ওমিক্রনই কি ভারতে ডেকে আনবে করোনার তৃতীয় ঢেউ?

মহামারি শুরুর পর করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট বেশ বিপদে ফেলেছিল ভারতকে। করোনার ওই ঢেউয়ের ধাক্কা কাটিয়ে অনেকটা স্বাভাবিক হয়েছে ভারতীয়দের জীবনযাত্রা। তবে এখন আবার নতুন করে ভয় দেখাচ্ছে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন। 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম শনাক্ত ওমিক্রন ডেল্টার চেয়ে অনেক বেশি সংক্রামক। একইসঙ্গে নতুন এই ভ্যারিয়েন্টটি টিকার কার্যকারিতাও অনেকটা কমিয়ে দেয়।

ভারতে এরইমধ্যে ওমিক্রনে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৩ জন। মুম্বাইয়ে দেওয়া হয়েছে লকডাউন। ফলে অনেকের মনেই এখন প্রশ্ন উঠছে ওমিক্রনই ভারতে করোনার তৃতীয় ঢেউ ডেকে আনবে কি না।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার পরিচালক ড. পুনাম ক্ষেত্রপাল এক সাক্ষাতকারে বলেছেন, একটি নতুন ভ্যারিয়্যান্ট সামনে আসা মানে এই নয় যে করোনা পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। তবে ওমিক্রনের জন্য পরিস্থিতি অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। এখনও মহামারি শেষ হয়নি। বিশ্বে এই মুহূর্তে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। ওমিক্রনের জেরে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকছে। দক্ষিণ এশিয়ার বাসিন্দাদের আরও সতর্ক হতে হবে।

ওমিক্রন নিয়ে তিনি সরাসরি কোনো উদ্বেগ প্রকাশ না করলেও তার কথায় স্পষ্ট যে, সংক্রমণের সম্ভাবনা কোনোভাবেই উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

এই বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকায় ওমিক্রন সংক্রমণ বাড়ছে। কিন্তু, আমাদের আরও তথ্যের প্রয়োজন। ডেল্টার থেকে ওমিক্রন কম শক্তিশালী কি না এই প্রসঙ্গে এখনও পর্যাপ্ত তথ্য হাতে এসে পৌঁছায়নি। পরিস্থিতি সম্পর্কে আমাদের সচেতন হওয়া উচিত। হাসপাতালগুলোতে বাড়াতে হবে বেডের সংখ্যা। এছাড়াও সব মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে করোনা টিকা।

এদিকে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক ড. টেড্রোস আধানম গেব্রেইয়েসুস সম্প্রতি বলেছেন, দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে পাওয়া পরিসংখ্যান বলছে ওমিক্রন সংক্রমণের ভয় থেকে যাচ্ছে যেকোনো মানুষের। তিনি কোভিডজয়ী হোন বা টিকাপ্রাপ্ত। কিন্তু, সেই পরিসংখ্যান থেকেই এমন প্রমাণও পাওয়া যাচ্ছে, যাতে মনে করা যেতে পারে ওমিক্রন সংক্রমিতদের উপসর্গ খানিকটা কম হবে। কিন্তু এখনই কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছনো ঠিক হবে না। এ জন্য আরও তথ্য পরিসংখ্যান যাচাই করা প্রয়োজন।’

অবশ্য ওমিক্রন নিয়ে এখনই আতঙ্কিত হওয়ার প্রয়োজন নেই বলেও জানিয়ে দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সংস্থাটি বলছে, ওমিক্রনকে ঠেকানো সম্ভব।

অন্যদিকে, ওমিক্রনকে ঠেকাতে এখনই লকডাউনের প্রয়োজন নেই বলে জানিয়েছেন ভারত সরকারের পরিকল্পনা সংস্থা নীতি আয়োগের সদস্য ভি কে পাল। তিনি বলেছেন, ওমিক্রন নিয়ে পরীক্ষা করা হচ্ছে। এই পরীক্ষার ওপর ভিত্তি করে নিশ্চয়ই একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এই নিয়ে আমাদের গবেষকদের সঙ্গে কথা হচ্ছে। কোন কারণে বুস্টার ডোজ দেওয়া হবে, কতদিনের মধ্যে তা দেওয়া উচিত, এ বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হচ্ছে। এই মুহূর্তে আমাদের লক্ষ্য সব প্রাপ্ত বয়স্কদের সম্পূর্ণ টিকাকরণ।

ওমিক্রন আক্রান্তদের দেহে উপসর্গ কতটা গুরুতর?
ওমিক্রন নিয়ে বিজ্ঞানীরা যে কারণে সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন তা হলো: এটি অত্যন্ত দ্রুত এবং সহজে ছড়াতে পারে। করোনাভাইরাস যত সহজে ছড়াবে, ততই তাতে আক্রান্তের সংখ্যাও বেশি হবে। আর এর ফলে কোভিড-১৯-এ গুরুতর অসুস্থ হওয়া ও মৃত্যুর সংখ্যাও ততই বাড়তে থাকবে।

দক্ষিণ আফ্রিকার চিকিৎসকরা বলছেন, এখন পর্যন্ত ওমিক্রন নামের কোভিডের এই নতুন ধরনটির সংক্রমণে রোগীদের মধ্যে খুবই মৃদু লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।

দক্ষিণ আফ্রিকার মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান এ্যানজেলিক কোয়েৎজি বিবিসিকে বলেছেন, এখন পর্যন্ত সেদেশে কেসের সংখ্যায় সামান্য বৃদ্ধি ঘটেছে। কিন্তু ওমিক্রনে আক্রান্তদের অধিকাংশেরই হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার দরকার হয়নি।

তিনি আরও বলেন, হয়তো এর লক্ষণ অত্যন্ত মৃদু বলেই এই নতুন ধরনটি এতদিন শনাক্ত হয়নি। প্রথম যে আক্রান্ত ব্যক্তিকে পাই সে একজন পুরুষ, বয়স ছিল ৩০এর কোঠায়। এবং সে দু’দিন ধরে প্রচণ্ড ক্লান্তি অনুভব করার কথা বলছিল। তার সাথে গায়ে ব্যথা, মাথাব্যথা। তবে কাশি ছিল না বা স্বাদ-গন্ধ হারিয়ে ফেলাও ছিল না। এরকম লক্ষণ আমার কাছে অস্বাভাবিক মনে হওয়াতে আমি তার টেস্ট করাই। তাতে সে এবং তার পরিবারের সবাই পজিটিভ ধরা পড়লেও পরিবারের অন্যরা ভালো ছিল। সেজন্যই আমি বলছি মৃদু উপসর্গ। এর পর একদিনে আমি আরও কয়েকজন রোগী দেখি। তারাও সবাই পজিটিভ ছিল। এর পরই আমি টিকা সংক্রান্ত সরকারি কমিটিকে সতর্ক করি, যার সদস্য আমি নিজেও।

তিনি বলেন, আমরা দক্ষিণ আফ্রিকায় যা দেখছি তা হলো সংক্রমিত সবারই লক্ষণ আমাদের বিবেচনায় অত্যন্ত মৃদু। আমরা কাউকেই হাসপাতালে ভর্তি করাইনি। আমি অন্য একজন সহযোগী ডাক্তারের সাথে কথা বলেছি। তিনিও একই চিত্র তুলে ধরেছেন।

 

 

 

আপনি আরও পড়তে পারেন