‘বড় সংগঠিত এবং কাপুরুষ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

দীর্ঘ সময় ধরে আশরাফ গনির সমালোচক হিসেবে পরিচিত নুর বলছেন, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে তালেবানের হাতে বিভিন্ন জেলা ও প্রদেশগুলো পতনের ঘটনা হয়তো গোপন কোনো পরিকল্পনার অংশ হতে পারে এবং সরকার সেটা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে গোপন রেখেছিল।

এদিকে আফগানিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সাবেক একজন সদস্য বলছেন, তালেবান কাবুল দখল করার পর আশরাফ গনির দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার ঘটনাটি ‘যৌক্তিক’। কারণ গনি কার্যত কাদার মধ্যে পড়ে গিয়েছিলেন। তবে গনির দেশত্যাগের ধরনে তিনি হতাশ।

তিনি বলছেন, তালেবানের অগ্রাভিযানের মুখে আশরাফ গনি বাইরে বের হননি। আগে থেকে রেকর্ড করে রাখা বক্তব্য দেওয়া ছাড়া আর কোথাও তার উপস্থিতি ছিল না। এটা অদেশপ্রেমিক সুলভ আচরণ।

গনির শাসনামলের ব্যাপারে আফগান জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সাবেক এই সদস্যের বক্তব্য, ‘তিনি আফগান ভূখণ্ডগুলোর মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছেন। তিনি মানুষকে বিভক্ত করেছেন এবং বিভিন্ন আফগান জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে শত্রুতা সৃষ্টি করেছেন। এছাড়া আফগানিস্তানের গণতন্ত্রও ধ্বংস করেছেন গনি।’

আপনি আরও পড়তে পারেন