কুমার নদের কান্না দেখার কেউ নেই

কুমার নদের কান্না দেখার কেউ নেই
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ ও মাগুরাসহ আরো কয়েকটি জেলার ওপর দিয়ে ১২৪ কিলোমিটার দৈর্ঘের কুমার নদ প্রবাহিত হয়েছে।
হরিনাকুন্ডুর উপজেলার পাশ দিয়ে প্রবাহিত কুমার নদের তাহেরহুদার ইউনিয়নের ধুলিয়া হতে ভায়নার তৈলটুপি অংশটুকু এখন দখন-দূষন আর সংস্কারের অভাবে মরে যেতে বসেছে ।  রাজনৈতিক ক্ষমতার দাপটে দখল করা হয়েছে সরকারি খাস খতিয়ানের সকল ভূমি। পাড় কেটে বানানো হয়েছে ফসলী জমি,বসতবাড়ি । বর্তমানে নদটিতে বাঁধ দিয়ে অবৈধভাবে মাছ চাষ করছেন ক্ষমতাসীন প্রভাবশালীরা। অধিকন্তু জমি দখল করে নদের বুকে বসানো হয়েছে খোদ পুলিশ ক্যাম্প!( ভবানীপুর পুলিশ ক্যাম্প)।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশের খাল-বিল, নদী জলাশয় উদ্ধারের জন্য ব্যাপক পরিকল্পনা হাতে নিলেও হরিনাকুন্ডুর পাশ দিয়ে প্রবাহিত কুমার নদকে উদ্ধারে তেমন কোন লক্ষণ দেখা যায়নি।।
কুমার নদ চুয়াডাঙ্গা জেলার হাট বোয়ালিয়ায় মাথাভাঙ্গা নদী থেকে উদ্ভূত একটি নদ। জেমস রেনেল ১৭৬৪ সালে তাঁর অঙ্কিত মানচিত্রে এ নদের উল্লেখ করেছেন। বর্ষা মৌসুমে পানিতে পূর্ণ থাকলেও শুকনা মৌসুমে নদটি শুকিয়ে যেত। আশপাশের বহু বিল থেকে পানি বয়ে আসত বলে এ নদের পানির রঙ ছিল অনেকটা কালো। ফলে স্থানীয়ভাবে এ নদকে বলা হতো কালোবিল। উৎপত্তিস্থল থেকে কুমার নদ বর্তমানে নবগঙ্গার প্রায় সমান্তরালে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে প্রবাহিত হচ্ছে। মাগুরার কাছে নবগঙ্গার সঙ্গে মিলিত হয়ে মিলিত স্রোত নবগঙ্গা নামেই দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হচ্ছে। কুমারনদ একসময় তার প্রবাহ পথে কালীগঙ্গা, ছাকু, হানু, মুচিখালী ইত্যাদি থেকে তার অধিকাংশ পানির প্রবাহ পেত। গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্প (জি-কে প্রজেক্ট) বাস্তবায়নের ফলে মাথাভাঙ্গা থেকে কুমারের উৎসমুখ এবং অন্যান্য নদীনালাগুলি বন্ধ করে দেওয়ার ফলে কুমার এখন ক্ষীণকায় একটি নদে পরিণত হয়েছে। কেবল গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের প্রয়োজনাতিরিক্ত পানি এবং স্থানীয় বৃষ্টিপাতই এখন এ নদীর জলপ্রবাহের প্রধান উৎস।
 নদীটি প্রস্থ ছিল প্রায় ৬০/৭০ মিটার। আশ্বিন কার্তিক মাসেও কয়েক ফুট জল থাকত। নদীর দুই তীরের জমিতে শীতকালিন তরি-তরকারি শাক-সবজি ও চৈত্র বৈশাখ মাসে ইরি বোরো ফসল এই নদীর পানি দিয়ে ফলানো হতো। কিন্তু গত ২০ বছরের ব্যবধানে নদীটি যেন কোথায় হারিয়ে গেছে।
 কুমার নদটি এখন যেন একটি খালও নয়, দুই দিকের পাড় ভরাট করে তৈরি করা হয়েছে চাষ-বাসের জমি আর বসতবাড়ি। জায়গায় জায়গায় বাধ দিয়ে স্হানীয় প্রভাবশালীরা মাছ চাষ করছেন। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায়  ময়লা আবর্জনা আর কচুরিপানায় বুজে গিয়েছে নদের ধুলিয়া হতে তৈলটুপি অংশটুকু।
জেলা প্রশাসক রাজস্ব ও সহকারি কমিশনার ভুমির রেকর্ড পত্রে নদীর নাম ও আয়তন থাকলেও জবর দখল করা নদীটিকে বাঁচাতে কারো কোন আগ্রহ নেই।
এ বিষয়ে কথা বলতে উপজেলা সহকারী কমিশনার ( ভূমি)  সেলিম রেজার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘কুমার নদের খনন বা সংস্কার সংক্রান্ত কোন নির্দেশনা আমরা পায়নি, আর জমি দখল সংক্রান্ত কোন তথ্য আমার জানা নেই। তবে নদটি বাচিয়ে রাখার স্বার্থে এর সংস্কার ও অন্যান্য বিষয়ে আমি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করব।’
 ৩ নং তাহেরহুদা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনজুর ইসলাম বলেন, নদীটি উদ্ধার করে খনন ও সংস্কার করা হলে তাহেরহুদা, জোড়াদাহ,ভায়নাসহ কয়েক ইউনিয়নের হাজার হাজার কৃষকের জীবন মানের উন্নতি হবে এবং কৃষি ও মৎস উৎপাদনের ব্যাপক সাড়া জাগাবে।

আপনি আরও পড়তে পারেন