‘ধর্ষণ’ করতে গিয়ে ধরা, শিবির নেতাকে বেঁধে পিটুনি জামায়াত নেতার

‘ধর্ষণ’ করতে গিয়ে ধরা, শিবির নেতাকে বেঁধে পিটুনি জামায়াত নেতার

ফেনীর সোনাগাজীতে প্রেমিকাকে জন্মদিনের উপহার দিতে গিয়ে ধরা খেলেন যুবক। প্রেমিকার পরিবার তাকে আটক করে রশি দিয়ে বেঁধে ছবি তুলে ফেসবুকে চোর উল্লেখ করে ছেড়ে দেয়। মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে যায় সেই ছবি। রোববার রাতে (২৯ আগস্ট) উপজেলার বগাদানা ইউনিয়নের তাকিয়া বাজারসংলগ্ন পাইকপাড়া গ্রামের তাকিয়া আশ্রাফ আলী কবিরাজ বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। পরে গণপিটুনির শিকার ওই শিবিরনেতাকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়।

এ ঘটনায় দুই পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা হয়েছে। প্রেমিক শিবির নেতা হামিদুর রহমান আজাদ ও প্রেমিকার ভাই সৌদি প্রবাসী দীন মোহাম্মদকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের দুজনকে সোমবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

 

অভিযুক্ত আযাদ উপজেলার মজলিশপুর ইউনিয়নের চরবদরপুর গ্রামের বেলায়েত হোসেনের ছেলে এবং সোনাগাজী উপজেলা শিবিরের উত্তর শাখার সাবেক সভাপতি। তার বিরুদ্ধে এর আগেও একাধিক নারীকে প্রেমের ফাঁদে পেলে প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে।

পুলিশ জানায়, উপজেলার বগাদানা ইউনিয়ন জামায়াতের সেক্রেটারি ও চরমজলিশপুর ইউনিয়নের একটি দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক আবদুল হাইয়ের মেয়েকে প্রাইভেট পড়াতো শিবির নেতা হামিদুর রহমান আজাদ। দুই বছর আগে জামায়াত নেতার স্কুলপড়ুয়া (নবম শ্রেণির) ছাত্রীর সঙ্গে আজাদের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। রোববার রাত ২টায় জন্মদিনের উপহার দিতে মেয়েটির ঘরে ঢোকেন আজাদ। প্রেমিকার বাবা আবদুল হাই ও তার ভাই দীন মোহাম্মদ টের পেয়ে আজাদকে আটক করে বেধড়ক পেটান। পরে ঘরের সামনে তাকে বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়। ছবি তুলে দীন মোহাম্মদের ফেসবুক আইডি থেকে পোস্ট করা হয় আজাদের ছবি।

পোস্টে তিনি উল্লেখ করেন, তাকিয়া বাজারে আশ্রাফ আলী কবিরাজ বাড়িতে ধরা খেয়েছে স্বর্ণচোর। রাত ৩টায় দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকেছে। পুলিশ প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ।

মুহূর্তে ফেসবুকের পোস্টটি ভাইরাল হয়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ আজাদকে উদ্ধার করে। সোনাগাজী হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে পুলিশ তাকে হেফাজতে নেয়।

জামায়াত নেতা আবদুল হাই অভিযোগ করেন, দুই বছর ধরে আজাদ তার স্কুলপড়ুয়া মেয়েকে প্রেম ও বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে উত্ত্যক্ত করছে। এতে রাজি না হাওয়ায় আজাদ রোববার রাতে সুকৌশলে ঘরে ঢুকে তার মেয়েকে জোর করে ধর্ষণের চেষ্টা চালায়।

তিনি ও তার ছেলে মিলে আজাদকে আটক করে রশি দিয়ে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাখেন। ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে তার ছেলের লাঠির আঘাতে আজাদের মাথা ফেটে যায়। তিনি আজাদকে একমাত্র আসামি করে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে মামলা করেছেন।

অপরদিকে আজাদের বাবা বেলাল হোসেন অভিযোগ করেন, আবদুল হাইয়ের মেয়ের সঙ্গে তার ছেলের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। রোববার মেয়েটির জন্মদিন ছিল। মেয়েটি বিষয়টি তার ছেলেকে জানালে সে দুই প্যাকেট লজেন্স ও একটি কলম উপহার নিয়ে তার বাড়িতে যায়। রাতে সেখানে সে খাওয়া দাওয়াও করে। কিন্তু গভীর রাতে তার ছেলেকে নির্মমভাবে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়। তাতে তারা ক্ষান্ত হয়নি। দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে কথিত স্বর্ণ চুরির অভিযোগ এনে খুঁটির সঙ্গে বাঁধা ছবি ফেসবুকে ছেড়ে দেন দীন মোহাম্মদ। অথচ তাদের ঘরের দরজা ভাঙা বা স্বর্ণ চুরির কোনো ঘটনাই ঘটেনি। তাই তিনি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দীন মোহাম্মদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।

সোনাগাজী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, স্কুলছাত্রী ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে হামিদুর রহমান আজাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন স্কুলছাত্রীর বাবা। খুঁটির সাথে বেঁধে ছবি ফেসবুকে ছেড়ে দেয়ার অভিযোগে মেয়ের ভাই দীন মোহাম্মদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছেন ছেলের বাবা। তাদের দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সোমবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

 

আপনি আরও পড়তে পারেন