বাংলাদেশ পুলিশের দেওয়া বাড়িতে হাসি ফুটলো নওগাঁর এগারোজন গৃহহীনের মুখে

বাংলাদেশ পুলিশের দেওয়া বাড়িতে হাসি ফুটলো নওগাঁর এগারোজন গৃহহীনের মুখে

বিকাশ চন্দ্র প্রাং, স্টাফ রিপোর্টার:

 

নওগাঁর ১১টি উপজেলার ১১জন গৃহহীন মানুষ বর্তমানে বাংলাদেশ পুলিশের নির্মাণ করে দেওয়া ইটের বাড়িতে বসবাস করছেন। জায়গা-জমি ও গৃহহীন এই মানুষগুলো কখনোই ভাবেননি যে দিন শেষে তারা পরিবার নিয়ে স্বপ্নের নিজের ইটের বাড়িতে রাত কাটাতে পারবেন। এরপর তারা এখন ঘরসহ জমির মালিকও বনে গেছেন। এতে করে আনন্দে আত্মহারা এই ১১জন গরীব, অসহায় ও ছিন্নমূল গৃহহীন মানুষ।

নওগাঁর পুলিশ সুপার প্রকৌশলী আবদুল মান্নান মিয়া জানান, মুজিববর্ষ উদযাপনের লক্ষ্যে বছর ব্যাপী নানা কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল বাংলাদেশ পুলিশ। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে সে সব পরিকল্পনা পুরোপুরি বাস্তবাবায়িত না হওয়ায় কিছু অর্থ বেঁচে যায়। সেই অর্থ দিয়ে “মুজিব ছায়া প্রকল্পের” আওতায় গৃহহীনদের জন্য গৃহ নির্মাণ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আবাসন কার্যক্রমে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে বাংলাদেশ পুলিশ। তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ পুলিশের হেড কোয়ার্টারের সার্বিক তত্তাবধানে জেলার ১১টি উপজেলায় ১১জন অসহায় ও গরীব গৃহহীন মানুষরা এই বাড়ি প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে পেয়েছেন। যাদের জমি ছিলো কিন্তু ঘর নির্মাণ করার মতো কোন সামর্থ ছিলো না তাদেরকে দুইটি ঘর, টয়লেট, টিউবয়েল, রান্নাঘরসহ আধুনিক সকল সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত মানসম্মত বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও যাদের জমি ছিলো না তাদের ২শতাংশ জমি কিনে বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি বাড়িতে সাড়ে প্রায় ৩লাখ থেকে ৪লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে।

জেলার ১১টি উপজেলার যে গৃহহীনরা বাংলাদেশ পুলিশের নির্মাণ করা প্রধানমন্ত্রীর উপহার এই বাড়ি পেলেন তারা হলেন সদর উপজেলার ফতেপুর ধোপাপাড়া গ্রামের মৃত- কাচু মন্ডলের স্ত্রী গৃহকর্মী খুকি বেগম (৬৩), রাণীনগর উপজেলার লোহাচ’ড়া গ্রামের পানের দোকানদার আকরাম সরদার (৫০), আত্রাই উপজেলার সাহেবগঞ্জ গ্রামের মজিবর প্রামাণিকের স্ত্রী গৃহিনী ইরা বেগম (৫৪), বদলগাছী উপজেলার নুনুজ গ্রামের মৃত আজিজুর রহমানের স্ত্রী গৃহকর্মী আশুরা (৫৩), মহাদেবপুর উপজেলার বাগডোব নিচাপাড়া গ্রামের মৃত আবেদ আলীর মেয়ে গৃহকর্মী মর্জিনা খাতুন (৪২), পত্নীতলা উপজেলার নজিপুর পুরাতন বাজার এলাকার নুর ইসলামের স্ত্রী গৃহকর্মী জীবন (৩৯), ধামইরহাট উপজেলার শিবরামপুর গ্রামের মৃত নুর ইসলামের স্ত্রী কাজের বুয়া ডলি জহুরা (৪১), সাপাহার উপজেলার শিরন্টি (মরাডাঙ্গা) গ্রামের মৃত আব্দুল ওহাবের স্ত্রী গৃহীনি আকতার বানু (৪৮), পোরশা উপজেলার গোপিনাথপুর বরিন্দপাড়া গ্রামের মৃত সেলিমের স্ত্রী গৃহকর্মী রাশেদা (৬৬), মান্দা উপজেলার কামাড়কুড়ি গ্রামের মৃত মোসলেম উদ্দিনের ছেলে হোটেল শ্রমিক আবু সাইদ শেখ (৪০) ও নিয়ামতপুর উপজেলার কানইল গ্রামের মৃত আব্দুর রহমানের স্ত্রী গৃহিনী মনোয়ারা বেগম (৫৪)।

বাংলাদেশ পুলিশের উপহার ঘর পেয়ে আবেগ জড়ানো কন্ঠে সাপাহার উপজেলাধীন মরাডাঙ্গা গ্রামের মৃত আব্দুল ওহাবের স্ত্রী আকতার বানু বলেন চার বছর আগে অসুখ হয়ে স্বামী মরে গেছে বা। ও নাই। ছলপল নিয়ে খুব কষ্টে দিনপার করবা হইছে। ব্যাটাক নিয়ে মানষের বাড়ীত কাজ করতু; মানষের বাড়ীতই থাকতু। পুলিশ একটা বাড়ী করে দিছে হামাক, আর মানষের বাড়ীত থাকবা হবেনা। এখন থেকে নিজের বাড়ীতই ব্যাটাক নিয়ে সুখে শান্তিতে থাকমু।

সদর উপজেলার আরেক সুবিধাভোগী গৃহকর্মী খুকি বেগম বলেন তার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল নিজের একটা বাড়ি হবে। পারিবারিক ভাবে অস্বচ্ছল হওয়ায় সেটি করতে পারেননি। এরমাঝে হটাৎ অসুস্থ হয়ে তার স্বামী মারা যান। তখন থেকেই তার জীবনে মেনে আসে ঘোর অন্ধকার। খেয়ে না খেয়ে দিন পার করেছেন তিনি। অন্যের বাড়িতে কাজ করে ও গ্রামের বিত্তবান মানুষের কাছে সহযোগিতা নিয়ে সংসার চলে তার। মুজিববর্ষ উপলক্ষে পুলিশের দেওয়া ঘর পেয়ে এখন ভিষণ খুশি তিনি। সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।

সম্প্রতি (গত রবিবার) জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে দেশের ৬৫৯টি থানায় নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের সেবা দিতে বিশেষ সার্ভিস ডেস্ক ও গৃহহীনদের জন্য বাংলাদেশ পুলিশের তৈরি ঘর প্রধান অতিথি হিসেবে আনুষ্ঠানিক ভাবে হস্তান্তরের শুভ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময় পুলিশের আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধু ১৯৭২সালে ভূমিহীন, ছিন্নমূল মানুষকে পুনর্বাসন শুরু করেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যয় বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে বাংলাদেশের ৫২০টি থানায় গৃহহীনদের জন্য গৃহ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ। এসব গৃহ উন্নত ও পরিবেশবান্ধব সামগ্রী দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে ৪০০টি গৃহ হস্তান্তর করা হচ্ছে। আমি আশাবাদি খুব দ্রুত আমাদের দেশে কেউ আর গৃহহীন থাকবে না।

 

আপনি আরও পড়তে পারেন