নিজেই পরমুখাপেক্ষী, তিনিই আবার কবিরাজি করে সুস্থ করেন অন্যদের

নিজেই পরমুখাপেক্ষী, তিনিই আবার কবিরাজি করে সুস্থ করেন অন্যদের

রিপন কান্তি গুণ, নেত্রকোনা প্রতিনিধি;

নেত্রকোনার সীমান্তবর্তী উপজেলা কলমাকান্দার, লেঙ্গুড়া ইউনিয়ন উত্তর তারানগর গ্রামের বাসিন্দা যিনি এলাকাবাসীর কাছে বিমল চন্দ্র মারাক ‘বিজ্ঞান কবিরাজ’ হিসেবেই পরিচিত। চিকিৎসার নামে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়া ও নারী কেলেঙ্কারিসহ নানা অপকর্মের অভিযোগ উঠেছে  ঐ কবিরাজের নামে।

ভুক্তভোগী এলাকাবাসীর সাথে কথা বললে, তারা ‘বিজ্ঞান কবিরাজ’ এর বিরুদ্ধে মানুষের সাথে প্রতারণা এবং অনৈতিক কর্মকান্ডের অভিযোগ তুলেছেন।

এ বিষয়ে খোঁজ নিতে বিজ্ঞান কবিরাজের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তিনি নিজেই অন্যের কাঁদে ভর করে চলাফেরা করেন এমনকি তিনি কথা পর্যন্ত বলতে পারেন না।

ধর্মীয় এবং সামাজিক স্বীকৃতি না পাওয়া তার তৃতীয় পক্ষের স্ত্রী রুপরেমার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী’র স্বপ্নে পাওয়া তন্ত্রমন্ত্র ও তাবিজ-কবজ দিয়ে রোগীদের সুস্থ করে থাকি। কোন রোগের জন্য কি ঔষধ দিতে হবে, তিনিই (স্বামী) আমাকে ইশারায় দেখিয়ে দেন আর আমিই সব করি।’

কবিরাজের তৃতীয় স্ত্রীর ছেলে ইনমানুয়েল রেমা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা কি করছি না করছি এটা আপনারা জিজ্ঞেস করার কে? আপনারা এখান থেকে ভালোয় ভালোয় চলে যান, না হয় আমাদের হাত কিন্তু অনেক লম্বা’ এসব বলে উপস্থিত সাংবাদিকদের হুমকি দেন তিনি।

কবিরাজে’র প্রথম সংসারের বড় ছেলে সোহাগ মানখিন জানান, ‘শুরু থেকে অনেকবার নিষেধ করার পরেও তিনি লোকের সঙ্গে এই কবিরাজির নামে ভাওতাবাজি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। পাশাপাশি তিনি (বাবা)অবৈধভাবে একাধিক মহিলাদের সঙ্গে মেলামেশা করেন। এসব ভাওতাবাজি কবিরাজি আমরা কখনো বিশ্বাস করিনা।

তিনি আরও বলেন, আগে তিনি(বাবা) আমাদের ধর্মীয় একটি বেসরকারি স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। তার এই ভাওতাবাজি কবিরাজির ব্যবসা শুরু করার কারণে স্কুল থেকে তাকে বের করে দেওয়া হয়। তারপরও তিনি থেমে নেই। তার কাজ তিনি করেই যাচ্ছেন। আমরা এর প্রতিাদ করার কারণে আমাদের সঙ্গে ঝগড়া করে কোনরকম সামাজিক এবং ধর্মীয় স্বীকৃতি না থাকা সত্ত্বেও অবৈধ ভাবে রূপরেমা নামের এক মহিলাকে নিয়ে দু’জনে মিলে বিভিন্ন অসামাজিক এবং লোক ঠকানো এই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।

এ বিষয়টি কলমাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, বিমল চন্দ্র মারাক যা করছেন তা সম্পূর্ণ ভাঁওতাবাজি। কবিরাজি বলতে কোন কিছুই  নাই। বিষয়টি আমি অবগত ছিলাম না, আপনাদের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পারলাম। তদন্ত সাপেক্ষে এর আইনানুগ ব্যবস্থা নিব।

এ বিষয়ে কলমাকান্দা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জানান, আমি বিষয়টি জানতামনা। ‘আপনাদের মাধ্যমে আমি বিষয়টি অবগত হয়েছি। ‘লেঙ্গুড়া ইউনিয়নের ভিট পুলিশিংয়ের দায়িত্বে যিনি আছেন, তাকে এ বিষয়ে যথাযথ তদন্ত করে এর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তাকে বলে দেওয়া হয়েছে।’

এ ব্যাপারে নেত্রকোণা জেলার সিভিল সার্জন ডাক্তার মো. সেলিম মিয়ার সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, মেডিকেল সাইন্সের ভাষায় কবিরাজি বলতে কোন কিছুই নেই। আমি বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে দেখব তার ব্যাপারে কি আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যায়।

 

আপনি আরও পড়তে পারেন