আফগান রান পাহাড়ের নিচে বাংলাদেশ

বাংলাদেশের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে রানের পাহাড় গড়েছে আফগানিস্তান। প্রথম ইনিংসে ৩৪২ রেকর্ড রানের পর দ্বিতীয় ইনিংসে আট উইকেট হারিয়ে ২০৫ রান করে তৃতীয় দিন শেষ করেছে দলটি। কাল রোববার চতুর্থ দিন আবারও ব্যাট করতে নামবেন রশিদ-নবীরা। ইতিমধ্যে টাইগারদের থেকে ৩৭৪ রানে এগিয়ে আছে সফরকারীরা।

বাংলাদেশকে এই রানের পাহাড় টপকে জিততে হলে রেকর্ড গড়তে হবে। এর আগে কখনো ২১৫ রানের বেশি তাড়া করে জিততে পারেনি টাইগাররা। আফগানদের হয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে সর্বোচ্চ রান করেন ইবরাহীম জাদরান। তার ব্যাট থেকে আসে ৮৭ রান। এর আগে গত ম্যাচে সেঞ্চুরি বঞ্চিত আসগর আফগান এই ম্যাচেও  ৫০ রান করেন।

আফসার জাজাই ৩৪ ও ইয়ামীন জাজাই ০ রানে অপরাজিত আছেন। টাইগারদের হয়ে একমাত্র সফল বোলার সাকিব আল হাসান। এই বাঁহাতি অলরাউন্ডার সর্বোচ্চ তিন উইকেট নেন। দুটি করে উইকেট নেন তাইজুল ইসলাম ও নাঈম হাসান।

আলো স্বল্পতার কারণে খেলা বন্ধ ঘোষণা

আফগানিস্তানের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে আলোর স্বল্পতার কারণে তৃতীয় দিনের খেলা বন্ধ ঘোষণা করে দেন আম্পায়ার। কিছুক্ষণ বন্ধ থাকার পর পর্যাপ্ত আলো না থাকায় এই ঘোষণা দেন আম্পায়ার। এ জন্য চতুর্থ দিনের খেলা নির্ধারিত সময়ের ২০ মিনিট আগে খেলা শুরু হবে। খেলা বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত আফগানিস্তান ৩৭৪ রানে এগিয়ে আছে।

রেকর্ড গড়েই জিততে হবে সাকিবদের

সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের হাত থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে চট্টগ্রাম টেস্ট। টেস্ট ক্রিকেটের নবাগত এই দলটির বিপক্ষে জিততে হলে বাংলাদেশকে ভাঙতে হবে পুরোনো রেকর্ড, গড়তে হবে নতুন রেকর্ড।

এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ২১৫ রানের বেশি তাড়া করে কখনো জেতেনি সাদাপোশাকের ক্রিকেটে। সর্বশেষ আরও ১০ বছর আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২১৫ রান তাড়া করে চার উইকেটে জিতেছিল টাইগাররা। আফগানিস্তান ইতিমধ্যে ৩৭৪ রানে এগিয়ে আছে। হাতে এখনো দুই উইকেট, কোথায় গিয়ে তারা থামেন দেখার বিষয়।

সাকিব-মুশফিকদের সামনে অগ্নি পরীক্ষা

চট্টগ্রাম টেস্টের পিচ সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ভয়ংকর হয়ে উঠছে। টেস্টের তৃতীয় দিন প্রথম সেশনেই উইকেট পড়েছে পাঁচটি। বাংলাদেশের দুই ও আফগানিস্তানের তিন উইকেট পড়েছে লাঞ্চ বিরতিতে যাওয়ার আগে। প্রথম ইনিংসে দুর্দান্ত খেলায় এই ম্যাচে এগিয়ে আছে আফগানিস্তান। বাংলাদেশ থেকে ১৩৭ রানে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমেছিল আফগানরা।

