ছাগলকাণ্ডে ছেলে ইফাতের পরে বেরিয়ে আসছে বাবা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য (শুল্ক ও আবগারি) ও ভ্যাট আপিল ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট ড. মতিউর রহমানের আরও তথ্য। দেশের বিভিন্ন জায়গায় নিজের পরিবারের বিভিন্ন লোকের নামে নানারকম সম্পত্তির বানিয়েছেন তিনি। এর মধ্যে নরসিংদীর রায়পুরা, গাজীপুরসহ নানা স্থানে ড. মতিউরের প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ লাকির বিপুল সম্পত্তি নিয়েও চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
লায়লা কানিজ লাকি ঢাকার সরকারি তিতুমীর কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ছিলেন। শিক্ষকতা পেশা পরিবর্তন করে রাজনীতিতে যোগ দিয়ে নেতা বনে যান। প্রথমে রায়পুরা উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হন। পরিচিতি লাভ করেন স্থানীয় এমপি রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজুর ঘনিষ্ঠজন হিসেবে। স্থানীয়রা বলছেন, ২০২৩ সালে রায়পুরা উপজেলা পরিষদের উপনির্বাচনে প্রভাবশালী স্বামীর অর্থ খাটিয়ে লাকি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এ ছাড়া নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও দুর্যোগবিষয়ক সম্পাদকের পদ নেন।
অন্যদিকে, রায়পুরার মরজালে ১৩৩ শতাংশ জমির ওপর লাকির নামে গড়ে তোলা হয়েছে আলিশান ওয়ান্ডার পার্ক ও ইকো রিসোর্ট। এ ছাড়া নিজ এলাকায় গড়েছেন দৃষ্টিনন্দন আলিশান বহুতল লাকি কটেজ। বাড়ির পাশে লায়লা কানিজ লাকি সড়কও রয়েছে।
এ ছাড়া গাজীপুরের পূবাইলে লাকির নামে আপন ভূবন নামে বিনোদন পার্ক ও পিকনিক স্পট থেকে শুরু করে রয়েছে বাণিজ্যিক এলাকায় কোটি কোটি টাকার জমি-প্লট। তা ছাড়া নরসিংদী ও ঢাকায় রয়েছে আলিশান বিলাসবহুল বাড়ি। লাকি ও তার সন্তানরা চড়েন দামি ব্র্যান্ডের গাড়িতে।
সর্বশেষ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে জমা দেয়া হলফনামায় লাকি ২২টি পৃথক পৃথক স্থানে তার সম্পত্তির কথা উল্লেখ করেছেন। হলফনামায় স্থাবর সম্পত্তি হিসেবে তিনি রাজউকের ৫ কাঠা জমি, সাভারে ৮.৫ কাটা জমি, গাজীপুরে ৫ কাঠা, পূবাইলে ৬.৬০ শতাংশ ও ২.৯০ শতাংশ জমি, গাজীপুরের খিলখাঁও এলাকায় ৫ শতাংশ ও ৩৪.৫৫ শতাংশ জমি, বাহাদুরপুরে ২৭ শতাংশ জমি, মেঘডুবীতে ৬.৬০ শতাংশ জমি, নাটোরের সিংড়ায় ১৬৬ শতাংশ জমি দেখিয়েছেন। মরজাল বাসস্ট্যান্ডের পাশে ১৩৩.৫০ শতাংশ জমিতে গড়ে তোলা ওয়ান্ডার ল্যান্ড পার্কের মূল্য দেখিয়েছেন মাত্র ৫৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা। প্রকৃতপক্ষে ওয়ান্ডার ল্যান্ড পার্কে কমপক্ষে ১৫০ একরের বেশি জমি রয়েছে। এসব জমির বেশিরভাগই কমদাম দিয়ে দখল করা বলে দাবি স্থানীয়দের।
লাকি হলফনামায় রায়পুরায় ৫.২৫ শতাংশ জমিতে নিজের বিলাসবহুল একতলা ভবনের মূল্য দেখিয়েছেন ১৬ লাখ ৮৮ হাজার টাকা। পাশে একই জমিতে ৮.৭৫ শতাংশ জমিতে গড়ে তুলেছেন আরেকটি বিলাসবহুল ডুপ্লেক্স ভবন, যার মূল্য দেখিয়েছেন ৩১ লাখ ৭৪ হাজার টাকা। এ ছাড়া নরসিংদী ও গাজীপুরের ৯টি স্থানে ২৭৮.৯৩ শতাংশ জমির উল্লেখ করলেও, তার মূল্য উল্লেখ করেননি।
ব্যাংকে রয়েছে তার তিন কোটি ৫৫ লাখ টাকা। পাশাপাশি রয়েছে বন্ড, স্টক এক্সচেঞ্জের তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও বিলাসবহুল গাড়ি। এ ছাড়া ঢাকায় ঠিকানাবিহীন একটি ফ্ল্যাটের মূল্য দেখিয়েছেন ৫৫ লাখ ৫০ হাজার ৪৭৫ টাকা।
সম্প্রতি ছাগল কেনার ঘোষণা দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হইচই তৈরির পর অনেকে ইফাতের অর্থের উৎস নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এমন পরিস্থিতিতে ইফাতের বাবা মতিউর রহমানের নাম সামনে আসে। অনেকে তাঁর অঢেল সম্পদের তথ্য দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেন। একজন সরকারি কর্মকর্তার ছেলের ১২ লাখ টাকা দিয়ে কোরবানির পশু কেনার সামর্থ্য হলো কী করে, সেই প্রশ্নও ওঠে।