পদ্মায় যেভাবে ডুবে যান নববধূ

কনে সুইটি খাতুন পুর্ণির সঙ্গে একই নৌকায় ছিলেন তার আত্মীয় টুলু বেগম (৩০)। তিনি গায়ের শাড়ি খুলে ফেলে একটি চরাট ধরে ভাসছিলেন। এ সময় তিনি দেখেন সুইটি হাবুডুবু খাচ্ছেন। তার কপালের টিকলি দেখে তিনি তাকে চিনতে পারেন। বাঁচার জন্য তিনি সুইটিকে তার কাপড় খুলে ফেলতে বলেন। সুইটি কাপড় খোলার চেষ্টা করতে যাচ্ছিলেন। পরক্ষণেই তাকিয়ে দেখেন সুইটি আর নেই।

কনে সুইটি খাতুনের বাবা শাহীন আলী একজন ট্রাক শ্রমিক। বাড়ি রাজশাহীর পবা উপজেলার ডাঙ্গেরহাট গ্রামে। বর আসাদুজ্জামান রুমন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ার্ড বয়। তার বাড়ি উপজেলার চরখানপুর গ্রামে। গ্রামটি পদ্মা নদীর ওপারে। শুক্রবার বরের বাড়িতে বউভাতের অনুষ্ঠান শেষে ফেরার পথে নৌকাডুবির এ ঘটনা ঘটে।

টুলু বেগমের স্বামী আবদুর রাজ্জাকও নৌকায় ছিলেন। তার ভাষ্য অনুযায়ী ছোট নৌকায় যাত্রী বেশি ছিল। ঢেউয়ে নৌকায় পানি উঠে যাচ্ছিল। তারা কয়েকজন পুরুষ যাত্রী পানিতে নেমে নৌকা জাগিয়ে রাখার চেষ্টা করেও পারেননি।

জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটির আহবায়ক অতিরিক্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবু আসলামও নৌকা ডোবার কারণ হিসেবে একই কথা বলেন। তিনি জানান, ছোট নৌকায় যাত্রী বেশি ছিল, বাতাস উঠেছিল নদীতে। ঢেউ ছিল। এই অবস্থায় কিছু যাত্রী এক নৌকা থেকে লাফিয়ে আরেক নৌকায় যাওয়ার সময় দোল খেয়ে নৌকা ডুবে যায়।

উদ্ধারের জন্য একসঙ্গে কাজ করছেন ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ), বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও রাজশাহী মহানগর নৌ পুলিশ। নৌকাডুবির ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু আসলামকে আহ্বায়ক করে জেলা প্রশাসন পাঁচ সদস্যের এই কমিটি করে দিয়েছে। দুই কর্মদিবসের মধ্যে কমিটিকে দুর্ঘটনার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানাতে বলা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক হামিদুল হক জানান, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এখন নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে মরদেহ দাফনের জন্য ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া যারা আহত হয়েছেন, তাদের চিকিৎসার ব্যয় বহন করা হচ্ছে।

বিয়ের পর বউভাতের অনুষ্ঠান থেকে ফেরার পথে পদ্মা নদীতে নৌকাডুবির ঘটনায় এ পর্যন্ত ছয়টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। যাঁদের লাশ উদ্ধার হয়েছে, তাঁরা হলেন, কনের বড় বোন শাহীনুর বেগমের স্বামী রতন আলী (৩০), তাঁদের মেয়ে মরিয়ম খাতুন (৫), চাচা শামীম হোসেন (৩৫), চাচি মিনরা খাতুন (৩০), চাচাতো বোন রোশনি (৭) ও খালাতো ভাই এখলাস আলী (২২)। শনিবার রাত ৯টা পর্যন্ত কনের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। তার ফুপাতো বোন রুবাইয়া খাতুন (১২) ও খালা আঁখি খাতুন (২৫) নিখোঁজ।

আপনি আরও পড়তে পারেন