‘নদী ভাঙলে জমি খাস’ আইন বাতিলের দাবি

অবিলম্বে নদীর সিকস্তি অঞ্চলে ডিএস, সিএস, এসএ, আরএস রেকর্ড ও চিটার ভলিউম দেখে প্রজাস্বত্ব বহাল ও খাজনা-খারিজ চালুসহ সাত দফা দাবি জানিয়েছে ‘নদী ভাঙলে জমি খাস’ আইন বাতিল সংগ্রাম কমিটি। শুক্রবার (১ অক্টোবর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে কমিটি আয়োজিত এক মানববন্ধন থেকে এ দাবি জানানো হয়েছে।

তাদের অন্য দাবিগুলো হচ্ছে— ভূমি আইন ২০২০-এ সিকস্তি জমিতে প্রজাস্বত্ব বলবৎ থাকার সময়সীমা ৩০ বছর তুলে দিয়ে যখনই চর জেগে উঠবে তখনই চলতি কর পরিশোধ-সাপেক্ষে প্রজাস্বত্ব বহাল হবে মর্মে আইন করা; বিশেষজ্ঞ সমীক্ষা, নদীর সীমানা নির্ধারণ, ক্ষতি পূরণের ব্যবস্থা, পাড় ঢালু সঠিক রেখে নদী খনন করা; নদী খননের নামে বালু ব্যবসা বন্ধ করা; নদী ভাঙন রোধে ও জলাবদ্ধতা নিরসনে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া; নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষককে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা এবং ঘরে বসে এডি লাইন টানা বন্ধ করা।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, নদীর সিকস্তি অঞ্চলে (নদীতে জমি ভেঙ্গে যাওয়া) বসবাসকারী তিন কোটি মানুষ জানমালের ঝুঁকি নিয়ে সকল প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে অনাবাদি উঁচু-নিচু জমি আবাদযোগ্য করে দেশের কৃষি উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছেন। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ ও সকল গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল আন্দোলনে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। কৃষকের ভূমির অধিকার প্রতিষ্ঠায় যুগ যুগ ধরে লড়াই করেছেন তারা। তাই স্বাধীনতার পর এ অঞ্চলের মানুষের প্রত্যাশা ছিল তাদের ভাগ্যের বদল হবে। কিন্তু স্বাধীন দেশে সমস্যার সমাধান হয়নি বরং ঔপনিবেশিক শাসন আমলের আদলে নতুন আইন এবং আইনের সংশোধন করে বাপ-দাদার পৈত্রিক জমির অধিকার হরণ করা হয়েছে।

তারা বলেন, আইনের মারপ্যাঁচে আজ চরের মানুষ তার পৈত্রিক জমির প্রজাস্বত্ব হারিয়েছে। ভূমি অফিস জেগে ওঠা চরে পূর্বের মালিক বা তার উত্তরাধিকারকে জমির খারিজ দেয় না। বিগত সময়ে বিভিন্ন জরিপে নিজ নামে জমিজমা রেকর্ড করা সত্ত্বেও ভূমি অফিস খাজনা না নেওয়ায় এসব অঞ্চলের মানুষ জমিজমা ক্রয়-বিক্রয় করতে পারছেন না। ফলে এসব অঞ্চলের মানুষ জমিজমা থাকা সত্ত্বেও উচ্চ শিক্ষা ও জরুরি চিকিৎসাসেবা নিতে পারছেন না।

তারা আরও বলেন, নদী ভাঙনে সর্বস্ব হারানো মানুষের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের কোনো ব্যবস্থা নেই। বর্তমানে বিশেষজ্ঞ সমীক্ষা ছাড়াই সারাদেশে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে নদী খননের নামে চলছে বালু ব্যবসার মহোৎসব। বালু মাফিয়া চক্র ড্রেজিং-এর নামে কৃষকদের কায়েমি জমি কেটে নিচ্ছে। নদীর পাড় সংরক্ষণও সঠিক মাপ মতো না করায় নদী খননের পর জমিজমা ভেঙে আবার নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। নদী ভাঙন রোধে ও জলাবদ্ধতা নিরসনে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। এসব ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেই। তাই সিকস্তি অঞ্চলের মানুষদের অস্তিত্ব রক্ষায় লড়াই-সংগ্রামে নামতে হয়েছে।

মানববন্ধনে প্রবীণ কৃষকনেতা আব্দুল কাদের চাকলাদার, সংগ্রাম কমিটির কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক কৃষকনেতা জাহিদ হোসেন খান, খেতমজুর সমিতির সভাপতি ডা. ফজলুর রহমান, তেল-গ্যাস, বিদ্যুৎ-বন্দর ও সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স, হকার্স ইউনিয়নের সভাপতি মুর্শিকুল ইসলাম শিমুল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

 

আপনি আরও পড়তে পারেন