নজরুল ইসলাম লিখন, রূপগঞ্জ প্রতিনিধি :
আসন্ন ঈদুল আযহা উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার তারাবো, ভুলতা, গোলাকান্দাইল, মুড়াপাড়া, কাঞ্চন, দাউদপুর, ভোলাবো, কায়েতপাড়া ও বাগবেরসহ আশপাশের এলাকার খামারিরা সাড়ে ৯ হাজার পশু প্রস্তুত করেছেন। হরমোন ইনজেকশন এবং রাসায়নিক প্রাণঘাতী স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ প্রয়োগ না করে দেশীয় খাবার খাইয়ে এসব পশু পালন করা হচ্ছে।
উপজেলার দু’টি পৌরসভা ও সাতটি ইউনিয়নে ২৪৮ টি খামারে ৮ হাজার গরু ও কৃষকদের দেড় হাজার গরু, ছাগল, ভেড়া কুরবানির জন্য তারা প্রস্তুত করেছেন । রূপগঞ্জের চাহিদার চেয়েও এখানে বেশি পশু পালন করা হচ্ছে। যা উপজেলার বাইরে সরবরাহ করা হবে। গো খাদ্যের দাম চড়া ও পশু লালন পালনে খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় তারা পশুর দাম নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন । গত দু’বছর করোনায় লোকসান গুনতে হলেও এবার লাভের আশায় রাত দিন পশুকে লালন পালন করে আসছেন খামারিরা। তবে ভারত থেকে পশু আমদানী করা হলে খামারিরা লোকসানের মুখে পড়বেন বলে আশঙ্কা করছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার বাগবের এলাকার আলম এগ্রো ফার্মে ঈদুল আযহা উপলক্ষে দুই শতাধিক ষাড় কুরবানি করার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। ফার্মের পশুদের মধ্যে দেশীয় পদ্ধতিতে ঘাস, খড় ও ভুষি খাওয়ানো হচ্ছে। তিনি পশুর খাদ্যের জন্য নেপিয়ার ঘাস চাষ করেছেন। সারা বছরের জন্য কৃষকদের জন্য খড় কিনে গুটি দিয়েছেন। ৬/৭ জন্য কর্মচারী পশুর সেবায় নিয়োজিত রয়েছেন। লাল, সাদা ও কালো রংয়ের গরুর সংখ্যা এখানে বেশি। ফার্মে বৈদ্যুতিক পাখায় বাতাস ও পর্যাপ্ত পরিমাণ আলোর ব্যবস্থা রয়েছে। এখানে পশুর জন্য দেশীয় খাদ্য সরবরাহ করা হয়। তাদের মধ্যে খৈল, কুড়া, চালের খুদ, ছোলা, সয়াবিন, ভূষি, কাঁচা ঘাস, খড় নিয়মিত খাওয়ানো হয়। খামারগুলোতে শাহীওয়াল, ফ্রিজিয়ান, জার্সিসহ দেশীয় জাতের গরু পালন করা হয়।
ফার্মের মালিক আলম হোসেন বলেন, দশ বছর আগে তিনি দুই শতাংশ জমির উপর চারটি গরু দিয়ে আলম এগ্রো ফার্মের যাত্রা শুরু করেন। দিন দিন ফার্ম প্রসারিত হয়ে এখন বিশ শতাংশ জমিতে সম্প্রসারিত করা হয়েছে । ফার্মে এখন বিভিন্ন বয়সের ২ শতাধিক বিভিন্ন জাতের ষাড় গরু রয়েছে। এদের মধ্য থেকে শতাধিক ষাড় গরু এবারের কুরবানির হাটে বিক্রি করা হবে । তবে দেশীয় পদ্ধতিতে দেশীয় খাবার দিয়ে গরু প্রস্তুত করায় আলম এগ্রো ফার্মের গরু সব সময়ই ফার্মেই বিক্রি হয়ে যায়। হাটে বিক্রি করতে হয় না। ৩শ’ কেশি থেকে ৯ শ’ কেজি ওজনের গরু বিক্রি করা হয়। গরুর দুই বছর বয়সের আগে বিক্রি করা হয়না।
বাগবের গ্রামের আলহাজ¦ সামসুল হোসেন মাতবর বলেন, আমাদের চোখের সামনে ইনজেকশন ছাড়া দেশীয় পদ্ধতিতে গরু লালন পালন করায় গত আট বছর ধরে আলম এর্গ্রো ফার্ম থেকে আমি গরু ক্রয় করি। আলমপুর, গোবিন্দপুর, বাগবের, গোয়ালপাড়া, ইছাপুরা, দক্ষিণবাগ, গুতিয়াব, মুশুরিসহ আশপাশের অনেকেই এখান থেকে গরু ক্রয় করেন।
হারারবাড়ী গ্রামের ওমর ফারুক বলেন, ন্যায্য দামে বিক্রি হয় জেনেই এবার আলম এগ্রো ফার্ম থেকে গরু ক্রয় করেছি । ঈদের আগ পর্যন্ত তারা গরু লালন পালন করবেন। ঈদুল আযহার দিন সকালে ফার্ম থেকে গরু নিয়ে কুরবানি দিবো।
রূপসী এলাকার নাবিলা এগ্রো ফার্মের মালিক আব্দুল্লাহ খান মুন্না বলেন, পশুদের পুষ্টিকর কাঁচামাল দিয়ে তৈরিকৃত ক্যাটেল ফিড খাওয়ানো হয়। প্রাণঘাতী কোন ওষুধ কিংবা ইনজেকশন পশুর দেহে প্রয়োগ করা হয় না। তাতে গবাদী পশুর মাংস স্বাস্থ্যকর হয়। এছাড়া পশুর মৃত্যুর ঝুঁকিও থাকে না।
পবনকুলের সিয়ান এগ্রো ফার্মের মালিক লায়ন বি এম আতিকুর রহমান বলেন, ছাগল, ভেড়া ও গরু মোটাতাজাকরণে ব্যয় বাড়ছে। ভারতীয় পশুর আমদানি বন্ধ থাকলে আমরা বেশি লাভবান হবো।
লাভরাপাড়া এলাকার ছাদিকা এগ্রো ফার্মের মালিক কাকন মাহমুদ বলেন, ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী খামারিরা পশুকে দেশীয় খাবার খাওয়াচ্ছে। তাতে খরচ কম। লাভ বেশি। ঝুঁকিও কম । চাহিদাও বেশি।
পূর্বগ্রামের খাঁন এগ্রো ফার্মের মালিক আলহাজ¦ নুরুজ্জামান খাঁন বলেন, খামারিদের পশু রূপগঞ্জ উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে বাইরের উপজেলাগুলোতেও সরবরাহ করা যাবে । এবার বাজারের চেয়ে খামারেই ক্রয় বিক্রয়ের ব্যস্ত রয়েছে ক্রেতা বিক্রেতারা। ঈদের ১০/১২ দিন বাকি থাকলেও ক্রেতারা খামারগুলোতে ঘুরে ঘুরে গরুর দামের খোঁজ খবর নিচ্ছে।
রূপগঞ্জ উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা রিগ্যান মোল্া বলেন, এবার খামারিরা খুব যতœশীল। দেশীয় খাদ্যের উপর তারা নির্ভরশীল। খামারিদের প্রশিক্ষণ, করোনাকালীন প্রণোদনাসহ প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হচ্ছে। তাতে খামারিরা লাভবান হচ্ছে। অনেকেই পশু পালনে ঝুঁকছে।