সরকার পতনের পর সহিংসতায় গুলিবিদ্ধ আরও ১০ জনের মৃত্যু

সরকার পতনের পর সহিংসতায় গুলিবিদ্ধ আরও ১০ জনের মৃত্যু

এক দফা দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা কর্মসূচি ঘিরে সৃষ্ট সহিংসতায় গুলিবিদ্ধ হয়ে আহতদের মধ্যে আরও ১০ জন মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ছয়জন এবং দেশের অন্যান্য হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় চারজন মারা যান।

ঢামেক সূত্র জানায়, গতকাল ঢামেকে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয়েছেন আহত ৮০ জনের বেশি। আর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল সকালে একজনের মৃত্যু হয়। এ ছাড়া বিকেলে রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে পাঁচজনকে মৃত অবস্থায় আনা হয়।

মারা যাওয়া দুজনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন- রাজধানীর মগবাজার ওয়্যারলেস রেলগেট এলাকার ইমরান (৩৫) এবং নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের রাব্বি (২৪)। বাকি চারজনের মধ্যে রয়েছেন উত্তরায় গুলিবিদ্ধ অজ্ঞাত (২২), যাত্রাবাড়ীর অজ্ঞাত (৩৫), রাজারবাগ পুলিশ লাইনসের অজ্ঞাত (৪০) ও যাত্রাবাড়ীর অজ্ঞাত (৩৮)।

গুলিবিদ্ধ হওয়ার চার দিন পর রাজশাহী মহানগর ছাত্রশিবিরের সাংগঠনিক সম্পাদক আলী রায়হান (২৮) মারা গেছেন। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল সন্ধ্যায় তিনি মারা যান। এর আগে, ৫ আগস্ট নগরীর আলুপট্টি মোড় এলাকায় রায়হান গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন।

রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফ এম শামীম আহম্মদ বলেন, রায়হানের মাথায় গুলি লেগেছিল। অস্ত্রোপচারও করা হয়েছিল। তার শারীরিক অবস্থা খুবই সংকটাপন্ন ছিল।

ফেনীর সোনাগাজী উপজেলায় গুলিবিদ্ধ মাহবুবুল হাসান চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। গত বুধবার বিকেলে মৃত্যু হয় তাঁর। মাহবুবুল চট্টগ্রাম কলেজের স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন।

সাভারে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। তার নাম আসিকুল ইসলাম সাদ (২২)। তিনি ধামরাই পৌর এলাকার কায়েতপাড়া এলাকার বাসিন্দা। সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল সকালে তার মৃত্যু হয়।

এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার ইউছুফ আলী বলেন, গুলিবিদ্ধ আসিকুলকে ৫ আগস্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল সকাল ১০টার দিকে তিনি মারা যান।

 

লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলায় গুলিবিদ্ধ শিক্ষার্থী মিরাজ খাঁন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল সকালে মারা গেছেন। মিরাজ উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের বারঘড়িয়া সর্দারপাড়া গ্রামের আব্দুস সালামের ছেলে। তিনি ঢাকার যাত্রাবাড়ীর দনিয়া মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী।

বরিশালের মুলাদী উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি এস এম কামাল পাশার বসতঘর পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। গত বুধবার সন্ধ্যার পরে উপজেলার মুলাদী সদর ইউনিয়নের দড়িচর লক্ষ্মীপুর গ্রামে এই ঘটনা ঘটে।

ওই সময় ঘরের মধ্যে কেউ না থাকায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। এ ছাড়া বুধবার রাতে উপজেলার কাঠেরপুল এলাকায় নারী ইউপি সদস্য মনির বসতঘর পুড়িয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। মনি মুলাদী সদর ইউনিয়ন পরিষদের ৮, ৯ ও ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য। দুর্বৃত্তরা ঘরের মালামাল লুট করেছে বলে জানা গেছে।

 

এদিকে যশোরের মনিরামপুর উপজেলার খেদাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান আব্দুল আলীম জিন্নাহর বাড়িতে লুটপাট করতে এসে প্রতিরোধের মুখে পালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। গত বুধবার সন্ধ্যায় হেলাঞ্চি গ্রামে ওই ঘটনা ঘটে। একই রাতে মশ্মিমনগর ইউপির চেয়ারম্যান আবুল হোসেনের খামার থেকে আটটি গরু ও নয়টি ছাগল লুটের ঘটনা ঘটেছে।

পরে অবশ্য চেয়ারম্যানকে একটি গরু ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক আসাদুজ্জামানের খামারে থাকা সাতটি গরু ও বেশ কয়েকটি হাঁস লুট হয়েছে। পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে খামারে রাখা দুটি মোটরসাইকেল।

এ ছাড়া মনোহরপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি কালিপদ বিশ্বাসের গোয়ালঘর থেকে গরু নিয়ে বনভোজন করার খবর পাওয়া গেছে। কুলটিয়া ইউপির চেয়ারম্যান শেখর চন্দ্রের বাড়িসহ কুলটিয়া, দূর্বাডাঙ্গা ও খানপুর ইউনিয়নের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কয়েকটি বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।

আপনি আরও পড়তে পারেন