পরিযায়ী পাখির কলতানে মুখর জবই বিল

শীতের শুরুতেই নওগাঁর সাপাহারের জবই বিলে আসতে শুরু করেছে ঝাঁকে-ঝাঁকে বিভিন্ন প্রজাতির পরিযায়ী (অতিথি) পাখি। এসব পাখির কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত বিল। পাখির কিচির-মিচির শব্দ যেন মন ছুঁয়ে যায়।

জানা গেছে, সাইবেরিয়া, রাশিয়াসহ বিশ্বের শীত প্রধান দেশ থেকে হাজারো পাখি আসছে জবই বিলে। বালিহাঁস, সরালি হাঁস, পানকৌড়ি, পিয়াং হাঁস, পাতি সরালি, লেংজা হাঁসসহ দেশি জাতের শামুকখোল ছন্নি হাঁসে বিল এলাকা মুখর।

গত বছর এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী অবাধে বিল থেকে পাখি শিকার করে হাটবাজারে বিক্রি করত। তবে এবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার উদ্যোগে এবং স্থানীয় জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কমিটির সদস্যদের জোরালো নজরদারিতে বিল এলাকায় পাখি শিকার বন্ধ হয়েছে।

সাপাহার শিরন্টি গ্রাম থেকে পাখি দেখতে এসেছেন শাহিন হোসেন। তিনি বলেন, গত বছরের চেয়ে এবার পরিযায়ী পাখি বেশি এসেছে। পরিবার নিয়ে জবই বিলে এসেছি। একসঙ্গে এত দেশি-বিদেশি পাখি এর আগে দেখা হয়নি।

শারমিন সুলতানা মুনি নামে স্থানীয় কলেজের এক শিক্ষার্থী বলেন, পাখিগুলো বিলে ডানা মেলে খেলা করছে। আবার অনেক পাখি আকাশে ডানা মেলে উড়ছে। কী চমৎকার দৃশ্য যেন মন জুড়িয়ে যায়। তবে পাখি যেন কেউ শিকার করতে না পারে সেদিকে প্রশাসনসহ সকলের নজরদারি জরুরি।

জবই বিলে পর্যাপ্ত পরিমাণে কচুরিপানা না থাকায় ধীরে ধীরে এক সময় বিলে পাখি আসা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। গত বছর থেকে এলাকার কিছু উৎসাহী যুবক জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও সমাজ কল্যাণ সংস্থা নামে একটি সংগঠন তৈরি করে বিলে অতিথি পাখিসহ সব ধরনের পাখি শিকার বন্ধ করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন।

উপজেলা জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি সোহানুর রহমান সোহান বলেন, ভবিষ্যতে বিলের বিশাল অংশে কচুরিপানা দিয়ে মাছসহ পাখিদের বড় ধরনের অভয়াশ্রম তৈরি করতে হবে। পাশাপাশি বিলের বিভিন্ন দ্বীপে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগিয়ে বনাঞ্চল তৈরি করলে সারা বছর বিল এলাকায় পাখিদের আনাগোনা থাকবে। এতে জবই বিল আবারও ফিরে পাবে তার ঐতিহ্য ও নাব্যতা। এছাড়া বিলের যেকোনো একটি নির্দিষ্ট স্থানে পাখির অভয়াশ্রম তৈরি করে সে স্থানে মাছ শিকার বন্ধ রাখলে পাখিরা নিরাপদে বসবাস করতে পারবে। বর্তমানে আমাদের জরিপ অনুযায়ী জবই বিলে দেশি ও বিদেশি মিলে ৯ হাজার ৭১২টি পাখি রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, অনেক পাখিপ্রেমী সৌন্দর্য অবলোকন করতে বিল এলাকায় এসে ভিড় করছেন। বিল পাড়ে পর্যটকদের জন্য ঘোরাফেরা ও বসার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হলে ভবিষ্যতে সাপাহারের এই বিলটি এলাকার একটি পর্যটনকেন্দ্রে পরিণত হবে।

নওগাঁ-১ আসনের সংসদ সদস্য ও খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার সাপাহার উপজেলার জবই বিলটিকে একটি ঐতিহ্যবাহী পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে পদক্ষেপ হাতে নিয়েছেন বলে জানা গেছে।

সাপাহার উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল্যাহ আল মামুন বলেন, জবই বিলে এখন দেশি-বিদেশি অনেক পাখির আগমন ঘটছে। কেউ যাতে পাখিগুলোকে শিকার করতে না পারে সে বিষয়ে আমাদের নজরদারি আছে। পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও কাজ করছে। পাখি দেখতে প্রতিদিন জবই বিলে অনেক মানুষ আসা শুরু করেছে। জবই বিলের পাশে যে রাস্তা আছে, সেই রাস্তার দুই পাশে যাতে দর্শনার্থীরা বসতে পারে সেটাসহ আরও কি ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা যায় সেটার পরিকল্পনা করছেন মাননীয় খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। আশা করছি দ্রুত কাজগুলো বাস্তবায়ন হবে।

 

 

আপনি আরও পড়তে পারেন