ঝিনাইদহের ঐতিহাসিক ১২ আওলিয়ার মসজিদ ও পুকুর বেষ্ঠিত ১২ বাজার

ঝিনাইদহের ঐতিহাসিক ১২ আওলিয়ার মসজিদ ও পুকুর বেষ্ঠিত ১২ বাজার

শেখ শফিউল আলম লুলু,ঝিনাইদহ;

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ শহর থেকে ১১ কিলোমিটার দক্ষিণে ১২আওলিয়ার ১২ বাজার অবস্থিত। এবং যশোর জেলা শহর থেকে ১৭ কি;মি উত্তরে, যশোর-ঢাকা মহাসড়কের পাশের্^ পুকুর ও দিঘি ও বুড়ি ভৈরব নদীর তীরে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত ঐতিহাসিক বিভিন্ন মসজিদ পরিবেষ্টিত এই ১২ বাজার। ১২জন আওলিয়ার নামানুসারে এখানকার নামকরন করা হয় ১২বাজার। আওলিয়া গন হলেন এনায়েত খাঁ, আবদাল খাঁ, দৌলত খাঁ, রহমত খাঁ,শমসের খাঁ, মুরাদ খাঁ, হৈবত খাঁ,নিয়ামত খাঁ, সৈয়দ খাঁ, বেলায়েত খাঁ ও শাহাদত খাঁ। এসব আওলিয়াগনের নামে শুধু ১২বাজার নয় পাশ্ববর্তী অন্কে গ্রামগঞ্জের নাম আওলিয়্াগনের নামানুসারে রাখা হয়েছে।
কিংবদšিত আছে বঙ্গ বিজয়ী বীর ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বখতিয়ার খিলজি নদীয়া দখলের পর নদীয়ার দক্ষিন বা দক্ষিণ পূর্বে বি¯তীর্ণ অঞ্চলের দিকে মনোযোগী না হয়ে উত্তর দিকে বেশি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। ফলে তার বিজিত রাজ্য উত্তরদিকে প্রশ¯ত হতে থাকে।পরিশেষে সামছুদ্দিন ইলিয়াস শাহের পৌত্র নাসির উদ্দিন মাহমুদ শাহ(১৯৪২) সালে এর শাসনামলে যশোর ও খুলনার কিংবদন্তি তার রাজ্যভুত হয়। ওই অঞ্চলে বিজয়ের গৌরব অর্জণ করেন বৃহত্তর খুলনা জেলার বাগেরহাটের পরশমণি শ্রেষ্ঠ আওলিয়ার হযরত খান জাহান আলী। তিনি ১৬৫৯ সালে (৮৬৩) হিজরী ২৩ অক্টোবর ইহধাম ত্যাগ করেন। তিনি এক সময় নিজের আত্মরক্ষার্থে একটি ক্ষুদ্র সেনাবাহিনীর অধিনায়ক হয়ে কুষ্টিয়া জেলার দৌলতগঞ্জ প্রবেশ করেন। সেখান থেকে বৃহত্তর যশোর জেলার চৌগাছা উপজেলার হাকিমপুর হয়ে ১২বাজার অভিমুখে রওনা দেন। পথিমধ্যে জনসাধারনের পানীয় জলের তীব্র কষ্ট দেখে তিনি এ অঞ্চলে অগনিত দিঘি আর পুকুর খনন করেন। কিংবদšিত আছে,একই রাতে এ সব জলাশয় খনন করা হয়েছিল। ফলে ১২বাজার অঞ্চলে ৮৪ একর পুকুর ও দিঘি এখনও বিদ্যমান। এ অঞ্চলে ১৮টি উলে­খযোগ্য দিঘির নামানুসারে জানা যায়, পীরপুকুর ৪ একর, গোড়ার পুকুর ৫ একর, সওদাগর দিঘি ১১ একর, সানাইদার পুকুর ৩ একর, সাতপীরের পুকুর ৩ একর, ভাইবোনের দিঘি ৪ একর, আনন্দ ২ একর, গলাকাটা দিঘি ৪ একর, জোড়াবাংলা দিঘি ৩ একর, চোরাগদা দিঘি ৪ একর,মাতারানী দিঘি ৮ একর, নুনো গোলা দিঘি ৩ একর, কানাই দিঘি ৩ একর, পাচ পীরের দিঘি ৩ একর, মনোহর দিঘি ৩ একর, আদিনা দিঘি ৩ একর, শ্রীরাম রাজার দিঘি ১০ একর ও বেড় দিঘি ৮ একর। সর্বমোট ৮৪ একর দিঘি।