নির্বাচন কমিশনের মানা সত্ত্বেও সমাবেশে গেলেন আইভী

নির্বাচন কমিশনের মানা সত্ত্বেও সমাবেশে গেলেন আইভী

আসন্ন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীর পক্ষে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সমাবেশে তিনজন সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর দুজন সদস্যসহ একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা উপস্থিত ছিলেন। 

শুক্রবার (২৪ ডিসেম্বর) বিকেলে নগরের দেওভোগে শেখ রাসেল পার্কে সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশের ব্যানারে ‘স্বাধীনতার সুর্বণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষের বিজয় দিবস উপলক্ষে বিজয় সমাবেশ’ উল্লেখ থাকলেও সমাবেশটি আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে আয়োজিত সমাবেশে রূপ নেয়। সমাবেশের প্রধান অতিথিসহ সব বক্তাই সেলিনা হায়াৎ আইভীর জন্য নৌকা মার্কায় ভোট চান। সমাবেশে নির্বাচন কমিশনের নিষেধ সত্ত্বেও আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সেলিনা উপস্থিত থেকে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন। এই সমাবেশে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান উপস্থিত থাকবেন কি না তা নিয়ে সংশয় ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি সমাবেশে যাননি এবং ব্যানারে অতিথির তালিকায় তার নামও ছিল না।

এদিকে শুক্রবারের সমাবেশে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে সমাবেশে যেতে নিষেধ করা হয়েছিল বলে নিশ্চিত করেছেন নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার মাহফুজা আক্তার। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার টেলিফোন করে নির্বাচনী আচরণবিধির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে সেলিনা হায়াৎ আইভীকে সমাবেশে না যেতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তিনি তা শোনেননি। আমরা দেখছি এ ব্যাপারে কী করা যায়।

সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, মাননীয় নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডা. আইভীর বিজয়ের মধ্য দিয়ে আগামী ২০২২ সালের নির্বাচনে জয়লাভের সূচনা করতে চান।

তিনি বলেন, নেতায় নেতায় নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকতে পারে। তবে তা যেন প্রতিহিংসায় রূপান্তরিত না হয়। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারকে ইঙ্গিত করে বলেন, এই নির্বাচনে বিএনপির একজন প্রার্থী রয়েছেন। তিনি তার লেভেল উঠিয়ে ফেলেছেন। তার ব্যাপারে আমাদের সজাগ থাকতে হবে।

তিনি আরও বলেন, এখানে আমরা কেউ অপরিহার্য নই। বরং অপরিহার্য হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার দল।

দলের সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য আবদুর রহমান বলেন, দেশের গোয়েন্দা সংস্থার কাছে খবর রয়েছে নারায়ণগঞ্জের শতকরা ৬৭ শতাংশ মানুষ আইভীকে ভোট দিতে প্রস্তুত।

তিনি আরও বলেন, যিনি আইভীর বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছেন তিনি গোশত খান না, কিন্তু সুরা খান। তিনি বিএনপি করেন, কিন্তু ধানের শীষ নিতে চান না। তিনি নারায়ণগঞ্জের মানুষের চোখে ধুলা দিয়ে জয় পেতে চান। কিন্তু নারায়ণগঞ্জের মা-বোনেরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা ১৬ জানুয়ারির নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দেবে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম বলেন, আজকের এই সমাবেশে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ এক ও অভিন্ন হয়ে গেছে। সময়মতো আওয়ামী লীগ এক হয়ে যায়। যার প্রমাণ এই মঞ্চ। গত ২০ বছরে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ একত্রে কোনো সমাবেশ করতে পারেনি। কিন্তু আজ পেরেছে। আগামী ১৬ জানুয়ারি বিজয়ের মধ্য দিয়ে আমরা আরেকটি বিজয় মিছিল করব।

সমাবেশের প্রধান বক্তার বক্তব্যে মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ বলেন, নারায়ণগঞ্জে অতীতে নেতৃত্ব দিয়েছেন একেএম শামসুজ্জোহা ও আমার বাবা আলী আহাম্মদ চুনকা। তাদের মধ্যে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা ছিল কিন্তু সংঘাত ছিল না। এখনও প্রতিযোগিতা আছে, থাকুক। কিন্তু দলের জন্য সবাই একত্রে কাজ করব। আমরা কোনো ভাইয়ের, কোনো বোনের, কোনো চাচার রাজনীতি করব না। অতীতের মতো এবারও নেত্রী আমাকে প্রার্থী করেছেন, নৌকা দিয়েছেন। আপনারা নৌকার মান সম্মান রক্ষা করবেন।

সমাবেশে আগত অন্যান্য বক্তারাও তাদের বক্তব্যে ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে সেলিনা হায়াৎ আইভীকে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করার আহ্বান জানান।

মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহার সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, এসএম কামাল হোসেন এবং মির্জা আজম এমপি, আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস এমপি, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাই, সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মো. শহীদ বাদল, আড়াইহাজার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু, আওয়ামী লীগ জাতীয় পরিষদ সদস্য আনিসুর রহমান দিপু প্রমুখ।

আপনি আরও পড়তে পারেন