৩ শতাধিক ট্রেনযাত্রীর প্রাণ বাঁচালেন শাহান মিয়া

রোববার রাতে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় বরমচাল সেতু ভেঙে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনার পরপরই মধ্যরাতে ৯৯৯ এ কল দিয়ে সর্বপ্রথম ট্রেন দুর্ঘটনার খবর জানিয়েছিলেন যুবক শাহান মিয়া। তার ফোন পেয়ে সেই রাতেই ছুটে আসে পুলিশ সদস্যা। তারা আহত মানুষের সঙ্গে সঙ্গে উদ্ধার কাজে নেমে পড়ে।

ধারণা করা হচ্ছে সময় মতো শাহান ইমারজেন্সি নম্বরে ফোন না দিলে আরও অনেক প্রাণহানির ঘটনা ঘটত।

শাহান মিয়ার বাড়ি কুলাউড়ার আকিলপুর গ্রামে। তিনি কুলাউড়া ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিষয়টি নিশ্চিত করে কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উয়ারদৌস হাসান বলেন, রাত ১২টার কিছুক্ষণ আগে এক ব্যক্তি ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিয়ে ট্রেন দুর্ঘটনার খবর জানায়। এত রাতে বড় ধরনের ট্রেন দুর্ঘটনার খবর শুনে অবাক হই আমরা। সেই সঙ্গে তখনই ঘটনাস্থলের উদ্দেশ্য রওনা দেই। সেখানে গিয়ে ৬ জনের মরদেহ এবং অন্তত দুই শতাধিক মানুষকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। দুর্ঘটনার পরপরই ওই যুবক ৯৯৯ নম্বরে ফোন না দিলে বড় ধরনের ঘটনা ঘটত।

ওসি আরও বলেন, ইতিমধ্যে উদ্ধারকাজ শেষ হয়েছে। আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। হতাহতদের উদ্ধারে কাজ করেছে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও বিজিবি। ট্রেনের অন্য যাত্রীদেরও নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দেয়া হয়েছে।

ট্রেন দুর্ঘটনার বর্ণনা দিয়ে শাহান মিয়া বলেন, আমি বাজার থেকে বাড়ি ফিরছিলাম। বরমচাল সেতুর অনেকটা দূরে আমি তখন। হঠাৎ বিকট শব্দ কানে আসে। সেই সঙ্গে ভেসে আসে মানুষের কান্না, চিৎকার। দূর থেকে তাকিয়ে দেখে, বরমচাল সেতু ভেঙে ট্রেনের বগি নিচে। কাছে যেতেই মানুষের কান্নার আওয়াজ আরও জোরে শোনা যায়। ঘটনার ২-৩ মিনিটের মধ্যেই আমি ৯৯৯ নম্বরে ফোন দেই। সঙ্গে সঙ্গে রিসিভ হয় ফোন। তখন পুলিশকে পুরো ঘটনা খুলে বলি। যদি সময়মতো পুলিশ না আসতো আরও অনেক মানুষের প্রাণহানি ঘটত।

তিনি আরও বলেন, বরমচাল স্টেশন সংলগ্ন সেতুতে হঠাৎ ট্রেনের ছয়টি বগি লাইনচ্যুত হয়ে খালে পড়ে যায় এবং একটি বগি উল্টে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই কয়েকজনের মৃত্যু হয়। এছাড়া লাইনচ্যুত বগির যাত্রী ছাড়াও মারাত্মক ঝাকুনিতে অন্তত দুই শতাধিক যাত্রী আহত হয়। ঘটনাস্থলে এসে আহতদের উদ্ধার করেছে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস।

প্রসঙ্গত, রোববার রাত ১২টার দিকে কুলাউড়ার বরমচাল স্টেশনের পাশে ঢাকাগামী উপবনের বগি ছিটকে পড়ে। তিন শ যাত্রী নিয়ে রাতে সিলেট স্টেশন থেকে যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্য ওই ট্রেনটি ছেড়ে যায়। এ ঘটনায় তিনজন নারী ও তিনজন পুরুষসহ মোট ৬ জন নিহত হয়েছে।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সিলেটের সহকারী পরিচালক মুজিবুর রহমান বলেন, হতাহতদের উদ্ধার সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ, দক্ষিণ সুরমা ও সিলেট সদর দফতর থেকে দমকল বাহিনীর একাধিক ইউনিট উদ্ধার তৎপরতায় যোগ দেয়। রাত ৪টার দিকে উদ্ধার কাজ শেষ হয়েছে।

আপনি আরও পড়তে পারেন