এক সময় হযরত খানজাহান আলী বেলাট দৌলতপুরের পূর্ব দিকে বাদুরগাছা গ্রামের প্রভাবশালী শ্রীরাম রাজাধীরাজের মুখোমুখি হয়ে পড়েন। এবং কিটুটা বাধাগ্রস্থ হন। ফলে তিনি মুসলিশ ধর্ম প্রচারে অধিক উৎসাহী হয়ে এই বারোবাজারে এক যুগকাল অবস্থান করেন তার দৃঢ় মনোবল উদারতা, দানশীলতা ও মাহনুবভতায় এলাকাবাসী মুগ্ধ হয়ে পড়েন। এলাকার অনেক অমুসলিম ইসলাম ধর্ম গ্রহনে ঝুকে পড়েন। এভাবে একযুগ অবস্থানের পর তিনি এক শিষ্যের তত্ত¡াবধানে দিয়ে তিনি শেষ জীবন বাগেরহাটে অতিবাহিত করেন।
খানজাহান আলীর এক যুগ সাধনার স্থাপত্য নিদর্শণ রয়ে গেছে এই বারোবাজারে বারবাজারে অনেকগুলো মসজিদ মাটির নিচ থেকে পাওয়া যায়। এর মধ্যে সাতগাছিয়া মসজিদ, গলাকাটা মসজিদ, জোড়বাংলা মসজিদ, মনোহর মসজিদ, গোড়ার মসজিদ, পীরপুকুর মসজিদ, শুকুর মলি­ক মসজিদ,নুনগোলা মসজিদ, পাঠাগার মসজিদ। এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় নিদর্শন ৩২ গম্বুজবিশিস্ট সাত গাছিয়া আদিনা মসজিদ ও বারোবাজার গলাকাটা দিঘির ৬ গম্বুজবিশিস্ট একটি মসজিদ। যে মসজিদটি অনšতকাল ধরে মাত্র দুটি ভিত্তির উপর দন্ডমান রয়েছে। এছাড়াও এখানে রয়েছে অগণিত মসজিদ। যে কোন মাটি টিবি সরালেই মসজিদের সন্ধান পাওয়া যায়। যার অনেকগুলো ইতোমধ্যে আবিস্কার করে আংশিক সংস্কারও করা হয়েছে। এ পর্যšত যতগুলো মাটির টিবি সরানো হয়েছে ততগুলো মসজিদের সন্ধান পাওয়া গেছে।
কিংবদšিত আছে বহুকাল আগে এই ১২বাজার যুদ্ধে অথবা মহামারিতে জনশুন্য হয়ে পড়ে। এরপর এখানে ১২জন আওলিয়ার আগমন ঘটে এবং তখন থেকেই সৃষ্টি হয়েছে অগণিত মসজিদ,পুকুর আর দিঘি। প্রতিটি জলাশয়ের পাশেই অবস্থিত একটি করে মসজিদ। আর সেই মসজিদের সিড়ি জলাশয় পর্যšত পাকা করা ছিল। এসব পাকা সিড়ির ওপর প্রায় ৮/১০ ফুট পর্যšত মাটি চাপা পড়ে জনসাধারনের অদৃশ্যে ছিল। বাংলাদেশ সরকারের খুলনাস্থ প্রতœতত্ত¡ দপ্তরের কর্মকর্তারা কয়েখ বছর আগে কিছু মসজিদ ও পাকা সিড়িগুলো আবিস্কার করেছেন। এছাড়াও কয়েকটি মসজিদ সংস্কার করেছেন।

 

আপনি আরও পড়তে পারেন