রাণীনগরে ৩য় শ্রেণির শিক্ষার্থীকে শিক্ষকের বেত দিয়ে প্রহার; রক্তাক্ত শিশু কুলছুম

রাণীনগরে ৩য় শ্রেণির শিক্ষার্থীকে শিক্ষকের বেত দিয়ে প্রহার; রক্তাক্ত শিশু কুলছুম

স্টাফ রিপোর্টার: নওগাঁর রাণীনগরের ৮৮ নং গুঠনিয়া গোবিন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কালীপদ সাহার বিরুদ্ধে ৩য় শ্রেণির শিক্ষার্থী কুলছুমকে বেতের প্রহার করার অভিযোগ উঠেছে। এতে ওই শিশুটির শরীরে কয়েকটি স্থানে জখম হয়েছে। শিক্ষার্থীদের প্রহার করাসহ স্থানীয় এই প্রধান শিক্ষকের নানা অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে বিদ্যালয়ে কমছে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা। এছাড়াও কালীপদর বিরুদ্ধে স্থানীয়দের রয়েছে বিভিন্ন অভিযোগ।

শিশু শিক্ষার্থী কুলছুমের বাবা মালিপাড়া গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে মুনছুর রহমান মুঠোফোনে জানান, গত শনিবার (১৬এপ্রিল) ক্লাসে আমার মেয়ে পড়া বলতে না পারার অপরাধে প্রধান শিক্ষক কালীপদ সাহা বেত দিয়ে প্রহার করে। ফলে মেয়ের শরীরের কয়েকটি স্থান ফেটে রক্ত বের হয়। আমি বিষয়টি জানার পর মেয়েকে স্থানীয় ভাবে চিকিৎসা দিয়ে বাড়ি নিয়ে যাই। পরে কালীপদ ওইদিন রাতেই আমার কাছে এসে ক্ষমা চায়। তিনি আমার বাবার বন্ধু বলে আমি বিষয়টি কাউকে না জানিয়ে মিটমাট করে নিই। তবে এভাবে কোন শিক্ষার্থীকেই প্রহার করা উচিত নয়।

সোমবার সরেজমিনে বিদ্যালয়ে গিয়ে জানা যায় ওই সনাতন ধর্ম অধ্যুষিত গ্রামে প্রভাবশালী শিক্ষক কালীপদ সাহার প্রভাবের কথা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষকরাও শিক্ষার্থী কুলছুমকে প্রহার করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এছাড়াও স্থানীয়রা জানান শিক্ষক কালীপদ সাহা অর্থবান ও প্রভাবশালী হওয়ার কারণে ২০১৩সালে জাতীয়করন হওয়া বিদ্যালয়টি তিনি প্রভাব খাটিয়ে নিজের বাহুবলে রেখে উন্নয়নের নামে আসা সরকারের বরাদ্দগুলো হরিলুট করে আসছেন। নিজের পছন্দের মানুষদের দিয়ে ম্যানেজিং কমিটি তৈরি করে তিনি তার প্রভাব বিস্তার করে আসছেন বছরের পর বছর।  সহকারি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কালীপদর অসৌজন্যমূলক আচরন নিত্যদিনের উপহার। যার কারণে প্রায় আড়াইশত মানুষের বসবাস করা গুঠনিয়া গোবিন্দপুর গ্রামের একমাত্র সরকারি বিদ্যালয়ে নিয়মিত পড়ালেখা করছে মাত্র ১০৮জন শিক্ষার্থী। অধিকাংশ মানুষই কালীপদর ব্যবহারের কারণে তাদের সন্তানদের কিন্ডার গার্টেন স্কুলগুলোতে পড়াতে বাধ্য হচ্ছেন। ৪৪শতাংশ জায়গার উপর নির্মিত পুরাতন ৩কক্ষ বিশিষ্ট বিদ্যালয়ের মধ্যে প্রবেশ করতেই ছাদ থেকে পলেস্তার খুলে পড়ার দৃশ্য চোখে পড়ার মতো। অথচ প্রতি বছর সরকারের পক্ষ থেকে স্কুলের জন্য অর্থ বরাদ্দ এলেও কোন উন্নয়ন করা হয় না স্কুলের। স্টোর রুম তৈরি করার জন্য সহকারি শিক্ষকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বিদ্যালয়ের উত্তর দিকে বাঁশের বেড়া ও টিনের ছাউনি দিয়ে অরক্ষিত একটি কক্ষ তৈরি করেছেন কালীপদ সাহা। স্কুল চলাকালীন সময়ে সেখানে মোটরসাইকেল পার্কিং করা হয়। আর অরক্ষিত থাকার কারণে প্রায় রাতে সেখানে স্থানীয় মাদকসেবীদের মাদক সেবন ও জুয়ার আসর বসে বলে জানা যায়।

প্রধান শিক্ষক কালীপদ সাহা জানান, শিক্ষার্থীদের একটু শাসন না করলে তারা মানুষ হবে কিভাবে। আর কুলছুম পরিবারের অনেক আদরের মেয়ে বলে বাড়িতে একদম পড়ালেখা করে না। তাই সেদিন ক্লাসে পড়া বলতে না পারার কারণে একটু শাসন করেছি। ম্যানেজিং কমিটির বিষয়ে তিনি জানান সরকারের বেধে দেওয়া নিয়মের মধ্যেই আমি ম্যানেজিং কমিটি গঠন করেছি। তবে নতুন কমিটি এখনো বিভিন্ন জটিলতার কারণে অনুমোদন পায়নি। প্রতিবছর সরকারি বরাদ্দ আসা সত্তে¡ও স্কুলের বেহাল দশার বিষয়ে প্রধান শিক্ষক জানান, গত ২বছর করোনা ভাইরাসের কারণে বরাদ্দের অর্থ দিয়ে শিক্ষার্থীদের আসাইনমেন্টের খরচ ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার সরঞ্জাম কিনতে হয়েছে তাই ¯িøপের ও অন্যান্য বরাদ্দ পাওয়ার অর্থ দিয়ে স্কুলের কোন উন্নয়নের কাজ করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। আর অন্যান্য বছরের বরাদ্দ দিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কাজ করা হয়েছে।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন জানান, শিক্ষার্থীদের প্রহার নয় ভালোবেসে পাঠদান করাতে হবে। প্রহার করলে ওই শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আমি বিষয়টি আপনার মাধ্যমে জানতে পারলাম। খোঁজ খবর নিয়ে আমি ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

আপনি আরও পড়তে পারেন