এখন পর্যন্ত যেভাবে ব্যাট করছে তারা ৩০০ কিংবা তারও বেশি টার্গেট হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। চতুর্থ ইনিংসে এত তাড়া করা কঠিন হয়ে পড়বে সাকিব-মুশফিকদের জন্য। বিশেষ করে রশিদ-নবীদের স্পিন সামনে থেকে মোকাবেলা করে ম্যাচ বের করে নিয়ে আসা কষ্টসাধ্যও বটে।

লাঞ্চ বিরতিতে দুই দল

দ্বিতীয় ইনিংসে ২৬ ওভার খেলা হওয়ার পর লাঞ্চ বিরতিতে যায় দুইদল। বিরতিতে যাওয়ার আগে তিন উইকেট হারিয়ে আফগানিস্তান সংগ্রহ করে ৫৬। প্রথম ইনিংসের ১৩৭ রান সহ নবী-রশিদরা এগিয়ে আছে ১৯৩ রানে। ক্রিজে আছেন আসগর আফগান ১৬ ও ইবরাহীম জাদরান ২৪ রানে।

এবার নাঈম হাসান

সাকিবের জোড়া আঘাত সামলে কেটে ওঠার চেষ্টা করছিলেন হাশমতুল্লাহ ও ইবরাহীম। কিন্তু বেশিদূর যেতে দেননি নাঈম হাসান। হাসমতুল্লাহকে ১৬ রানে ফিরিয়ে স্বস্তি এনে দেন।

প্রথম ওভারেই সাকিবের জোড়া আঘাত

বাংলাদেশের থেকে ১৩৭ রানে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে খোশমেজাজেই ব্যাট করতে নেমেছিল আফগানিস্তান। কিন্তু সাকিবের ঘূর্ণি জাদুতে খুশির রেশ বেশিক্ষণ থাকেনি। এক ওভারেই দুই আফগানকে ফিরিয়ে শুরুতেই স্বস্তি এনে দেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার।

১৩৭ রানে পিছিয়ে বাংলাদেশ

আফগানদের দেওয়া ৩৪২ রানের লিডে খেলতে নেমে শুরুতেই ধাক্কা খেয়েছিল বাংলাদেশ। রানের খাতা খোলার আগেই দলীয় শূন্য রানে সাজঘরে ফেরেন ওপেনার সাদমান ইসলাম। সেই ধাক্কা সামলে ওঠার চেষ্টা করছিলেন লিটন-সৌম্য। কিন্তু পারেননি। ১০০ রান না করতেই টাইগারারা হারিয়ে ফেলে ছয় উইকেট। তবে তাইজুল-মোসাদ্দেকের ব্যাটে দ্বিতীয় দিন শেষ করতে পেরেছিল টাইগাররা।

তৃতীয় দিন ব্যাট করতে নেমে আর বেশি দূর এগোতে পারেননি মোসাদ্দেক-তাইজুল।  মাত্র ১১ রান যোগ করেই অলআউট হয়ে যান সাকিবরা।  বিব্রতকর ব্যাটিং ব্যর্থতায় ১৩৭ রানে পিছিয়ে থেকে প্রথম ইনিংস শেষ করে বাংলাদেশ।

এক সময় মনে হচ্ছিল বাংলাদেশ ফলোঅনে পড়বে। তবে মুমিনুলের কল্যাণে ফলোঅনটা এড়ানো সম্ভব হয়েছে। সর্বোচ্চ ৫২ রান আসে এই বাঁহাতির ব্যাট থেকেই। তবে দুর্দান্ত খেলেছেন মোসাদ্দেক হোসেন ও তাইজুল ইসলাম। দুজন নবম উইকেটের জুটিতে যোগ করেন ৪৮ রান। ৪৮ রানে অপরাজিত থাকেন মোসাদ্দেক।

