হোসেনপুরে ছাদ বাগানে সফল রেজাউল করিম রাসেল।

হোসেনপুরে ছাদ বাগানে সফল রেজাউল করিম রাসেল।
মাহফুজ হাসান,স্টাফ রিপোর্টার:
কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো এখনও ছাদ বাগান জনপ্রিয়তা অর্জন করেনি। তবুও মাত্র তিন শতাংশ জমির উপর নির্মিত তিনতলা ভবনের ছাদের উপর শখের ছাদ বাগানে বিভিন্ন প্রজাতির ফলের ফলন ধরিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন রেজাউল করিম রাসেল নামের স্থানীয় এক কলেজের অধ্যাপক।
আমাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো নিরাপদ খাদ্য। আর নিরাপদ খাদ্য পেতে হলে নিরাপদ সবজি ও ফলমূল উৎপাদন করা প্রয়োজন। আমরা সাধারণত বাজার থেকে যে সমস্ত সবজি ও ফলমূল ক্রয় করে থাকি তাতে ফরমালিন ও বিভিন্ন ক্যামিকেলযুক্ত হওয়ায় লিভার সিরোসিস, হার্ট অ্যাটাক, কিডনি দুর্বল ও ক্যানসারসহ বিভিন্ন রোগে প্রতিনিয়ত আক্রান্ত হচ্ছে। এসকল দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে পরিবারের সদস্যদের মুক্ত রাখার পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি ও ছাদ বাগানের প্রতি অন্যান্যদের আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে নিজের বাসায় ছাদ বাগান তৈরি করেছেন রেজাউল করিম রাসেল। তিনি তার শখের ছাদ বাগানকে তার সাফল্যের হাতছানি হিসেবেই দেখছেন বলে জানান।
রেজাউল করিম রাসেল কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে সিদলা ইউনিয়নের কৃতি সন্তান। তিনি পাকুন্দিয়া মহিলা কলেজে ইংরেজি বিষয়ের অধ্যাপক।
হোসেনপুর উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন মাত্র তিন শতাংশ জমি ক্রয় করে তাতে তিনতলা বিশিষ্ট একটি ভবন তৈরি করেন তিনি এবং সেই ভবনের ছাদেই তাঁর স্ত্রীর অনুপ্রেরণা ও উৎসাহে ২০১৯সালে ছাদ বাগান তৈরি করেন। পরবর্তী করোনাকালীন সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ছাদ বাগানে গাছ গাছরা পরিচর্যায় মনোনিবেশ করেন।
বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করে বারি মাল্টা, থাই পেয়ারা, আনার, আমরা, সফেদা, কুল, কমলা, লেবু, শওদা পেয়ারা, ডালিম, চেরী, সুইট লেমন, কামরাঙ্গা, জামরুল, বিলম্বা, পেচতা, চায়না কমলা, পলি পেয়ারা, মেহেদী, ড্রাগন, আখ, কাগজী লেবু, সজিনা, আম, ঢেড়স, বেগুন, পেঁপে চিচিংগা, পুইশাকসহ আরো অনেক ফল ও সবজির চারা রোপণ করেন তার ছাদ বাগানে। শিক্ষকতার পাশাপাশি অবসরে বাগানে পানি দেয়া, আগাছা পরিষ্কার করা থেকে শুরু করে পরম মমতায় বাগানটির নিবিড় পরিচর্যা করে ফুলে ফলে ভরিয়ে তুলেছেন অধ্যাপক রেজাউল করিম রাসেল।
ছাদ বাগানের উদ্যোক্তা ও কলেজ অধ্যাপক মো. রেজাউল করিম রাসেল বলেন, ‘প্রকৃতি আমাকে সহযোগিতা করেছে। আমি ছাদের চাষাবাদে গোবর মেশানো মাটি অর্থাৎ জৈব সার ছাড়া কিছুই ব্যবহার করছি না। ছাদ কৃষির মাধ্যমে আমরা সহজেই নিজেদের দোরগোড়ায় ভেজালমুক্ত খাদ্য পাচ্ছি। ফলে আমার কোনো ফলমুল, শাক-সবজি আর বাজার থেকে তেমন কিনতে হয় না। এখানে দেশী বিদেশী বহু প্রজাতির ফলমূল ও সবজির চারা রয়েছে। জীবনের জন্য নিরাপদ ও বিষযুক্ত ফলমূল খাওয়াই তার ছাদ বাগানের প্রধান লক্ষ্য বলে ও জানান তিনি। তাই যাদের ছাদ খালি রয়েছে তাদের ছাদে বাগান করার পরামর্শ দেন তিনি।
ছাদ বাগান বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ ইমরুল কায়েস জানান, দেশের এক ইঞ্চি জমিও খালি থাকবে না, প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনার আলোকে পারিবারিক পুষ্টি বাগান হিসেবে বাড়ি বাড়ি বসত ভিটা বাগান করা হচ্ছে। এছাড়া তাদের বাড়ির ছাদগুলো খালি পড়ে আছে তাতে ছাদ বাগান করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। নিরাপদ, বিষমুক্ত-ফলমূল ও সবজি উৎপাদনে ছাদ বাগান বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

আপনি আরও পড়তে পারেন