নরসিংদীতে শিবপুরে রামবুটান চাষে ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন জামাল

নরসিংদীতে শিবপুরে রামবুটান চাষে ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন জামাল

সাইফুল ইসলাম রুদ্র, নরসিংদী জেলা প্রতিনিধি:
বিদেশি একটি ফলের নাম। দেখতে অনেকটা লিচুর মতো, তবে লিচুর চেয়ে আকারে বড়, ডিম্বাকৃতি, কিছুটা চ্যাপ্টা ধরনের। পাকা ফল উজ্জ্বল লাল, কমলা বা হলুদ রঙের হয়ে থাকে। ফলের খোসার উপরি ভাগ কদম ফুলের মতো চুল দিয়ে আবৃত। রামবুটান লিচুর মতোই চিরহরিত, মাঝারি উচ্চতা বিশিষ্ট লম্বা গাছ।
এই ফলটি জুলাই-আগস্ট মাসে ফল পাকে। অপুষ্ট ফলের রঙ সবুজ থাকে। ফল পুষ্ট হলে উজ্জ্বল লাল ও মেরুন রঙে পরিণত হতে থাকে এবং এক মাসের মধ্যে পাকা ফল সংগ্রহ করার উপযোগী হয়। ফলটি ভেতরে লিচুর মতো শাঁস থাকে। খেতে খুব সুস্বাদু ও মুখরোচক। এর রয়েছে ঔষধি ও পুষ্টিগুণ।
বিদেশি এ ফলের চাষ করে ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছেন নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার জয়নগর ইউনিয়নের অষ্টআনী গ্রামের মৃত হাশেম আলীর ছেলে প্রবাস ফেরত জামাল উদ্দিন। তিনি বারোমাসি জাতের রামবুটান চাষ করেছেন।
জানা যায়, জামাল উদ্দিন কাজের সন্ধানে প্রথমে মালয়েশিয়া ও পরে ২০০০ সালে ব্রুনাই জান। সেখান থেকে ২০০৬ সালে চাকরি ছেড়ে দেশে ফিরে আসার পথে অন্য জিনিসপত্রের সঙ্গে শখের বশে দেড় দুই কেজি রামবুটান ফল নিয়ে আসেন। আপনজনদের মাঝে বিলিয়ে বাকি ফলগুলো খাওয়ার পর ১৪-১৫টি বীজ নিজ বাড়ির আঙিনায় বপন করেন। তা থেকে জন্ম নেওয়া ৮টি চারা টিকে যায়। ধীরে ধীরে গাছগুলো বড় হয়ে ৬ বছর বয়সে ফল আসে। বর্তমানে তাঁর বাগানে ছোট বড় মিলিয়ে ১০টি গাছ রয়েছে। যা থেকে এবছর প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকার ফল বিক্রি করেছেন।এছাড়া বিক্রির জন্য প্রস্তুত করেছেন প্রায় ১৫শ চারা। জামাল উদ্দিনের এই সাফল্যের কথা এখন ছড়িয়ে গেছে দূর-দূরান্তে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে লোকজন আসছেন ফল ও চারা নিতে। কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠাচ্ছেন ফল ও চারা।
জামাল উদ্দিন বলেন, ‘প্রবাস জীবন সমাপ্ত করে দেশে ফিরে আসার সময় সঙ্গে করে নিয়ে আসা রামবুটানের ১৪-১৫টি বীচি নিজ বাড়ির আঙিনায় বপন করি। তা থেকে জন্ম নেওয়া ৮টি চারা টিকে যায়। ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠে আটটি রামবুটান গাছ। ছয় বছর পর ২০১২ সালে প্রথমবারের মতো একটি গাছে ফল আসে।
প্রথমবার পরিবারের সদস্যরাই ফলগুলো খেয়ে ফেলেন। দ্বিতীয় বছর একটি গাছ থেকে ফল বিক্রি করেন ১০ হাজার টাকা। তৃতীয় বছর মোট তিনটি গাছে ফল আসে বিক্রি করি ৫০ হাজার টাকা। চতুর্থ বছর তিনটি গাছ থেকে বিক্রি করি ৬০ হাজার টাকার ফল। এভাবে চলতে চলতে এ বছর আমি ১০টি গাছ থেকে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকার ফল বিক্রি করেছি।

তিনি বলেন, আমার এই গাছগুলোতে বারোমাস ফল ধরে। একবার শেষ হলে আবার ফল আসে। প্রতি কেজি ফল ১০০০ থেকে ১২শ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে থাকি। আর একটি চারা গাছ ৫শ থেকে ২ হাজার টাকায় বিক্রি করা যায়। এবছর রামবুটানের চারা ও ফল পাঁচ লাখ টাকার ওপরে বিক্রি করতে পারবো বলে আশা করছি। রামবুটানের মৌসুম আষাঢ়ের মাঝামাঝি থেকে শ্রাবণের শেষ পর্যন্ত। তবে আমার গাছগুলোতে বারমাসই ফল ধরে।’
এদিকে উপজেলায় লটকনের পাশাপাশি রামবুটান ফল ও এখন পরিচত হয়ে উঠেছে। বারোমাসই রামবুটান গাছে ফল ধরায় এর ব্যাপক চাহিদার সৃষ্টি হচ্ছে। ফল ও গাছের চারা কিনতে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে লোকজন আসছে তার বাড়িতে। ব্যাপক লাভজনক হওয়ায় অনেক কৃষকই বিদেশি এই গাছটির চারা সংগ্রহ করতে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। উপজেলার বিভিন্ন নার্সারিগুলোতেও পাওয়া যাচ্ছে এই ফলের চার। সেখান থেকেও চারা সংগ্রহ করছেন আগ্রহী কৃষকরা।
অষ্টআনী গ্রামের কৃষক রজব আলী জানান, তিনিও বেশ কিছু রামবুটানের চারা রোপণ করেছেন। অপর কৃষক মজনু মিয়া জানান, তিনিও রামবুটানের বাগান করেছেন। চলতি বছর ১০ হাজার টাকার ফল বিক্রি করতে পারবেন বলে তিনি জানান।
জয়নগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাদিম সরকার বলেন, তিনি একজন বারোমাসি রামবুটানের সফল চাষি। নিজে লাভবান হচ্ছেন, অন্যদেরও রামবুটান চাষে উৎসাহিত করছেন। সে ফল ও চারা বিক্রি করছেন।
শিবপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ বিন সাদেক বলেন, শিবপুরের উঁচু বা টিলা এলাকায় নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলতে যাচ্ছে রামবুটান। আমি জামাল উদ্দিনের রামবুটানের বাগান পরিদর্শন করেছি। এসময় দেখতে পেয়েছি, তার রামবুটান গাছগুলোতে কোনটায় ফুল-ফল ধরেছে, কোনটার ফল পেকে গেছে।
তিনি আরও বলেন, এই ফলের মৌসুম প্রতি বছরের জুলাই- আগস্ট। তবে তার বাগানে সবসময়ই ফল পাওয়া যায়। এই গাছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশি। তাই কোন কীটনাশক ব্যবহার করার প্রয়োজন পড়ে না। এই ফল চাষে আমি প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা শিবপুর কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. সৈয়দ মো: মিজানুর রহমান বলেন, “জামাল উদ্দিনের রামবুটানের বাগানটি পরিদর্শন করেছি। সে একজন সফল চাষি। রামবুটান ফলটি লিচু পরিবারের। এর আদি নিবাস মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া। এই ফল চাষের জন্য শিবপুরের মাটি ও আবহাওয়া অনুকূল।”

 

 

আপনি আরও পড়তে পারেন