চিকিৎসায় অবহেলা: শ্বাসকষ্ট নিয়ে ওসির স্বামী মৃত্যু

 

নড়াইলের নড়াগাতি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রোকসানা খাতুনের স্বামী আহসানুল ইসলাম (৪৮) বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

বৃহস্পতিবার (৯ এপ্রিল) যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) শ্বাসকষ্ট নিয়ে সে মারা গেছেন। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে আহসানুল ইসলাম বুকে ব্যথা করছে বলে তার স্ত্রী রোকসানা খাতুনকে জানান। এসময় তার স্ত্রী যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সার্কেল ক) গোলাম রব্বানীকে জানান।

এসময় তিনি তার চিকিৎসার জন্য কোতয়ালি মডেল থানার ওসি মনিরুজ্জামানকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন।

থানার এসআই আফম নিরুজ্জামানের মাধ্যমে আহসানুল ইসলামকে সকাল ৭টা ৩৫ মিনিটে যশোর জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে পাঠানো হয়।

জরুরি বিভাগের চিকিৎসক এম আব্দুর রশিদ তাকে করোনারী ইউনিটে পাঠান। সকাল ৮ টা ১০ মিনিটে করোনারী ইউনিটে ভর্তি করে ডাক্তার সোহানুর রহমান ৮টা ২০ মিনিটে আহসানকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ বিষয়ে সোহানুর রহমান গণমাধ্যমকে জানান, আহসানুল ইসলামকে হাসপাতালের বিছানায় আনার পর অস্থিরতার কারণে ইসিজি করা সম্ভব হয়নি। তারপর হাসপাতাল থেকে কিছু ওষুধ দেয়া হয়। তাছাড়া তার স্বজনরা বাইরে থেকে ওষুধ আনার আগেই সে মারা যায়।

করোনারী ইউনিটের ডাক্তার এসোসিয়েট প্রফেসর রফিকুজ্জামান জানান, আহসানুল ইসলামের অস্থিরতার কারণে ইসিজি করা সম্ভব হয়নি। তারপর ডাক্তার তাকে ওষুধ দিলেও তা আনার আগেই মৃত্যু হয়েছে। বিনা চিকিৎসায় মারা যায়নি।

যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. দিলিপ কুমার বলেন, নিহতের স্বজনরা ওষুধ আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে।

ঘটনার পর যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক সার্কেল) গোলাম রব্বানী, কোতয়ালি মডেল থানার ওসি মনিরুজ্জামানসহ অন্যান্য পুলিশ সদস্যরা হাসপাতালের ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলেছেন।

তবে স্থানীয়রা ও রোগীর স্বজনেরা অভিযোগ করছেন, হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার দিলিপ কুমার রায়ের দায়িত্বহীনতার কারণে হাসপাতালে চিকিৎসক ও নার্সদের চিকিৎসার ব্যাপারে গাফলতি চলছে৷

ওসি রোকসানা খাতুন অভিযোগ করে বলেন, পুলিশ সদস্য হিসেবে আমি জনগণকে সহায়তা করে আসছি। আজ আমার স্বামী বিনা চিকিৎসায় মারা গেলেন। তিনি হাসপাতালের ডাক্তারদের বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযোগ করেন।

আহসানুল ইসলাম পাবনার সুজানগর উপজেলার মানিকদিয়া গ্রামের মৃত আমিরুল ইসলামের ছেলে। তার স্ত্রী রোকসানা খাতুন নড়াইলের নড়াগতি থানার ওসি হিসেবে কর্মরত রয়েছেন এবং যশোর কোতয়ালি মডেল থানার স্টাফ কোয়ার্টারে বসবাস করেন।

আহসানুল ইসলাম বেনাপোল রেলওয়েতে কর্মরত ছিলেন। ব্যক্তি জীবনে তিনি দুই সন্তানের জনক।

সূত্রে জানা গেছে, নড়াগাতি থানার নবাগত ওসি রোকসানা খাতুন ২০০৩ সালে এসআই পদে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করেন। ২০১৫ সালে তিনি ইন্সপেক্টর পদে পদোন্নতি পান। ২০১৬ সালে তিনি বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর হয়ে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে যোগ দিয়ে কঙ্গোতে যান।

সেখানে এক বছর দায়িত্ব পালন শেষে ২০১৭ সালে দেশে ফিরে আসেন। এরপর তিনি যশোর সদর আদালতের পুলিশ পরিদর্শক হিসেবে ২ বছরেরও বেশী সময় দায়িত্ব পালন করার পর চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে নড়াগাতি থানার ওসি হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।

 

আপনি আরও পড়তে পারেন