সিনথিয়াকে খুন করলো প্রেমিক, রিমান্ডে গেল স্বামী

 

তরুণীদের খোঁজে ফেসবুক দুনিয়া ঘুরে বেড়ায় সে। আগ বাড়িয়ে তরুণীদের সঙ্গে পরিচিত হয়; গড়ে তোলে প্রেমের সম্পর্ক। অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়াই তার লক্ষ্য। এই প্রতারকের নাম আকাশ ওরফে আলমগীর।

বয়স ২৮ বছর; সুদর্শন। বিবাহিত ও এক সন্তানের জনক। ফেসবুকে পরিচয়ের সূত্র ধরে অন্তত ২০ তরুণীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সে। শুধু প্রতারণা ও টাকা আত্মসাৎ করেই থেমে থাকেনি; কুসবা জিনাত সিনথিয়া (৩০) নামে এক নারীকে হত্যাও করেছে।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর কদমতলীর জনতাবাগে গৃহবধূ সিনথিয়াকে শ্বাসরোধে হত্যা করে আকাশ। সিনথিয়ার সঙ্গে ফেসবুকের মাধ্যমে তার পরিচয় হয় এবং তা প্রেমের সম্পর্কে গড়ায়। পরে বিয়ের জন্য সিনথিয়া তাকে চাপ দেন। কিন্তু তিনি বিয়ে করবেন না বলে জানিয়ে দেন। এ নিয়ে টানাপোড়েনের জেরেই সিনথিয়াকে স্বামীর বাসায় হত্যা করে সে।

হত্যার পর আকাশ পালিয়ে যায় এবং খুনের দায় পড়ে সিনথিয়ার স্বামী তুহিন ভুঁইয়া ও তার দুই ভাইয়ের ওপর। সিনথিয়ার পরিবার কদমতলী থানায় তুহিনদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করে। ওই মামলায় তুহিনকে গ্রেপ্তার করে তিন দিনের রিমান্ডেও নেয় থানা পুলিশ। তবে মামলাটির ছায়া তদন্ত শুরু করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের পূর্ব বিভাগ। ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ, প্রযুক্তির সহায়তা ও তদন্তে আকাশের নাম উঠে আসে। আকাশকে ধরতে বৃহস্পতিবার রাতেও অভিযান চালায় ডিবি। আকাশের বাবার নাম আইয়ুব আলী। বাসা পুরান ঢাকার বংশালের আগামসিহ লেনের ২৫/২ নাম্বারে।

তদন্ত সূত্র জানিয়েছে, আকাশ প্রায় তিন বছর ধরে বেকার। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত লেখাপড়া করা আকাশ আইটিতে বেশ দক্ষ। বেকার জীবনে সে ফেসবুককে আয়ের পথ হিসেবে বেছে নিয়েছে। তরুণীদের সন্ধানে ফেসবুক দুনিয়া ঘুরে বেড়ায়। মেয়েদের প্রোফাইল ঘেঁটে আগে নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করে- টাকা দেওয়ার মতো সাধ্য তরুণীর আছে কিনা। এর পরই তরুণীকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠায়। তরুণী তা গ্রহণ করার পর শুরু হয় পরিচয় পর্ব। কথোপকথন হতে থাকে মেসেঞ্জারে। এক পর্যায়ে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে সে। প্রেমের বয়স ২-১ মাস যেতেই অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলে। এর পরই ‘বিপদে পড়েছে’ জানিয়ে তরুণীর কাছে মোটা অংকের টাকা ধার চায়। খুব শিগগিরই টাকা ফেরত দেওয়ার প্রস্তাব করে। ‘প্রেমিক’-এর বিপদে পাশে দাঁড়ান প্রেমিকারাও। টাকা হাতে পাওয়ার পরই আকাশ তরুণীর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। অন্তত ২০ তরুণীর সঙ্গে এভাবে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে আকাশ। এসব তরুণীর বাড়ি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়।

বছরখানেক আগে সিনথিয়ার সঙ্গে আকাশ সম্পর্ক গড়ে তোলে। সিনথিয়া স্বামীর সঙ্গে ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। তুহিনের অবর্তমানে মাঝেমধ্যে ওই বাসায় আকাশের যাতায়াত ছিল। সর্বশেষ গত ৮ ফেব্রুয়ারি বিকেলে আকাশ সিনথিয়ার বাসায় যায়। সে সময় সিনথিয়ার বাসায় অন্য কেউ ছিলেন না। বিকেল ৫টার দিকে আকাশ বাসা থেকে বেরিয়ে যায়। রাত ১০টার দিকে সিনথিয়ার স্বামী তুহিন বাসায় ফিরে দেখতে পান গলায় ওড়না পেঁচানো অবস্থায় স্ত্রীর লাশ খাটের ওপর পড়ে আছে। তাৎক্ষণিক তিনি কদমতলী থানা ও শ্বশুরবাড়িতে খবর দেন। শ্বশুরবাড়ির লোকজন তুহিন ও তার দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। ঘটনার দিনই পুলিশ তুহিনকে গ্রেপ্তার করে। স্ত্রী হত্যার অভিযোগে তাকে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়।

মামলাটির ছায়া তদন্তকারী ডিবির (পূর্ব) অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার জসিম উদ্দীন বলেন, সিনথিয়া হত্যায় আকাশের জড়িত থাকার বিষয়টি প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তাকে গ্রেপ্তার করতে অভিযান অব্যাহত আছে। যে কোনো সময় তাকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে বলে জানান তিনি। সূত্র: সমকাল।

আপনি আরও পড়তে পারেন