শরতের রঙ লেগেছে প্রকৃতিতে আজ।

শরতের রঙ লেগেছে প্রকৃতিতে আজ।
শরতের সৌন্দর্য উপস্থাপন করেছেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন “শরৎ তোমার অরুণ আলোর অঞ্জলি ছড়িয়ে গেলে ছাপিয়ে মোহন আঙ্গুলি”।
বাংলদেশ ষড় ঋতুর দেশ।বছরের বিভিন্ন ঋতুতে বিভিন্ন  সাজে সেজে ওঠে আমাদের বাংলার প্রকৃতি। শরৎকে বলা হয় শুভ্রতার প্রতীক!
কাশফুল, পরিষ্কার নীল আকাশ আর সবুজ মাঠ শব্দগুলো শুনলেই মনে আসে ঋতুর রানি শরতের নাম। বাংলার প্রকৃতিতে শরতের আবির্ভাব আবারও মুগ্ধ করেছে আমাদের।
 কালের পরিক্রমায় তৃতীয় ঋতু শরৎ।শরৎকে ইংরেজীতে “অটাম” বলা হয়।কিন্তুু দক্ষিন  আমেরিকায় একে ফল বলা হয়।ভাদ্র – আশ্বিন দুই মাস জুড়ে এই ঋতুর ব্যাপ্তিকাল।বর্ষবরণের পর গ্রীষ্মের দাবদাহে মানুষের জীবন বড়ই কষ্টকর হয়ে পড়ে। আবার বর্ষাকালের অবিরাম বর্ষণ ফসলের পক্ষে যতই মঙ্গলজনক হোক না কেন সাধারণ মানুষের জন্য সেটি বড় ক্লান্তকর।বাংলার বুকে বিপরীতধর্মী এই দুই ঋতুর উত্থান পতনের পরই আগমন ঘটে চিরচেনা শরতের।
 খ্রিষ্টীয় পঞ্জিকা অনুসারে মধ্য আগস্ট থেকে মধ্য অক্টোবর পর্যন্ত এ ঋতুর পথচলা।সাদা কাশফুল, শিউলি, স্নিগ্ধ জ্যোৎস্না, দিনভর আলো-ছায়ার খেলা- এসব মিলেই তো শরৎ!
 ভাদ্রের শুরু থেকেই শরতের আবির্ভাব বেশ লক্ষণীয়।এই ঋতুতে প্রকৃতি যেন আজ সেজেছে এক অপরুপ সাজে। প্রকৃতির এই অপরুপ স্নিগ্ধতার ছোঁয়া হৃদয়ে জাগিয়ে তুলে এক নতুন স্বপ্ন।
 এর স্নিগ্ধতা এক কথায় অসাধারণ! জলহারা শুভ্র মেঘের দল যখন নীল , নির্জন, নির্মল আকাশে পদসঞ্চার করে, তখনই বুঝতে পারি- শরৎ এসেছে।নীল আকাশের নিচে সাদা কাশফুল যখন বাতাসে দুলতে ; তখন মনে হয় শ্বেত বাসনা একঝাঁক নৃত্যশিল্পী নৃত্য করছে।শরতের আগমন সত্যিই মধুর!
 গ্রীষ্মের কাঠফাটা রোদ আর বর্ষার অঝোরধারায় শ্রাবণ ঢলের পর আসে শরতের আলোছায়ার খেলা; এই মেঘ, এই বৃষ্টি, তো কিছুক্ষণ পরই রোদ।দিগন্ত জুড়ে সাতরঙা হাসি দিয়ে ফুটে ওঠে রংধনু। প্রকৃতির এ অপরুপ যেন প্রিয় মানুষের সান্নিধ্য চায়। শরৎ মানেই লুকোচুরির খেলা।তাইতো কথায় আছে রোদ হচ্ছে বৃষ্টি হচ্ছে খেঁকশিয়ালির বিয়ে হচ্ছে। বাংলা সাহিত্যে শরৎ ও কাশফুলের কথা এসেছে নানানভাবে। শরৎ ও কাশফুলের বন্দনা  তাই কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতায়, ‘কাশফুল  মানে সাদা শিহরণ জাগায়, মন বলে কত সুন্দর প্রকৃতি, স্রষ্টার  কি অপরুপ সৃষ্টি ‘ !
 শরতের অন্যতম বড় আকর্ষণ কাশফুল! নদীতীরে, বনের প্রান্তে কাশফুলের রাশি অপরূপ শোভা ছড়ায়।বাড়ির আঙ্গিনায় শিউলি বা শেফালি ফুল তার সুমিষ্টঘ্রাণ ছড়ায়।খাল-বিল- পুকুর – ডোবায় ফোটে  নানান রঙের জলজ ফুল।
 কাশফুলের এ অপরূপ সৌন্দর্য পুলকিত করেনি এমন মানুষ খুঁজে মেলা ভার! তাই তো শিশু-কিশোরেরা আবেগময় হয়ে ছুটে বেড়ায় সেই কাশের বনে। হাতে তুলে নেয় গুচ্ছ গুচ্ছ সাদা ফুল।মেতে উঠে শিউলি ফুলের মালা গাঁথার প্রতিযোগিতায়।
 গাছে গাছে শিউলির মন ভোলানো সুবাসে অনুভূত হয় শরতের ছোঁয়া। মেঘহীন আকাশে গুচ্ছ গুচ্ছ কাশফুলের মতো সাদা মেঘের ভেলা কেড়ে নেয় মন। তাই তো উৎপল সেন লিখেছিলেন, ‘আজি শরতের আকাশে মেঘে মেঘে স্বপ্ন ভাসে ‘।
লেখক : মোঃমাসুদ আলম,  পরিচালক “দি চাইল্ড কেয়ার একাডেমি ” ও সাংবাদিক

আপনি আরও পড়তে পারেন