বিকাশ চন্দ্র প্রাং, স্টাফ রিপোর্টার: দেশের ২৫জেলার মতো নওগাঁর প্রায় সবগুলো সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়েও নেই কোন প্রধান শিক্ষক। যার কারণে বিদ্যালয়গুলোতে বর্তমানে প্রশাসনিকসহ নানা কাজকর্মে জটিলতা দেখা দিয়েছে। ২০০৫সাল থেকে বন্ধ রয়েছে এই নিয়োগ কার্যক্রম। দীর্ঘ ১৬বছর এই পদে নিয়োগ না থাকায় ভয়াবহ সংকট তৈরি হয়েছে। এছাড়া শিক্ষার্থী ভর্তি ও অন্যান্য কার্যক্রমেও বেড়েছে দুর্নীতি।
প্রধান শিক্ষকবিহীন জেলাগুলো হলো যশোর, নারায়ণগঞ্জ, সাতক্ষীরা, রাজবাড়ি, শেরপুর, মৌলভীবাজার, সিলেট, সুনামগঞ্জ, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, পঞ্চগড়, লালমনিরহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ঝালকাঠি, নওগাঁ, পিরোজপুর, নাচোর, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, পটুয়াখালী, মেহেরপুর, ভোলা, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান।
অপরদিকে ২১জেলায় নেই কোন মাধ্যমিক জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাও। ফলে জেলাগুলো মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তদারকি করারও কেউ নেই। জেলাগুলো হলো ফরিদপুর, মাগুড়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, মাদারীপুর, শরীতপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, ল²ীপুর, হবিগঞ্জ, জয়পুরহাট, নাটোর, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, ভোলা, জামালপুর, নেত্রকোনা, কক্সবাজার, নোয়াখালী, বান্দরবান ও রাঙামাটি। সহকারি জেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা এসব জেলায় ভারপ্রাপ্ত জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন।
মাউশি সূত্রে জানা গেছে, সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে বর্তমানে ৩৫১টি প্রধান শিক্ষকের পদ রয়েছে। তার মধ্যে ২৩৩টি শূন্য। মাত্র ৮৯জন প্রধান শিক্ষক দিয়ে চলছে সারাদেশের সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কার্যক্রম। বাধ্য হয়েই সরকারি প্রধান শিক্ষক অথবা যেখানে সহকারি প্রধান শিক্ষক নেই, সেখানে জ্যেষ্ঠ কোনো সহকারি শিক্ষককে প্রধান শিক্ষকের ভারপ্রাপ্ত পদ দিয়ে কোন রকমে জোড়াতালি দিয়ে বছরের পর বছর চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে। সারাদেশে বর্তমানে ৪২১জন সহকারি প্রধান শিক্ষক থাকলেও তাদের ফিডার পদ পূর্ন না হওয়ায় পদোন্নতি দেওয়া যাচ্ছে না। আবার কর্মরত প্রধান শিক্ষকদের কাউকে কাউকে প্রশাসনিক প্রয়োজনে সমমানের জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার পদে পদায়ন করার কারণেও ওই পদ শূন্য হয়েছে।
জেলার একাধিক সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকরা বলেন, বছরের পর বছর সহকারি প্রধান শিক্ষকরা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ায় অনেক বিদ্যালয়ে সৃষ্টি হয়েছে নেতৃত্ব সংকট। শিক্ষকদের অনেকেই তাদের মানতে চান না। আবার একজন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার প্রশাসনিক ক্ষমতা ও আর্থিক ভাবে লাভবান হওয়ার সুযোগ বেশি থাকায় এক শ্রেণির শিক্ষকের মধ্যে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হতেই আগ্রহ বেশি। এছাড়া প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি পেতে ঘুষ, দুর্নীতি ও এসিআর হারানোর বা গায়েবের মতো ঘটনাও ঘটানো হয়েছে। তারা আরো বলেন, প্রধান শিক্ষক থাকলে প্রতিষ্ঠান অবশ্যই আরও ভালো চলতো। সকল জটিলতার অবসান ঘটিয়ে এই বিদ্যালয়গুলোতে পাঠদানে গুনগতমান ও প্রশাসনিক কাজে স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনতে অবশ্যই সরকারকে দ্রæত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।