ধামরাইয়ে ইটভাটা থেকে শিশু শ্রমিকসহ ১২জনকে বন্দিদশা থেকে উদ্ধার

ধামরাইয়ে ইটভাটা থেকে শিশু শ্রমিকসহ ১২জনকে বন্দিদশা থেকে উদ্ধার

ধামরাইয়ে দুটি ইটভাটার বন্দিদশা থেকে শিশু শ্রমিকসহ ১২ জন শ্রমিককে উদ্ধার করেছে পুলিশ। তাঁদের একটি কক্ষে আটকে রেখে জোর করে ভাটায় কাজ করানো হচ্ছিল। ভাটা দুটির কোন অনুমোদনও নেই বলে জানা গেছে। ভাটায় শিশু শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করাতো অল্প পারিশ্রমিক দিয়ে। উদ্ধারের পর পালিয়ে যাওয়া শ্রমিকদের দলনেতা (স্থানীয় ভাষায় সরদার) কালামকে এক মাসের মধ্যে থানায় হাজির করার শর্তে শ্রমিকদের ছেড়ে দেয় পুলিশ।

ধামরাইয়ে ইটভাটা থেকে শিশু শ্রমিকসহ ১২জনকে বন্দিদশা থেকে উদ্ধার

এদিকে উদ্ধার হওয়া শ্রমিক ও স্বজনদের অভিযোগ, ইটভাটা মালিকদের পক্ষ নিয়ে শ্রমিকদের কাছ থেকে নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়েছে থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত)। তবে পুলিশ বলছে উদ্ধার করা হয়নি ভাটার মালিক ও শ্রমিকদের থানায় ডেকে আনা হয়।

উদ্ধার হওয়া শ্রমিকরা হলেন, সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার হরিনগর গ্রামের রুহুল আমীন (১৯), মিজানুর রহমান (১২), আমিনুর রহমান (১০),শহিদুল গাজী (৩০), আবাদ চন্ডিপুর গ্রামের আহসান হাবিব (২৮), রহমত আলী, টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার ধলাপাড়া গ্রামের ফজল খাঁসহ ১২জন।

পুলিশ ও ইটভাটা থেকে উদ্ধার হওয়া শ্রমিকরা জানায়, প্রায় দুই মাস আগে উপজেলার ভাড়ারিয়া ইউনিয়নের সেভেন স্টার ইটভাটার মালিক নুরুল হুদা ও গাজী ইটভাটার মালিক আজম সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার হরিনগর গ্রামের দলনেতা (সরদার) কালাম গাজীকে প্রায় ১৫ লাখ টাকা অগ্রিম দেয় ইটভাটায় শ্রমিক দেওয়ার শর্তে। শর্তানুযায়ী সাতক্ষীরা এলাকার কিছু সংখ্যক শ্রমিক ওই ভাটায় কাজ দেন কালাম। নিয়োজিত শ্রমিকদের পারিশ্রমিকের আংশিক টাকা দিয়ে প্রায় ২৬ দিন আগে দলনেতা কালাম পালিয়ে যান। এরপর থেকে দুই ভাটার মালিক পক্ষ কালামের নিয়োজিত ১২জন শ্রমিককে একটি কক্ষে আটকে রেখে জোর করে ভাটায় কাজ করান। খবর পেয়ে পুলিশ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ওই ভাটার মালিক ও শ্রমিকদের থানায় আনা হয়।

 

Brand Bazaar

ভুক্তভোগী শ্রমিক রুহুল আমীন, আহসান হাবিব ও ফজল খা জানান, সরদার কালাম পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে তাদের রাতে একটি কক্ষে তালাবদ্ধ করে রাখা হতো। দিনে মালিকের লোকের প্রহরায় কাজ করানো হতো। রাতে প্রস্রাব-পায়খানা কক্ষেই সাড়তে হয়েছে। অবশেষে তারা গ্রামের বাড়ীতে স্বজনদের জানিয়েছিল বন্দিদশা থেকে মুক্ত করতে।

এদিকে ভাটার মালিক নুরুল হুদা ও আজম জানান, শ্রমিকদের যোগসাজসে কালাম সরদার ১৫ লাখ টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে।

এ বিষয়ে ধামরাই থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আবু সাইদ আল মামুন বলেন, ‘সাতক্ষীরা-৪ আসনের এমপি এস.এম.জগলুল হায়দার তাঁর নির্বাচনী এলাকার শ্রমিকদের উদ্ধারের জন্য ঢাকার এসপি  কাছে সুপারিশ করেন। পরে এসপি  নির্দেশে ইটভাটার মালিক ও শ্রমিকদের নিয়ে বৈঠক করি। সরদার কালামকে এক মাসের মধ্যে হাজির করে দেওয়ার শর্তে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর রেখে শ্রমিকদেরকে তাদের পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে’।

তবে শ্রমিকদের স্বজন মুক্তিযোদ্ধা সোরত আলী গাজী অভিযোগ করে বলেন, পরিদর্শক আবু সাইদ আল মামুন ইটভাটার মালিকদের পক্ষ নিয়ে পালিয়ে যাওয়া সরদার কালামকে একমাসের মধ্যে থানায় হাজির করে দেওয়ার শর্তে নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়েছে দিনমজুর শ্রমিকদের।

এ খবর ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় সাংবাদিকরা থানায় জড়ো হয়। এক পর্যায়ে সাভার সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খোরশেদ আলমকে বিষয়টি অবগত করেন সংবাদকর্মীরা। পরে তদন্ত কর্মকর্তা সাংবাদিকদের ডেকে নিয়ে বিষয়টি সুরাহা করেন।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment