নালিতাবাড়ীতে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির কার্ডের জন্য টাকা নেওয়ার অভিযোগ

নালিতাবাড়ীতে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির কার্ডের জন্য টাকা নেওয়ার অভিযোগ

মেহেদী হাসান সাকিব, নালিতাবাড়ী (শেরপুর) সংবাদদাতা: শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার রূপনারায়ণকুড়া ইউনিয়নের নিচপাড়া গ্রামের দিনমজুর সুরুজ আলী (৫৫)। নিজের ভিটেমাটি না থাকায় অন্যের দেওয়া জমিতে সরকারের তুলে দেওয়া টিনশেড ঘরে ছয় সদস্যের পরিবার নিয়ে তিনি বসবাস করেন। সম্প্রতি খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল কিনতে তালিকাভুক্তির জন্য তাঁকে বাধ্য হয়ে জনপ্রতিনিধির হাতে এক হাজার টাকা দিতে হয়েছে। কার্ড পেতে এই অর্থ শুধু সুরুজ আলীকে একা গুনতে হয়নি। তাঁর মতো রূপনারায়ণকুড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৯টি ওয়ার্ডের প্রায় ৮০০ দরিদ্র মানুষের কাছ থেকে কার্ডের জন্য এক হাজার টাকা করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যদের বিরুদ্ধে।

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ প্রকল্প খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি। এই কর্মসূচির আওতায় রূপনারায়ণকুড়া ইউনিয়নে এক হাজার ২৬৭ জন তালিকাভুক্ত উপকারভোগীর মধ্যে অনলাইনে যাচাই-বাছাইয়ে টিকেছেন ১ হাজার ২ জন। কর্মসূচির আওতায় উপকারভোগীরা ১৫ টাকা কেজি দরে প্রতি মাসে ৩০ কেজি চাল কিনতে পারবেন। খাদ্য অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণে প্রতিটি ইউপি কর্মসূচির উপকারভোগীর নাম বিনা মূল্যে তালিকাভুক্তি ও তথা যাচাই-বাছাইয়ের কথা রয়েছে।
ভুক্তভোগী পরিবার ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রূপনারায়ণকুড়া ইউপি চেয়ারম্যান মুঞ্জুর আল মামুন তাঁর ইউপি সদস্যদের নিয়ে সম্প্রতি একটি সভা করেন। সভায় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির তালিকাভুক্তির জন্য উপকারভোগীদের কাছ থেকে এক হাজার করে টাকা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে ইউপি সদস্যরা ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডের প্রায় ৮০০ উপকারভোগীর নাম অর্ন্তভুক্তির কথা বলে জনপ্রতি ১ হাজার টাকা উত্তোলন করেন।

ভুক্তভোগী তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘মহিলা ইউপি সদস্য রোকসানা উপকারভোগীদের কাছ থেকে সরাসরি চেয়ারম্যানের কথা বলেই এ টাকা নিয়েছেন। আমি নিজেও প্রথমে ৫০০ টাকা দিই। কিন্তু এতে হবে না জানালে পরে কার্ড পেতে আমি আরও ৫০০ টাকা দিয়েছি।’ সুরুজ আলী বলেন, ‘তালিকায় রাখতে এক হাজার টাকা চাইছে মেম্বারনি (সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য)। পরে ঋণ কইরা এক হাজার টাকা দিছি। অহনওতো কার্ড পাইছি না।’

ভুক্তভোগী শামসুল হক বলেন, ‘উদ্যোক্তার কাছ থেকে ফরম সংগ্রহ করে চেয়ারম্যানের কাছে গিয়েছিলাম। পরে তিনি পরামর্শ দেন ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেনের কাছে জমা দিতে। পরে আনোয়ারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি খরচাপাতির কথা বলে এক হাজার টাকা দাবি করেন।’ এ ব্যাপারে ইউপি সদস্যদের কাছে জানতে চাইলে তাঁরা টাকা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন। তবে ইউপি সদস্য রোকসানা বলেন, ‘আমাদের প্রতিদ¦›দ্বী রয়েছে। তাঁরা হয়তো এই অভিযোগ দিয়েছেন।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাবেক এক ইউপি সদস্য বলেন, সন্ধ্যার পর মাদ্রাসা বাজারে শত শত মানুষের সামনে ইউপি সদস্যরা খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির তালিকাভুক্তির জন্য মানুষের কাছে এক হাজার করে টাকা নিয়েছেন। এ বিষয়ে কেউ জানতে চাইলে ইউপি সদস্যরা চেয়ারম্যানের নির্দেশ রয়েছে বলে জানিয়েছেন।

রুপনারায়নকুড়া ইউপি চেয়ারম্যান মুঞ্জুর আল মামুন বলেন, ‘মেম্বারদের ও আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে। কতজন কার্ড পাবেন, সেই সংখ্যাই আমি এখনও জানি না। তবে কার্ডের জন্য কেউ কেউ জোর করে মেম্বারদের কাছে টাকা দিয়ে যেতে পারেন। তবে এটা আমার জানা নেই। আমাকে হেয়পতিপন্ন করতে এই অভিযোগ করা হয়েছে।’

 

আপনি আরও পড়তে পারেন