মুশফিক-সাদমান-নাঈম ছাড়া সব ব্যাটসম্যানই দুই অঙ্কের মুখ দেখেছেন।  তবে  মোসাদ্দেক-মুমিনুল ছাড়া কেউ ইনিংসটাকে লম্বা করতে পারেননি। একমাত্র লিটন দাস (৩৩) ছাড়া ২০-এর কোটাতেই থেমেছে সবার ইনিংস।

আফগান অধিনায়ক রশিদ খান একাই নেন পাঁচ উইকেট। মোহাম্মদ নবীর ঝুলিতে জমা পড়ে তিন উইকেট। একটি করে উইকেট নেন ইয়ামীন ও কাইস।

প্রথম ইনিংসে রেকর্ড গড়েই থেমেছে আফগানিস্তান

আফগানরা স্বস্তিতে থেকে চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় দিন খেলতে নেমেছিল। হাতে ছিল পাঁচ উইকেট, স্কোরবোর্ডে জমা ছিল ২৭১ রান। শুক্রবার আরও ৭১ রান যোগ করে ৩৪২ রানে থামে আফগানদের প্রথম ইনিংস। রশিদ-নবীদের টেস্ট ইতিহাসে যে কোনো ইনিংসে এটাই সর্বোচ্চ রান আফগানদের।

আগে নিজেদের দ্বিতীয় টেস্টে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ৩১৪ রান করেছিল আফগানিস্তান। প্রথম দিনে রহমতের সেঞ্চুরি, আসগরের হাফসেঞ্চুরির দ্বিতীয় দিন রশিদের হাফসেঞ্চুরিতে এই রান করতে পারে টেস্ট ক্রিকেটের নবাগত এই দলটি।

সর্বোচ্চ ১০২ রান আসে রহমত শাহর ব্যাট থেকে। ৯২ রান করেন আসগর আফগান। ৫১ রান আসে রশিদ খানের ব্যাট থেকে। এ ছাড়া আফসার জাজাই আউট হয়েছেন ৪১ রান করে।

টাইগারদের হয়ে সর্বোচ্চ চার উইকেট  নিয়েছেন তাইজুল ইসলাম। দুটি করে উইকেট নিয়েছেন সাকিব আল হাসান ও নাঈম হাসান। একটি করে উইকেট নিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ ও মেহেদী হাসান মিরাজ।

পেসার ছাড়াই মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ 

আফগানিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে কোনো পেসার ছাড়াই মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ। স্পিন অ্যাটাক নিয়েই নবী-রশিদদের বিপক্ষে লড়াই করবেন সাকিব আল হাসান।

চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাটিং নিয়েছেন আফগান অধিনায়ক রশিদ খান।  বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় ম্যাচটি শুরু হয়।

আবু জায়েদ রাহী, তাসকিন আহমেদ ও এবাদত হোসেনকে নিয়ে স্কোয়াড ঘোষণা করা হলেও একজনও জায়গা পাননি। নতুন বোলিং কোচ চার্ল ল্যাঙ্গাভেল্টও জানিয়েছিলেন পিচের ধরন অনুযায়ী অধিনায়ক সাকিবের চাওয়া মতোই বোলার নেওয়া হবে। অর্থ্যাৎ পিচ স্পিন সহায়ক হওয়াতে একজন পেসারেরও জায়গা হয়নি একাদশে।

বাংলাদেশ নেমেছে তিনি বিশেষজ্ঞ স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলাম ও নাঈম হাসানকে নিয়ে। ঘরের মাঠে সাদা পোশাকে এই তিনজনই ভয়ংকর বোলার। তাদের সঙ্গে বল হাতে আলো ছড়াবেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান, মাহমুদ উল্লাহ রিয়াদ ও মোসাদ্দেক হোসেন।

টেস্ট একাদশ :

সাকিব আল হাসান, সৌম্য সরকার, শাদমান ইসলাম, মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম, লিটন কুমার দাশ, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মোসাদ্দেক হোসাইন সৈকত, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলাম, নাঈম হাসান।

আপনি আরও পড়তে পারেন